Ameen Qudir

Published:
2020-02-13 22:59:18 BdST

করোনাভাইরাস আক্রমণ মানেই কি মৃত্যু?


ডা. সাঈদ এনাম
_____________________

বুধবার সিংগাপুরে একটি নাম করা ব্যংকে ৪২ তলায় কর্মরত তিনশোর অধিক কর্মকর্তাতে নিমিষেই ফ্লোর খালি করতে বলা হয়েছে, কারন ঐ রুমে সে সময় কর্মরত এক ব্যক্তির রক্তে করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। যার রক্তে করোনাভাইরাস এর উপস্থিতি পাওয়া যায় লোকটি কয়েক দিন ধরে সর্দি-জ্বর এর ভুগছিলো এবং ল্যাবরেটরিতে তার রক্ত পরিক্ষা করতে দিয়েছিলো। তার ব্লাড রিপোর্টে জেনে আতংকিত হয়ে ছুটতে থাকে সবাই।

আজকাল অনেকের মনে আশংকা করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানেই হচ্ছে মৃত্যু নিশ্চিত। আসলেই কি তাই? ব্যাপারটা সেরকম বলা যাবেনা।
নতুন কোন রোগ খারাপ বা কতটুকু খারাপ কিভাবে বুঝবো?
একটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগে মৃত্যুর হার খানিকটা বেশি থাকে আবার অনেক সময় কম ও থাকতে পারে। তাই নতুন কোন রোগ দেখা দিলে বা ছড়িয়ে পড়তে থাকলে ঝটপট সে রোগের মৃত্যুর হার বা ফাটালিটি রেইট কেমন তা চট করে বলে দেয়া কঠিন। তবে কিছুটা অনুমান করা যায়।

নতুন কোন রোগে মৃত্যুর হার কি রকম, এটি জানতে রোগটির আউটব্রেক (আক্রমণ) আগে শেষ হতে হবে। নতুন করে আর কেউ আক্রমণ হচ্ছে না এ মর্মে নিশ্চিত হতে হবে। তারপর গানিতিক অংক কষে বের করা যাবে রোগটির ফাটালিটি রেইট কেমন।

করোনাভাইরাস এ মৃত্যু কেমন?

যেহেতু করোনাভাইরাস এর আক্রমণ কেবল শুরু, দিন দিন বাড়ছে, এবং সেই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাটা ধীর গতিতে বাড়ছে সুতরাং এ মুহুর্তে রোগে মৃত্যুর হার বের করাটা কঠিন। তারপরও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ মোটামুটি একটা ধারনা বের করে রাখে যেকোন রোগের প্রাদুর্ভাব হলে।

যেমন করোনাভাইরাস এ মৃত্যুর হার কেমন হয় এর একটা আনুমানিক হিসেব আপাতত বের করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ৮ তারিখ পর্যন্ত করোনাভাইরাস এ মৃত্যু হয়েছে মোট ৮১৩ জনের এবং করোনাভাইরাস এ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৫৫২ জন।

সুতরাং এ থেকে করোনাভাইরাস এ মৃত্যুর শতকরা হার নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়।

মৃত্যুর হার বের করার নিয়ম?
কিভাবে মৃত্যুর হার বের করা হয়। এটা খুব সহজ একটা হিসাব। টোটাল ডেথ কেইস ডিভাইডেড বাই টোটাল ডিটেক্টেড কেইস মাল্টিপ্পলাইড বাই ১০০।

সুতরাং সে হিসাবে দাঁড়ায় করোনাভাইরাসে আপাতত মৃত্যুর হার হচ্ছে শতকরা ২ জন। অর্থাৎ ১০০ জন করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হলে মারা যাচ্ছেন ২ জন।

ইতিহাস ঘাটলে আপাতত এই ২% রেইটকে আসলে খুব একটা বেশি রেইট বলা যাবেনা। কারন ইতিপূর্বে মার্স ও সার্স ভাইরাস এ মৃত্যুর হার এর চেয়ে অনেক গুন বেশী ছিলো। সার্স এ মৃত্যুর হার ছিলো ৩৪%, এবং মার্স এ ছিলো ৯'৬ %।

তবে এখানে একটি কথা আছে। যেটা শুরুতেই বলেছি। রোগের প্রাদুর্ভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবেনা। কারন সার্স ভাইরাসের আক্রমণে যখন মৃত্যুর হার গননা করা হয় তখন প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগে মৃত্যুর হার ছিলো ৪ %। কিন্ত এর আউটব্রেক শেষ হবার পর এই হার বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৯'৬ %।

সুতরাং করোনাভাইরাস এ মৃত্যুর হার বর্তমানে ২% বা তার চেয়ে কিছু বেশী হলেও এই পরবর্তীতে ২ এ থাকতে পারে নাও পারর। কমতে পারে অথবা বেড়ে যেতে পারে।

করোনাভাইরাস এ পর্যন্ত যত মানুষ মারা গিয়েছেন এ নিয়ে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে এটি মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশী আক্রমণ করে। এতে বেশি মৃত্যু হয় বয়স্ক লোকের অর্থাৎ যাদের বয়স ৬০ এর উপরে এবং বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন তারা যাদের ডায়বেটিস, হাইপ্রেশার, শ্বাসের রোগ, লিভারের রোগ ক্যন্সার ইত্যাদি রয়েছে।

আপাতত করোনাভাইরাস ভাইরাস ছড়াচ্ছে হাঁচি, কাশি, থুথু, লালার মাধ্যমে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক পরবেন, যেখানে সেখানে থুথু বা কফ ফেলবেন না।
_______________________

ডা. সাঈদ এনাম
ডিএমসি,কে-৫২
সাইকিয়াট্রিস্ট

সহকারী অধ্যাপক
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়