SAHA ANTOR

Published:
2020-07-01 18:43:34 BdST

অপচয় নয়:ডাক্তারি পেশায় প্রণোদনা আর উৎসাহ দান কম বলে এই গতিপথ পরিবর্তন



ডেস্ক
_______________

পররাষ্ট্র,প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারে চলে যাওয়া আবেগে ভেসে যাবার বা অতি আপ্লুত হবার কিছু নয়। ৩৮ তম বিসিএস এ যারা এডমিন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন,তাদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন।এটা নিয়ে অনেকেই হৈচৈ করছেন,বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ বলছেন , ডাক্তাররা অন্য ক্যাডারে বিসিএস দিতে পারবে না - এমন নোটিশ পাইলে অবাক হওয়ার কিছু নাই। আমরাই ডাক্তারীকে সহজলভ্য বানাইসি।
তা নিয়ে চিকিৎসক সমাজের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই প্রতিবেদন।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন ,
এটি অপচয় নয় স্বাভাবিক প্রবাহ যে পেশায় প্রণোদনা আর উৎসাহ দান কম এর গতিপথ পরিবর্তন হয় নদীর মত নদী বাধা পেলে গতি পরিবর্তন করে
মেহেদী হাসান বিপ্লব
তার প্রতিক্রিয়ায় লেখেন,
চিকিৎসকরা ক্যাডার চেঞ্জ করে অনেকেই পররাষ্ট্র,প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারে চলে যাচ্ছে।দেখতে ভালোই লাগে।কিন্তু এটা নিয়ে এত আবেগে ভেসে যাবার বা অতি আপ্লুত হবার কোন কারণ দেখছিনা।

প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার প্রতি বছর এডমিন,ফরেন,পুলিশে যাচ্ছে।তাদের এত আপ্লুত হতে দেখিনা।

আসলে আমার এক বন্ধু একবার বলেছিলো কি পড়েছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ না।যেটা ভালো লাগে সেটাই করবো।
অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট আমার সেই সেই বন্ধুর সবসময়ই ইচ্ছা ছিলো মেডিকেলে পড়বে,চান্স পেলো চিটাগাং মেডিকেলে।সেই সাথে বুয়েটে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পায়(কিছু মানুষ এত ব্রিলিয়ান্ট কেমনে হয়!আমার এক আত্নীয়া আছেন যে বুয়েটে ১৩ তম ও মেডিকেলে ৫ম হয়েছিল। একগাদা ডিগ্রি নিয়ে এখন বিলাসী জীবন যাপন করছে)
তো যা বলছিলাম, আমার সেই বন্ধু ঢাকার বাইরে যেতে চায়না বলে বুয়েট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বছরখানেক একটা কর্পোরেট চাকরী করে মন বসাতে না পেরে সব ছেড়ে দিয়ে আইবিএ থেকে এমবিএ পাশ করে এখন নিজেই বিজনেস করছে।পাশাপাশি বুয়েট ভর্তি কোচিং এ পড়াচ্ছে(ওর পড়াতে ভালো লাগে,এবং টিচার হিসেবে এক নামেই অনেকে তাকে চেনে)।
সে ভালো আছে,অনেকের চেয়ে অনেক বেশী ভালো আছে।
অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করে কিন্তু এসব নিয়ে ভাবা বৃথা।জীবনটা নিজের, সবাইকে গতানুগতিক হতে হবে এমন ভাবার কোনই কারণ নেই।

আমি নিজেও এপ্লাইড ফিজিক্সে পড়তে চেয়েছিলাম।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স ও পেয়েছিলাম কিন্তু মেডিকেল নাকি এপ্লাইড ফিজিক্স এই দুয়ের মাঝে শেষ পর্যন্ত মেডিকেলকেই বেছে নেই।
আফসোস ডাক্তার হবার জন্য নেই,আফসোস আছে আমাদের দেশের পেশীজীবীদের যেভাবে ট্রিট করা হয় সেটা নিয়ে।
আমাদের রাষ্ট্র আমলা(কেরানী) হতেই মেধাবীদের বেশী উৎসাহী করছে।স্বাভাবিকভাবেই যেখানে চার্ম ও ফ্যাসিলিটি বেশী সেখানে মেধাবীরা যেতে চাইবে,এটায় কোন অস্বাভাবিকতা নেই।
আর যা নিয়ে পড়েছি সেটা নিয়েই বসে থাকতে হবে ক্যারিয়ারের জন্য এটা ভাবার দিন শেষ।
আমার এক বন্ধুর ছোট ভাই বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিসিএস প্রোকৌশলী হিসেবে জয়েন করেও ছেড়ে দিয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরী করছে।
এগুলো থেকে বোঝাই যায় আমাদের দেশে শুধু ডাক্তার নয়,সব পেশাজীবীদের জন্যই তাদের লাইন ক্যাডার তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
সবার নিজ নিজ জীবনে ভালো থাকার অধিকার আছে।
আমি যেমন ভোলা দ্বীপজেলায় আপাতত খুশি আছি কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে,আমার অনেক বন্ধু রাজধানীতে বাস করতে চায় এবং সেভাবেই খুশি আছে।
আমার অনেক বন্ধু অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা,কানাডায় খুশি আছে নিজের মত করে।
তেমনভাবেই ডরমিটরিতে আমার পাশের রুমে থাকা ছেলেটা স্বাস্থ্য ক্যাডারের ফ্যাসিলিটি দেখে হয়তো হতাশ হয়ে অন্য কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে চেষ্টা করেছে,ফরেন ক্যাডারে কাল সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।তার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা।
তাই যার যেটা ভালো লাগে তার সেটাই করা উচিৎ।
জীবন তো একটাই!খুল কে জিয়ো!!!
___________
ডা. মধূসূদন মন্ডল লিখেছেন ,

৩৮ তম বিসিএস এ যারা এডমিন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন,তাদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন।এটা নিয়ে অনেকেই হৈচৈ করছেন,বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
আমি সবসময় বলি যারা যত টা যোগ্যতম তারা ততটা সুযোগ সুবিধা, যশ প্রতিপত্তি, বিত্ত বৈভব পৃথিবী তে অর্জন করে নিবেন।এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।
এই উপমহাদেশের প্রেক্ষাপট টা একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যারা স্কুল ও কলেজে অধিকতর মেধাবী অথবা ভালো রেজাল্ট করতে সক্ষম,তারা প্রায় সকলেই বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ গুলাতে অথবা বিভিন্ন সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট এ অথবা কেউ কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলার অধিকতর চাহিদা সম্পন্ন বিষয় গুলাতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে।
পরবর্তীতে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার রা হেলথ এবং ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকুরী তে যোগদান করে।

অল্প অতীত ঘুরে দেখলে দেখা যায় ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ার পেশা সম্মান, অর্থ উপার্জন, মানব সেবা প্রদান, সামাজিক গ্রহন্যোগ্যতা সব দিক থেকেই অনেকাংশে এগিয়ে ছিল।সুতরাং যোগ্যতমরা অধিকাংশই এই সকল পেশা গুলাকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই উপমহাদেশে বর্তমানে এই দুটি পেশাই( ডাক্তারি পেশা টা অধিকতর) সম্ভবত রাষ্ট্রীয় ভাবে বৈষম্যের স্বীকার, প্রোমোশন,পদমর্যাদা, প্রভৃতিতে।যেমন হেলথ ক্যাডারে যে কেউ ১০ বছর চাকুরি করেও কোন প্রমোশন না পেয়ে নবম গ্রেডেই পড়ে থাকেন।সামাজিক ভাবেও আর অতটা সম্মান ও গ্রহন্যোগ্যতার আসনে আসীন নেই।(আমি কারন গুলার ব্যাখ্যায় যাবো না)।
অন্য দিকে যে সমস্ত ক্যাডার নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে তাদের প্রমোশন,প্রভাব,প্রতিপত্তি চোখে পড়ার মত।

তাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এখন অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্নরা অধিকতর সুবিধা প্রাপ্ত প্রফেশন গুলা বেছে নিবেন এটাই স্বাভাবিক।
অনেকেই ভাবছেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার রা প্রশাসন,পুলিশ,পররাষ্ট্র এ ঝুঁকলে এই ক্ষেত্র গুলা মেধা শুন্য হবেন, তাদের সংশয় অসত্য না হলেও আমি অবশ্য এখানে পজিটিভ অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি।বিশেষত প্রশাসন,পুলিশ,পররাষ্ট্র এইগুলা একটা রাষ্ট্রের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় ক্যাডার।
তাদের যে সমস্ত কঠিন বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত ডিল করতে হয়,সেখানে মেধাবী ও চৌকস অফিসারের বিকল্প নেই। দেশ ও জাতির কল্যান ও উন্নতির জন্য এটি অতীব প্রয়োজন।
বিশেষত প্রশাসনের কথা যদি বলতে হয়,তাহলে বলবো সেখানে যেকোন বিষয় নিয়ে গ্রাজুয়েশন করা ছাত্র রা আসতেই পারে,কিন্তু হতে হবে যোগ্যতম। কারন বর্তমানে দেশীয় বা উপমহাদেশীয় ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ এর পরেই প্রশাসন ক্যাডারের অফিসাররাই দেশের প্রায়ই সমস্ত বিভাগ এর প্রধান হয়ে বসে আছেন তথা দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং স্বাস্থ্য,প্রকৌশল, শিক্ষা, কৃষি সকল বিষয় এর যেকোনটায় অভিজ্ঞ মেধাবী ছাত্ররাই এখানে মানানসই।

সুতরাং সেই একই কথা।রাষ্ট্রীয় ভাবে,সামাজিক ভাবে, বৈশ্বিক ভাবে যেখানেই বেশি বিত্ত বৈভব,প্রভাব প্রতিপত্তি, সম্মান ক্ষমতা, সেদিকেই সময়ের যোগ্যতমরা ধাবিত হবেন,তাই সে মেডিকেল কলেজ থেকেই পড়ুক, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়ুক অথবা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর চাহিদা সম্পন্ন বিষয় নিয়ে পড়ুক।
এই দিক দিয়ে সম্ভবত ইন্ডিয়ার গ্রাজুয়েট রা একধাপ এগিয়ে আছে।যত টুকু জানি সেখানে সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন বা পররাষ্ট্র ক্যাডারের ৩০% এর বেশি পদে আছে গ্রাজুয়েশন লেবেলে ডাক্তারি অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া স্টুডেন্টরা।
সর্বশেষ যারা আশঙ্কা দেখছেন,আবার যারা পজিটিভলি দেখছেন, এই দুইয়ের সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিবেন রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই ঠিক করবেন কীভাবে প্রফেশনাল ক্যাডার ও অন্যান্য অধিক চাহিদা সম্পন্ন ক্যাডার গুলার মধ্যে মেধার ব্যালেন্স করে জাতি ও রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

______________
ডা. মৃণাল সাহা বলছেন ,

১) ডাক্তাররা অন্য ক্যাডারে বিসিএস দিতে পারবে না - এমন নোটিশ পাইলে অবাক হওয়ার কিছু নাই। আমরাই ডাক্তারীকে সহজলভ্য বানাইসি।

২) বাংলাদেশে এসে করোনার বিষ পাইকারী দরে সেল করে যখন বাম্পার ফলন শুরু হলো তখন তারা চলে গেলো ইটালী। ইটালীতে গিয়ে পুরাই কোন ঠাসা। জেল আর জরিমানায় বেচারাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সবচেয়ে খারাপ নিউজ হলো, এই বীর বাংগালীদের জন্য ইউরোপের ভিসার বন্ধ হয়ে গেছে৷

৩) করোনার ডেথ রেইট বেড়েছে। সংক্রমন যাই হোক আমরা যেই টেস্ট করি, যে ভাবে টেস্ট করি তাতে ১০০% ই পজেটিভ আসার কথা ছিলো কারন সাইন সিম্পটম না থাকলে আমরা টেস্ট করি না বরং সমস্যা থাকার পরও অনেকে টেস্ট করে না বা করার সুযোগ পায় না৷ কাজেই, এই স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে কোন লাভ নেই।

৪) ডেথ ডিউ টু কোভিড - এটার একটা পরিষ্কার ক্লিনিক্যাল ডেফিনেশান থাকার পরও আমরা কারো মৃত্যুকে কোভিড না বলে বলি, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু। বাহ! এই RT PCR টেস্ট এর কার্যকারীতা আমাদের দেশে এক অনন্য উদাহরণ। কোভিড পজেটিভ না আসলে আপনি প্রনোদনা পাবেন না, সাইন সিম্পটম যাই থাকুক। আমি জানি না ফ্রন্টলাইনারদের কোভিড নেগেটিভ থেকে উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি মিলবে কিনা।

৫) ডাক্তারদের মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশী। আপনারা ঘুরবেন, ফিরবেন, অসুস্থ্য হয়ে ডাক্তারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করবেন, চেম্বারে এসে রোগ ছড়াবেন, হাসপাতালে রোগ নিয়ে যত্রতত্র ঘুরবেন। আপনি সিক তাই বলে অন্যদের সংক্রমিত করে আপনি কিসের আত্মতৃপ্তি পান? অনেক মানুষ নিজে ইনফেকটেড হয়ে একবার ভাবেও না ডাক্তার যে সংক্রমিত হতে পারে কিম্বা তাদের নিজেদের প্রিয়জন। বাংলাদেশে এভাবেই করোনা বেড়েছে। নিজে রোগ ডেকে এনে এরা পরিবারে ছড়ায় তারপর ডাক্তারদের সংক্রমিত করে। এরা হাসপাতালে হিস্ট্রি হাইড করে ভর্তি হয়ে অন্য রোগীদেরও সংক্রমিত করে। কাজেই এই চক্র থেকে আমাদের মুক্তি নেই৷

৬) এতগুলো মানুষ ডুবে মরে গেলো, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে৷ এই মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে? উদ্ধারকারী জাহাজের আঘাতে নাকি সেতু ক্ষতিগ্রস্থ। কি হইতে কি হইতেসে বুঝতেই পারি না।

৭) করোনার ভ্যাক্সিন আসবে জুলাই -আগষ্ট এর দিকে। চীন যখন দেখলো করোনার যুগ শেষ নতুন ভাইরাসের ঘোষনা দিয়ে দিসে। তারমানে, চলছে চলবে একশান একশান ভাইরাসের একশান। এরমধ্যে আবার বন্যায় চিনের দিশেহারা অবস্থা৷ এরমধ্যে লাদাখ সিমান্তে যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। এত খেলা কেমনে খেলা ভাইয়া? আমিতো এই স্ট্যাটাস লিখেই কাহিল, ওরা কেমনে পারে?

#বিশেষ_বুলেটিন

বাই দ্যা ওয়েঃ কিছু কি বাদ পড়লো? গত কয়েকদিনের?

__________________INFORMATION________________

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়