Ameen Qudir

Published:
2019-05-26 05:33:52 BdST

মিডিয়ার নেগেটিভ প্রচারণাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফালোভীরা রোগীদেরকে বিদেশ পাঠাচ্ছে



ডা. কামরুল হাসান সোহেল

___________________________


প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে; এ থেকে কেউই বাদ যাবে না

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আন-কাবুত, ২৯/৫৭

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُؤَجَّلا

আর কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না, তার মেয়াদ লিখিত আছে। আল ‘ইমরান, ৩/১৪৫

أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكُكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। আন-নিসা, ৪/৭৮

একজন মুমূর্ষু রোগীকেও চিকিৎসক তার সর্বোচ্চ জ্ঞান দিয়ে, সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে সুস্থ করে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন। তারপরও কখনো কখনো হেরে যেতে হয় অদৃষ্টের কাছে। একজন চিকিৎসক সবসময়ই চায় তার রোগী সুস্থ হয়ে উঠুক। রোগী সুস্থ হয়ে উঠলে চিকিৎসকের মুখে হাসি ফুটে উঠে।

আমাদের দেশে এখন নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোন রোগী মারা গেলে সবাই চিকিৎসকের চিকিৎসায় ভুল খোঁজে,চিকিৎসকের অবহেলা খোঁজে! চিকিৎসকের প্রতি এত অনাস্থা কেন? এই অনাস্থা তৈরি করেছে কিছু প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া। চিকিৎসাধীন কোন রোগী মারা গেলেই তারা শিরোনাম ছেপে দেয় 'চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু' বা "চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু"। একজন চিকিৎসক কখনোই চায় না তার রোগী সুস্থ না হোক,মারা যাক তা তো কখনোই কামনা করেনা। একজন চিকিৎসক হিপোক্রেটিক ওথ নেয় যে সে সর্বাবস্থায় তার রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবে, জাত-পাত,ধর্ম,বর্ণ,শ্রেণী,গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই তার কাছে সমান গুরুত্ব পাবে।

হাসপাতালে একজন রোগী তখনই আসে যখন তার অবস্থা হয় সংকটাপন্ন, আর একজন সংকটাপন্ন রোগীর শারিরীক অবস্থা যেকোন সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে।হাসপাতালে কম বেশি প্রায় সব রোগীই সংকটাপন্ন অবস্থায় আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম দিয়ে তাদের সবাইকে সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করে।কিন্তু এত চেষ্টার পরও যে কেউ মারা যেতে পারে। তখনি শুরু হয় প্রোপাগাণ্ডা! ভুইফোড় কিছু অনলাইন নিউজ পেপার আর তার সাংবাদিকেরা প্রচার করে "চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু" বা "চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু"। আর এই প্রোপাগাণ্ডার শিকার হয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়, চিকিৎসককে নাজেহাল করে রোগীর লোকজন, হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয় চিকিৎসক!

এতগুলো খারাপ রোগীকে যখন সুস্থ করে তুলে ডাক্তাররা তখন তো তাদেরকে আপনারা ধন্যবাদ জানান না,তাদের সাফল্য প্রচার করেননা। কালভদ্রেও চিকিৎসকদের নিয়ে, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে পজিটিভ কোন নিউজ করেন না। আপনারা কেন এই দেশের গরীব, দুঃখী,অসহায় সাধারণ রোগীদের মনকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলছেন,কেন চিকিৎসকদের প্রতি তাদের আস্থাহীন করে তুলছেন? এতে কার লাভ হবে? এদের তো প্রচুর টাকা নেই এরা চাইলেই তো সিংগাপুর, থাইল্যান্ড যেতে পারবেনা চিকিৎসা নিতে।

আপনাদের এই নেগেটিভ প্রচারণাকে কাজে লাগিয়ে একদল মুনাফালোভী এই দেশের মধ্যবিত্ত রোগীদেরকেও সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য ভারত পাঠানোর সুযোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশ এখন চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন ইন্ডিকেটর এ ভারত ও পাকিস্তান থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। আপনাদের বিরামহীন নেগেটিভ প্রচারণার কারণে এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে ভারত থেকে আগত নিম্ন মানের চিকিৎসকদের হাতে,তাদেরকে হাইলাইটস করে প্রতারক চক্র এই দেশের সাধারণ রোগীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ব্যবসা করছে আর দেশের অর্থ ভারতে পাচার করছে। আপনাদের নেগেটিভ প্রচারণায় সাধারণ রোগীদের কোন লাভ হচ্ছেনা, লাভ হচ্ছে প্রতারকদের যারা সাধারণ রোগীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে পাশের দেশে পাঠিয়ে দিয়ে কমিশন খাচ্ছে।আর এই গরীব দেশের অর্থ চলে যাচ্ছে সব পাশের দেশে।

চিকিৎসকরা ফেরেশতা নন,তারাও মানুষ। তাদের ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে, তবে তা কখনোই ইচ্ছাকৃত নয়। আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম, একেকজন চিকিৎসককে অনেক বেশি রোগীর চাপ সামাল দিতে হয়। তারপরও সবাই তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। একজন মরণাপন্ন রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পর যদি সে মারা যায় আর তখনই যদি তার মৃত্যুর জন্য চিকিৎসককে দায়ী করা হয়,তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আর কোন চিকিৎসক মরণাপন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিবেন না তাকে রেফার করে দিবেন। পরে দেখা যাবে বিনা চিকিৎসায়ই তাকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরতে হয়েছে।

চিকিৎসকদের সাথে রোগীদের দূরত্ব না বাড়িয়ে তাদের মাঝে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করুন তাতে এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে,রোগীরা স্বল্প খরচে সবচেয়ে ভাল সেবা পাবে।
________________________________
ডা. কামরুল হাসান সোহেল :
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়