Ameen Qudir
Published:2020-04-08 16:44:13 BdST
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চাকমার কি হয়েছিল? প্রকৃত সত্য জানালেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
ডেস্ক
________________________
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চাকমার কি হয়েছিল? এ নিয়ে মিডিয়ার নানা ভাষ্য ও প্রকৃত সত্যাসত্য অনুসন্ধান করেছেন অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রকৃত সত্য বিশ্লেষণ করে
তিনি জানান,
শুধুমাত্র শুনাকথায় একজন ফুসফুসের কান্সার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর জন্য এ দেশের চিকিৎসকদের দায়ী করা কতটুকু যুক্তি সংগত তা বিবেচনার দাবী রাখে। সংবাদপত্রসমূহের উচিত এই সব ক্ষেত্রে রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে তাদের নিজেদের মেডিকেল রিপোর্টারদের মতামত নেয়া।
এখানে তার পুরো লেখাটি জনস্বার্থে প্রকাশ হল।
অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম
_______________________
খাগড়াছড়ির সুমন চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদযালয়ের ছাত্র ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত হন। অনেক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সফলতা পেলেও কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাফল্য এখনো আশাব্যান্জক নয়। সেই রকম ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসার সফলতা ও খুব সীমিত। দ্বিতীয়ত যে কোন ক্যান্সারের সফলতা নির্ভর করে তার স্টেজ এর উপর। অর্থাৎ যে কোন ক্যান্সার early stage এ ধরা পরলে ভাল হওয়ার যতটুকু সম্ভাবনা late stage এ ধরা পরলে ভাল হবার সম্ভাবনা ঠিক ততটুকু কম।
(ক্যান্সার চিকিৎসার কিছু ধ্রুব সত্য:
১- ক্যান্সারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।
২- চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে রোগীকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এবং চিকিৎসা শেষ করে পাঁচ বছর সেই নির্দিষ্ট সেন্টারে বা তাদের নির্দেশিত সেন্টারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফলো-আপ করতে হবে।
৩- ক্যান্সার এর চিকিৎসা নির্দিষ্ট হাসপাতালে বা তাদের নির্ধারিত সেন্টারে শেষ করতে হবে, কারন প্রত্যেক ক্যান্সারের হাসপাতাল বেধে ভিন্ন ভিন্ন প্রটোকল আছে।
৪- ক্যান্সার প্রথমবার চিকিৎসা করে ব্যার্থ হলে, ২য়বার চিকিৎসা করে সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা আমাদের মত দেশে নেই বললেই চলে।)
খবরে প্রকাশ সুমন চাকমা ভারতে চিকিৎসার জন্য যান ২০১৮ সালে। কিছুদিন চিকিৎসার পর তিনি আপাতত সুস্থ্য বোধ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ শুরু করেন। তিনি পূর্ন মেয়াদে চিকিৎসা শেষ করেন নি। নিয়মিতভাবে ফলো-আপে ও ছিলেন না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় তিনি এ বছর পুনরায় অসুস্থ্য হয়ে পরলে করোনা পরবর্তি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে তার মূল চিকিৎসা কেন্দ্র টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যেতে পারেন নি।
উনার ফুসফুসে পানি জমে যায় অর্থাৎ পূর্বের দেয়া চিকিৎসা ব্যার্থ হয়ে যায় এবং ক্যান্সার তখন advanced stage এ চলে যায়। Stage 4 Ca lung এর চিকিৎসায় সম্পূর্ন আরোগ্য বা ভাল হবার সম্ভাবনা নেই বলেই চলে। তখন শুধু Palliative চিকিৎসা অর্থাৎ প্রশমন সেবাই দিতে হবে। সেই প্রশমন সেবা দেয়া হয় ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু সরকারী বা বেসরকারী ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র বা বিএসএমএমইর palliative care center এ।
সুমন চাকমা সেই সব কেন্দ্রে গিয়েছিলেন কি না জানা যায় নি। পত্রিকা সূত্রে জানা যায় তিনি ভারতের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, তার বাবা জানিয়েছেন সুমন চাকমা শেষ পর্যন্ত হোমিও চিকিৎসা ও নিয়েছিলেন।
আমরা সুমন চাকমার মৃত্যুতে শোক জানাই। তার এলাকার বয়োজাষ্টরা জানিয়েছেন সুমনের মৃত্যুর পর পুরোহিতরা করোনা রোগী মনে করে তার শেষ কৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা যথার্থভাবে সম্পন্ন করেন নি। যা খুবই দু:খজনক।
শুধুমাত্র শুনাকথায় একজন ফুসফুসের কান্সার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর জন্য এ দেশের চিকিৎসকদের দায়ী করা কতটুকু যুক্তি সংগত তা বিবেচনার দাবী রাখে। সংবাদপত্রসমূহের উচিত এই সব ক্ষেত্রে রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে তাদের নিজেদের মেডিকেল রিপোর্টারদের মতামত নেয়া।
________________________
অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম
Professor of Pediatric Hematology & Oncology
বিভিন্ন পত্রিকায় আসা বিচিত্র সব তথ্যর কিছু কাটিং
আপনার মতামত দিন: