Ameen Qudir

Published:
2019-06-16 20:57:11 BdST

একা একলা মন, চিনেছে মন কেমন


 

 

 


ডা. সুলতানা আলগিন
_____________________
সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,

কনসালটেন্ট, ওসিডি ক্লিনিক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। সে যা চায় তা পায় না আর যা পায় তা চায় না। আর তাই তার অবিশ্রান্ত ছুটে চলা। চলতে গেলে হোচট খেতে হয় । তারপর গাঝাড়া দিয়ে মানুষ উঠে দাড়ায়। টানাপোড়েন মনের উপর কখনও কখনও প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে। সেই চাপের মোকাবেলা করতে না পারলে মন খারাপ হয় । কখনও তীব্রতা বেড়ে গিয়ে মানুষ মানসিক বিপর্যয়ে ভোগে। ডিপ্রেশন হয় , আত্মহত্যা করে বসে।

মন খারাপ কেন হয় ?
মানুষের মস্তিষ্ক মন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সিরোটনিন ডোপামিন নরএড্রেনালিন গাবা গ্লুটামেটের মাত্রার ব্যতিক্রম হলে মনের স্বাভাবিকতার উপর প্রভাব পড়ে। মনের দোলাচাল বেড়ে যায়। আর এদের মাত্রা ব্যলান্সড না থাকার পেছনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস জীবনাচারণ দায়ী ।
বয়সের সাথে সাথে মানুষের জীবনের চাহিদা মানসিক চাপ সবই পরিবর্তিত হতে থাকে। শরীরে হরমোনের উঠানামাও ঘটতে থাকে। কৈশোরে ও ৪৫এর পর থেকে শরীরে হরমোনেরপরিবর্তন বেশী পরিলক্ষিত হয়। গর্ভধারণের সময় ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময়ও হরমোনের পরিবর্তন দেখা যায় । আর এসবই মনের উপর প্রভাব ফেলে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনও মানুষের মনকে আনমনা করে দেয়। শীতকালে সূর্যেল আলো কমে গেলে সেটা কারও কারও মনকে অজান্তেই বিষন্ন করে তুলতে পারে। সূর্যের অতিরিক্ত তাতানো গরম মানুষের মনকে তেমন তাতিয়ে তুলতেও পারে।
একাকীত্ব মানুষের মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। এজন্য শেষ বয়সে সবাই যেন তাকে ঘিরে থাকে এই চাওয়াটা তার কাছে অনেক বড় হয়ে ওঠে। ছোটবেলার বেড়ে ওঠার সময় বিভিন্ন নেগেটিভ ঘটনা মানুষের মনে লেপ্টে থাকে। যখন সুযোগ পায় সেটা মনকে বিষন্ন করে তুলতে দেরী করে না।
মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নাই। আর সেটার ঘাটতি হলেই মন খারাপ হয়। মানসিক চাপ ধকল সহ্য করতে না পারলে সবারই খারাপ লাগে। এখনকার জীবনটা কেমন যুদ্ধ যুদ্ধ মনে হয় । এই বুঝি হেরে গেলাম। সারাক্ষণ প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে সবাই এগিয়ে যাচ্ছি।

যা করবেন:
জীবনের সুখময় স্মৃতি রোমন্থন করবেন । নেগেটিভ স্মৃতি কার জীবনে নেই ? একে ঝেড়ে ফেলুন।
জীবনকে নতুন করে সাজাবেন । নতুন কোন গঠণমূলক চিন্তাভাবনা করবেন।
আপনার পরিচিত পরিবেশকে নতুন করে সাজিয়ে তুলুন। নতুবা নতুন পরিবেশে নিজেকে জুড়ে নিন। দেখবেন নতুন ভাবনা নতুন চিন্তা আপনাকে কর্মঠ করে তুলছে।
সবসময় মজা করার বা পাওয়ার মত কিছু করুন। যেমন চুটকী পড়াব া বলাশোনা, নাচগান করা বা শোনা ,হাসির নাটক সিনেমা দেখা ,টিভিতে জিওগ্রাফী চ্যানেল দেখতে পারেন।
ভ্রমণে আগ্রহী হলে বাইরে বেড়াতে যান। নতুবা ঘরের আশেপাশে জায়গা থাকলে বাগান করুন। এখন শহরে জায়গার অভাবে ছাদেও বাগান করে মানুষ নির্মল আনন্দ খুজে নিচ্ছেন।
মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে সারাজীবন দৌড়ে বেড়ায়। মন খারাপ হলে তখন ঘর ছাড়া আর কোথাও জায়গা হয় না। পরিবার সদস্যদের অনাত্মীয় মনে হয়। তাই সময় থাকতেই পরিবারকে সময় দিন। অহেতুক আড্ডা না দিয়ে পরিবার, শুভার্থীদের সময় দিন। সত্যিকারের বন্ধ ুখুজে নিন। তাদের সাথে সময় কাটান। সবসময় সুস্থ এবং পজিটিভ এটিচ্যুডের লোকজনের সাথে উঠাবসা করবেন। নেগেটিভ এটিচ্যুডের লোকজন পরিবেশকে নেগেটিভ করে তোলে তার কথাবার্তা আচারআচরণ দিয়ে । তাই এদেরকে এড়িয়ে চলা জরুরী।
ভবিষ্যতের দিকে তাকান । আজকের দিনটাই সব নয়। সামনের পথ কেমন হবে এখন থেকেই পরিকল্পনা করুন। ভবিষ্যত জীবনে পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরিকল্পনা মাথায় নিন।
নিজেকে সুস্থ রাখতে হাসিখুশী থাকতে নিয়মিত খাওয়াদাওয়া পর্যাপ্ত ঘুমের কোন বিকল্প নেই। খেতে হবে সিরোটনিন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার উদ্বিগ্নতা কমাবে ,ইমিউনিটি বাড়াবে । বাড়াবে আপনার স্মরণশক্তি ।পর্যাপ্ত ঘুম নিয়মিত ব্যয়াম আপনাকে দেবে নতুন কর্মোদ্যম।দিনের বেলা প্রয়োজনে একটু দিবানিদ্রা দিয়ে নিলে মন ফ্রেশ হয়ে যায়। শরীরও ঝরঝরা হয়। তাই অতিরিক্ত চা কফি, মাদকাসক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখাটা খুবই জরুরী।
ক্ষমা করতে শিখুন। দেখবেন মনটা অনেক বড় হয়ে যাবে । আর সাথে কৃতজ্ঞতাবোধ যেন থাকে। তাহলে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। দৃষ্টি প্রসারিত হবে। কাজের পরিসর বাড়বে।
মন খারাপ অতিরিক্ত হলে নিজে কন্ট্রোলের বাইরে হলে বিষন্নতা রোগ বা ডিপ্রেশন এর সৃষ্টি হতে পারে । আর তার জন্য চাই প্রয়োজনীয় মনোচিকিৎসা। দেরী না করে তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আপনার মতামত দিন:


মন জানে এর জনপ্রিয়