SAHA ANTAR

Published:
2022-06-07 18:24:48 BdST

ভয়ংকর ভাবে বাড়ছে হৃদরোগ ও হৃদরোগ জনিত মৃত্যু


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট

 


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট
___________________________

ন্না, ন্না, ন্না!!!
কোভিড বা করোনা না।
করোনা হঠাৎ করে এসেছে, হঠাৎ করে চলেও যাবে একদিন।
অথবা আমরা বা হোমো স্যাপিয়েন্স আর কোভিড মিথোজীবিতা করে রয়েই যাবে বহুকাল।
যে যার নিজের মতোন করেই,
থাকছে, থাকবে।।
ভয়ংকর ভাবে বাড়ছে হৃদরোগ ও হৃদরোগ জনিত মৃত্যু। বিশ্বের মারণ রোগের মধ্যে এটিই অন্যতম।
তদোপরি যে সুস্থ ৪,৫ বা ৬ এর দশকে সুস্থ অবস্থায় সারাদিনের কাজ করে রাতে শুতে গেলেন, সকালে আর তিনি উঠলেন না। অথবা, মাঝ রাতে প্রচণ্ড বুকে ব্যথা, বমি আর শ্বাসকষ্ট আর গলগলিয়ে স্নান করে যাবার মতো ঘাম, ব্যস। একজন সতেজ, সবল, আপাত সুস্থ, কর্মরত মানুষের জীবনে যবনিকা নেমে আসছে, কেউই তা জানে না।
বড় করুণ, কিন্তু বড় বেশি বাস্তব।।
খুব বিস্ময়কর নয় অবশ্য। কারণ উন্নীত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে একই সঙ্গে বাড়ছে, স্থূলতা, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, রক্তে ইউরিক অ্যাসিড এর মাপ বাড়া, আর্থরাইটিস, আলঝাইমার্স, কোলন ক্যান্সার সব ই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
অবাক হওয়ার নয়। এই অনেকানেক অসুখের মধ্যে মিল আছে ভীষণ।
T2,D = ইনসুলিন রেজিস্টান্স + বিটা সেল ডিসফাংশান।
আবার বিটা সেল ডিসফাংশান, আদতে T1D,
ডায়াবেটিস যার প্রকাশ বাড়তি গ্লুকোজের মাত্রা ( রক্তে) তখনি সম্ভব, যখন এই দুটি থাকবে এবং বিটা সেল ডিসফাংশান হবে বা বিটা সেল এর ইনসুলিন ক্ষরণ দ্রুত কমে আসবে।
এর মাঝের অবস্থায়, বা যখন ইনসুলিন রেজিস্টানস প্রবল, অথচ বিটা সেল ডিসফাংশান ততখানি হয় নি, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে না এবং উপসর্গ ও বিশেষ থাকে না।
কিন্তু এই ইনসুলিন রেজিস্টান্স এমনই ভয়ংকর যে এ একাই এক প্রদাহ বা inflammation শুরু করতে পারে যার ফলে ডিসলিপিডিমিয়া হয়, এবং রক্তে কোলেস্টেরল এর অনুপাত উলটে যায়, রক্তনালী র endothelium এর ক্ষতি হয় যার ফল হাই ব্লাড প্রেসার এবং রক্তের জমাট বাঁধা ও সেরিব্রাল স্ট্রোক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক।
আবার অন্যত্র এই এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশান, কিডনিতে নেফ্রোপ্যাথি, চোখে রেটিনোপ্যাথি এবং নার্ভে নিউরোপ্যাথি করে।
এতখানি জানা ছিল, এবারে প্রশ্ন, ইনসুলিন রেজিস্টান্স এবং বিটা সেল ডিসফাংশান এর ব্যাপারে সদর্থক কি কি করা যায়।
আশার কথা , অন্ধকার প্রান্তের শেষে আলোর আভাস মিলছে ঐ।
T2D র,বেলাতে দেখা গেছে যে বিটা সেল গুলি বিবশ হয়ে যায়, পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয় না, চতুর্দিকের জমা ফ্যাট ( লিভারের ও প্যাংক্রিয়াসের) চাপ দিয়ে বিবশ, বিব্রত ও কর্মহীন করে দেয় বিটা সেলগুলিকে।
আমরা লো কার্ব ডায়েট দিয়ে,
১/ লিভার ও প্যাংক্রিয়াসের অতিরিক্ত ফ্যাট কে কমাতে পারবো।
২/যেহেতু কার্ব গ্রহণ অনেক কমে যাচ্ছে, রক্তের গ্লুকোজের মাপ ও কমবে, কারণ Neoglucogenesis দ্বারা প্রোটিন থেকে নির্মিত নতুন গ্লুকোজ মস্তিষ্ক এবং লোহিত কণিকার জন্য কাজে লাগে, এবং এত বেশি হয় না যে রক্তে গ্লুকোজের মাপ খুব বেশি বা খুব কম হবে।
৩/ ইনসুলিন রেজিস্টান্স ঠিক হলে শরীরে প্রদাহ টিও কমবে এবং এন্ডোথেলিয়াল ড্যামেজ আর অগ্রসর হতে পারবে না, ডিসলিপিডিমিয়া ও পরিবর্তিত হবে।
কমবে রক্তে অক্সিডাইজড বা জারিত LDL এর মাত্রা।
৪/ যেহেতু শরীর নিজের বিপাকীয় কাজের জন্যে কার্ব না পাওয়াতে এবং ইনসুলিনের খুব কম মাত্রায় থাকার কারণে গ্লুকাগন এর ক্ষরণ বাড়িয়ে জমা ফ্যাট কে এনার্জি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে এবং তার ফলে শরীরে Beta - Hydroxy Butyric Acid ও Acetone তৈরী হবে, যেগুলি মূলত: Anti inflammatory , এই পদার্থ গুলির উপস্থিতি ও প্রদাহ বা Inflammation কে কমাতে সক্ষম হবে ।
_______________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের একজন শীর্ষ
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট ;তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এমডি করেছেন। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
তিনি বাংলা, ফরাসী , ইংরাজী সহ বহুভাষায় পারদর্শী।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়