Ameen Qudir

Published:
2019-10-24 08:23:05 BdST

মানসিক সুস্থতায় অনীহা কেন?অপ্রাপ্তির সমাজে প্রতিহিংসার প্রহরগুলো



ডা.মোহাম্মদ হাসান
দপ্তর সম্পাদক খুলনা বিএমএ এবং
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ছাত্র

____________________________

মানসিক সুস্থতায় অনিহা কেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রচন্ড গুরুত্ব দিয়েছে।তারা বলেছে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়া কোন পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যাবস্থা হতে পারে না।কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি এই তত্ত্ব থেকে।দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে অবহেলিত মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি।মানসিক নানান জটিলতায় এবং রোগে এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক বড় একটা অংশ এখনো ওঝা,হেকিম,তান্ত্রিক আর তাবিজের উপর নির্ভর করে।আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের কাছে থাকলেও অজ্ঞতা তাদের দূরে রেখেছে।বিজ্ঞান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে কিছু হাইপোথিসিস থাকে,কিছু পরিক্ষিত সত্যি থাকে আর থাকে নতুনকে বৈজ্ঞানিকভাবে ধারনের চেষ্টা।কিন্তু এ সমাজের মানুষগুলো এগুলো বুঝতে চায় না।ধরুন আমি লিখলাম ২+......=৪ তাহলে ঐ শূন্যস্থানে আর একটি ২ বসবে এটি আমরা বুঝি।এটাই হাইপোথিসিস যা দিয়ে মানসিক বিভাগের অনেক রোগ এবং ব্যাধিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।এখানে রোগীর উপসর্গ থাকে, রোগী মারা যায় কিন্তু কারন অনেক সময় আপাত দৃষ্টিতে খুঁজে পাওয়া যায় না।তার মানে এই নয় যে কারন নাই বা এটি রোগের অন্তর্ভুক্ত নয়।আজকের বিশ্বায়নের যুগে আমরা ইউরোপ এবং আমেরিকার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবো তারা মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে কি রকম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সাথে জড়িত অনেকেই এ আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাপারে অনিহা প্রকাশ করে।যার আপনজন,কাছের মানুষ বা নিকট আত্মীয়দের কেউ বাইপোলার,সিজোফ্রেনিয়া বা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারাই বুঝতে পেরেছেন এর ভয়াবহতা। মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষাকে এমবিবিএস লেভেলে আরও গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানাই।সরকারিভাবে প্রয়োজন সঠিক পলিসি নেওয়া এবং প্রচারণার।ঝুঁকির মধ্যে থাকা পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং গাড়ি চালকদের মাঝে প্রয়োজন এই বিজ্ঞান ভিত্তিক আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া।কাউন্সিলিং এবং সাইকোথেরাপির দ্বারা সামাজিক অস্থিরতা এবং অপরাধ প্রতিরোধ করাও সম্ভব। মাদকাসক্তির কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।আত্নহত্যা প্রতিরোধ ,কিশোর সংশোধন এবং শিশুদের বিকাশের জন্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে মনোরোগ বিদ্যার হাত ধরে।আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক সমাজে সবার সু স্বাস্থ্য নিশ্চিত হোক এই কামনা করি।


অপ্রাপ্তির সমাজে প্রতিহিংসার প্রহরগুলো
________________________________

আমরা এক অস্থির সমাজে বাস করছি।এখানে অফুরন্ত সম্ভাবনায় হারিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রচুর।চাহিদা এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের সবাইকে জিম্মি করেছে।এই না পাওয়া, তাল না মেলাতে পারা আর প্রতিযোগিতার মনোভাবের চাপে শিশুকাল থেকেই খেই হারাচ্ছে আমাদের জীবনের গতি পথ।বাচ্চাদের মাঝে পরিবার এবং অপদার্থে পরিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো শুধু সফল আর অর্থবান হবার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।একমুখী শিক্ষা নীতির পক্ষে কথা বলা মানুষগুলো যখন তার বাচ্চাদের ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করে তখন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি।ছোটবেলায় যে আদর্শলিপি পড়েছি, তাকে যখন সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে বাদ দেওয়া হয় তখন মন থেকে ধিক্কার আসে।আর যখন বিজ্ঞ জ্ঞানী সাধু সমাজের বুদ্ধিজিবি মানুষগুলো সমাজ সংস্কার না করে সেমিনার, সিম্ফোজিয়াম আর টকশোর টাকা গুনতে ব্যস্ত হয় তখন নীতি নৈতিকতাহীন সমাজই তৈরি হবে।এদেশের মানুষ আগে সবাই সৎ ছিল পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বা রাজনৈতিক স্লোগানে।আর সবাই এখন প্রচন্ড সৎ ফেসবুকে আর টুইটারে।যে শিক্ষা শিশুকালে মনে গ্রোথিত হবে,যে শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আলো দিবে তা নিয়ে মাতামাতি নাই।হুমায়ুন আহমেদ বলতেন বাঙালির নাকি গোলড ফিসের স্মরণশক্তি।শুধুই নাকি ভুলে যায়।আসলেই আমরা ভুলে যাই।নতুন খবরে পুরাতন খবর চাপা খায় আর আমরা সংস্কারের কথা ভুলে যাই।সমাজ আর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিযোগিতা দরকার তবে প্রতিহিংসা নয়।অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের চালিত করছে এমন পথে ছুটে চলতে যেখানে মানবিকতা নেই,নেই শ্রদ্ধাবোধ।চিকিৎসক বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের হিসেবে মানুষ মাত্রই ভালো খারাপের সংমিশ্রণ।এখানে খারাপকে অবচেতন মনে মানুষ মন থেকে হারিয়ে যেতে দেয়।কিন্তু আমাদের মন্দভাগ্য যে যে খারাপ কাজগুলো আমরা আমাদের মন থেকে অবচেতন মনে দূরে সরিয়ে দিতে পারি সেগুলোই পারিবারিক অশিক্ষা এবং শিক্ষা ব্যাবস্থার ভুলে আমাদের মনে জায়গা করে নিচ্ছে।আমাদের সমাজের বহু পন্ডিত ব্যক্তিদের কাছেও পরিক্ষায় বেশি পাওয়া আর জিপিএ বেশি পাওয়াই একমাত্র মেধার পরিচায়ক। এখানে কবিতা লেখা,নাটক রচনা করা,গান গাওয়া, রাজনীতি করা,খেলাধূলা করা বা ছবি আকা মানে তেমন কিছু না।আমাদের অনেকে আবার ইংরেজি কোন রকমে বলতে পারাকে বিশাল কর্ম সাধন বলে মনে করে কিন্তু যে মাদ্রাসার ছাত্র আরবি বলতে পারে তাকে মেধাবী মনেই করে না।এই প্রাগৈতিহাসিক মনোভাব নিয়ে এদেশের বুদ্ধিজিবিরা কি পরিবর্তন আনবে তা বেশ বুঝতে পারি।আমরা দেশ চাই আধুনিক কিন্তু নিয়মকানুন থাকবে পুরাতন এবং কুসংস্কার যুক্ত।শুরু হোক আতুর ঘর থেকে।একমুখী, আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত, বাস্তব, কর্মমুখী এবং মানবিক জ্ঞানে পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যাবস্থা পারে এই অসুস্থ সমাজকে প্রতিহিংসার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে।নাহলে সামাজিক অন্যায় এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে মুক্তি নাই।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়