Ameen Qudir

Published:
2019-06-13 00:14:42 BdST

রোগী স্বজনদের গুন্ডামিতে ডাক্তার মরণাপন্ন : পশ্চিম বাংলায় ডাক্তারদের ক্ষোভের আগুন


 

আহত পরিবহ মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।


ডেস্ক
_______________________

খোদ কলকাতায় ভারতবর্ষের এক শীর্ষ হাসপাতালে রোগী স্বজনদের গুন্ডামিতে ডাক্তার মরণাপন্ন : কলকাতাসহ সারা পশ্চিম বাংলায় ডাক্তারদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন সজ্বলছে।
সোমবার রাতে রোগী স্বজন পরিচয়ের একদল গুন্ডার আক্রমনে গুরুতর আহত হন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায় ও যশ টেকওয়ানি। ট্রাকে করে গুন্ডা এনে চিকিৎসকদের মারা হল। এর পরেই চিকিৎসক বিক্ষোভে মঙ্গলবার কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা! দফায় দফায় বৈঠক। দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস। কিছুই এই হাসপাতালে সোমবার মধ্যরাত থেকে চলা অচলাবস্থায় ইতি টানতে পারেনি। উল্টে তা রাজ্যের সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার বিকালে এনআরএসের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন ট্যাংরা বিবির বাগানের বাসিন্দা মহম্মদ শাহিদের (৭৫) মৃত্যু ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত। এ দিন জুনিয়র চিকিৎসকদের জমায়েত থেকে শুভদীপ খামারু ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তা হল, বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ রোগীর চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না এই অভিযোগে কর্তব্যরত ইন্টার্নদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন রোগীর পরিজনেরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে দুই ইন্টার্ন ইউনিট রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। শুভদীপ জানান, দরজায় ধাক্কা মেরে যিনি ছেলে ইন্টার্ন ছিলেন, তাঁকে বাইরে বার করার জন্য হুমকি দিতে থাকেন রোগীর পরিজনেরা। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে এনআরএসে ‘প্যানিক বাটন’ রয়েছে। সেই বোতাম টেপায় পুলিশ এলেও লাভ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।

হামলার প্রতিবাদে ক্রমশ জুনিয়র চিকিৎসকেরা যেমন দলে ভারী হন। প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। অন্যদিকে মৃতের পক্ষে একদল পেশাদার গুন্ডা ও মাস্তান ভিড় জমান এনআরএস চত্বরে।

ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায় এবং যশ টেকওয়ানি ভারী বস্তুর আঘাতে গুরুতর জখম হন। পরিবহকে রাতেই ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এনআরএসের সিসিইউয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন যশ। এ দিন দুপুরে অস্ত্রোপচারের পরে পরিবহের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, আহত দু’জনের চিকিৎসার সব খরচ রাজ্য সরকারই বহন করবে।
রাতেই হাসপাতালের দু’টি গেট বন্ধ করে দেন বিক্ষোভরত চিকিৎসকেরা। ফলে রোগীর পরিজনেরা বিপাকে পড়েন।


মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। পুলিশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠক হয়। জুনিয়র চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তোলেন, ট্রাকে করে লোক এনে চিকিৎসকদের মারা হল। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশ কী করছিল?
দুপুরে এনআরএসে পৌঁছন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী নির্মল মাজি এবং পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। দুপুরের পরে আরজিকর, এসএসকেএম, সাগর দত্ত-সহ অন্য মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা মিছিল করে এনআরএসে পৌঁছলে বিক্ষোভ আরও বাড়ে। জমায়েতে হাজির হন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।
আউটডোর পরিষেবা বন্ধ, অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে আছেন মুমূর্ষু রোগী, ব্লাড ব্যাঙ্ক অচল, একের পর এক অস্ত্রোপচার বাতিল এবং চিকিৎসাধীন রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিজনেরা। এ দিনই বিকেলে এনআরএসে মৃত্যু হয় তপসিয়ার বাসিন্দা বিজয় রাম। পেটের সংক্রমণ নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরিবারের অভিযোগ, কর্মবিরতির কারণে এ দিন তাঁর চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, চিকিৎসকদের প্রতি তাঁরা সহানুভূতিশীল।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাও বলেন, ‘‘সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুরোধ, পরিষেবা যেন বিঘ্নিত না হয়।’’ সরকারি সূত্রের দাবি, এ দিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ সামিম বলেন, ‘‘এই ঘটনায় পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে।’’ বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যদি আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, রাজ্যের মানুষের সুরক্ষা না থাকে, তবে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করবে। এখন বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ডাক্তার, রোগীদের সুরক্ষা নেই।’’ ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হলপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, জরুরি পরিষেবা চালু রেখে তারাও আউটোর বন্ধ রাখার আন্দোলনে শামিল হবে ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়