Ameen Qudir
Published:2020-03-04 23:19:19 BdST
১মাস ধরে এলাকার ওয়ালগ্রীন, সিভিএস, রাইট এইডএও কোন মাস্ক নেই
সচেতনতা না আতঙ্ক?
ডা. সজল আশফাক
বাংলাদেশের পথিকৃৎস্বাস্থ্য মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব , ছড়াকার
__________________________
ওয়াশিংটনে করোনাভাইরাস মৃতের খবর প্রচারের পরপরই অ্যামাজনে বেড়ে গেছে মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইযারসহ করোনা প্রতিরোধী উপকরণের চাহিদা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর প্রকাশের পর থেকেই বাজার থেকে সার্জিক্যাল মাস্ক এবং N95 মাস্ক উধাও। উধাও মানে, লোকজন সব মাস্ক কিনে নিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত ১মাস ধরে এলাকার বড় বড় দোকান যেমন, ওয়ালগ্রীন, সিভিএস, রাইট এইড-এও কোন মাস্ক নেই। এইসব স্টোরে খোঁজ নিতে গিয়ে প্রতিবারই উত্তর এসেছে- এখন নেই, সব শেষ হয়ে গেছে, আগামী বুধবার আসুন। অনেক বুধবার এর মধ্যে চলে গেছে কিন্তু তারপরও মাস্ক না পেয়ে বললাম- আমি এসে তো একবারও পাচ্ছি না!
আপনি অগ্রিম অর্ডার করতে পারেন, এমন উত্তর দিলেন রাইট এইড কর্মকর্তা।
অগ্রিম অর্ডার না করে আবারও খুঁজলাম আশেপাশের নাইনটি নাইন সেন্টের দোকানগুলোতে। ওদের অবস্থা আরও খারাপ। বলল, মাস্ক আর আসবে কী না জানি না তবে অল্প কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইযার আছে। গোটা সাতেক ৬০ মি.লি. সাইজের মিনি স্যানিটাইযার পাওয়া গেল, সবগুলোই নিয়ে নিলাম। দাম বেড়ে প্রতিটি এখন দেড় ডলার করে। মাস্ক পাওয়া গেল না, তাই এমাজনে ঢুকলাম। সাধারণ স্টোরের ভিড় দেখা যায় কিন্তু অনলাইন শপের ভিড় দেখা না গেলেও এই প্রথমবার অনলাইনে মাস্ক কেনা নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ির মধ্যে পড়লাম। বেশ কিছু N95 মাস্ক এমাজনের কার্টে তুলে পে করার আগেই স্ক্রিনে লেখা ভেসে উঠছে- দিজ প্রডাক্ট ইজ আনএভেইল্যাবল। ৪/৫ বার এমন হওয়ার পর ৫ টার একটা N95 মাস্কের প্যাকেট প্যাকেট পেলাম, দাম ১০০ ডলার। অর্ডার প্লেস করতেই দেখলাম সাথে শিপিং চার্জ ১১০ ডলার যোগ হয়েছে। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি, দ্রুত এই অর্ডার ক্যানসেল করে আবার কম দামের মাস্ক খুঁজতে থাকলাম। এবার প্রতিপিস ১৭ ডলার দরের N95 মাস্ক পেলাম। ৬টা অর্ডার করলাম, এবার শিপিং চার্জ ফ্রি হলেও ট্যাক্স কিছু যোগ তো হবেই। আমি ব্রাউজ করতে করতেই দেখলাম অধিকাংশ মাস্কের ছবির নিচে লাল রঙে লেখা - আনএভেইল্যাবল।
ইতোমধ্যে এমাজনে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দেয়ায়, বাড়তি দাম হাঁকা সাপ্লাইয়ারদেরকে তাদের পেজ থেক তুলে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এমাজন কর্তৃপক্ষ। মাস্ক, সেনিটাইযার সবই কিন্তু মেড ইন চায়না। কাজেই বাজারে সাপ্লাইয়ের ঘাটতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অনলাইনে এমাজনে মাস্ক নিয়ে এহেন কাড়াকাড়ির পর আজ সকাল থেকে রাত অবধি রাস্তায় কিন্তু মাস্ক পরা লোক তেমন একটা চোখে পড়ল না। কিন্তু বড় বড় গ্রোসারি শপে শুকনো খাবার কেনার হিরিক না পড়লেও বিক্রি বেড়েছে অনেক। লোকজন এখনও মাস্ক পরা শুরুই করে নি, তাতেই মাস্কের এত আকাল। পথচারীদের ১০ শতাংশ মানুষও যদি মাস্ক ব্যবহার করতে চায় তখন মাস্কের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা সহজেই আঁচ করা যায়।
এই উৎকণ্ঠার কারণে কারো কারো কাছে আমি ঠাট্টা-কৌতুকের পাত্র। আমিও চাই আমার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মিথ্যা হোক। কিন্তু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিরবে জারি থাকুক, তা না হলে সচেতনতার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। আর এই সচেতনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে, সার্বক্ষণিক বজায় রাখার বিষয়। হঠাৎ করে বাস্তবতা অনুভব করলে ঘটনার আকস্মিকতা আপনাকে আতঙ্কিত করতে পারে।
আপনার মতামত দিন: