Ameen Qudir

Published:
2019-04-30 02:33:01 BdST

নিজ হাসপাতালের ব্যর্থতার ঢোল নিজে বাজিয়ে চিকিৎসককে হেয় ও জনগণকে বিভ্রান্ত করলেন এমপি


 


  ডা. বাহারুল আলম
প্রখ্যাত পেশাজীবি নেতা্, বিএমএ -র শৗর্ষ কর্নধার
____________________________
............................................................
চিকিৎসকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি থাকা গুরুতর অপরাধ । কিন্তু রোগী বা নাগরিকদের প্রয়োজনে বরাদ্দকৃত সময়ের অতিরিক্ত সময় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া অপরাধ না প্রশংসিত – নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য ১মটির বিষয়ে তীব্র বিষদগার করলেও ২য় টির বিষয়ে একেবারেই নীরব, কোন কথাই বলে নি।

নড়াইল সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট , চিকিৎসকের পদ সৃষ্ট আছে ৩৯ টি। সংসদ সদস্য যখন হাসপাতাল পরিদর্শনে যান , সে মুহূর্ত পর্যন্ত কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা ১৪জন । তার মধ্যে একজন মাত্র শল্য চিকিৎসক ডা আকরাম হোসেন । প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ১৮০ থেকে ২০০জন। এ সকল রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একজন শল্য চিকিৎসক সহ ১৪ জন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দুই তৃতীয়াংশ চিকিৎসকের দায় ভার এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসকের কাঁধে । সংসদ সদস্য চিকিৎসকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের প্রশংসা তো করেন নাই , উপরন্তু হাসপাতালের রোগীর স্বজন ও তার সাথে যাওয়া মানুষের সামনে একহাত নিলেন অনুপস্থিত চিকিৎসককে। একজন শৈল্য চিকিৎসক অতিরিক্ত আরও দুইজন শৈল্য চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনের পরেও পুরষ্কার না পেয়ে তিরস্কার পেল ।

নড়াইল সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি নড়াইল ২এর সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মুর্তুজা। মাসে একটি করে সভা করার নিয়ম আছে । গত ৪ মাসে (জানুয়ারি- এপ্রিল) সভা করেছেন মাত্র ১টি। অপর ৩টি সভায় স্বয়ং সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন – সে কথাটি জনসমক্ষে নিজেকে তিরস্কার করে দুঃখ প্রকাশ করে নি । নড়াইল সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সকল ত্রুটি বিচ্যুতি , অনিয়ম অব্যবস্থার দায় মাশরাফী বিন মুর্তুজার উপর। সকল ব্যর্থতা তারই। যে ডালের শীর্ষে বসে আছেন , সেই ডালেরই গোড়া কাটছেন। বৃহস্পতিবার অপরাহ্ণে নিজ দায়িত্বে পরিচালিত হাসপাতালে গিয়ে চিৎকার করলে , আঙ্গুল যে তার দিকেই নির্দেশ করবে – সেটা বোঝার ক্ষমতা মনে হয় নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্যের নাই ।

ডিউজ বলে ক্রিকেটের মাঠ কাঁপানো যত সহজ , প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানো তত সহজ নয় ।

শৈল্য চিকিৎসক আকরামের অনুপস্থিতির যথাযথ কারণ না জেনে তাকে ক্ষমতার জোরে হেয় প্রতিপন্ন করা মোটেও শোভন হয় নি সংসদ সদস্যের । প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসাবে শৈল্য চিকিৎসকের জরুরি , ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দুর্ঘটনার কারণে অনুপস্থিত থাকতেই পারে । পরবর্তীতে সে যোগদান করলে অবশ্যই কারণ দর্শানো যেত এবং ডা আকরাম-কে জবাব দিতে হত। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করা অবশ্যই অপরাধ । কিন্তু অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করার আগে কোন পরিস্থিতিতে , কেন না জনিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছে – জবাব পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল । প্রকাশ্যে কৈফিয়ত চেয়ে শৈল্য চিকিৎসকের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করলেন সংসদ সদস্য এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্ত করলেন জনগণকে ।

অথচ এর পাশাপাশি যাদের দোষে নড়াইলের হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ থেকে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ পর্যন্ত রোগীরা চিকিৎসা ও সেবা পায় না , চিকিৎসক নাই , জনবল নাই –এর জন্য যে বা যারা দায়ী সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয় - তাদের উদ্দেশে কোন বিষদগার করেন নি। উপরন্তু কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ডা আকরামের অনুপস্থিতির কারণে । কি ধরণের ন্যায় বিচার একজন সংসদ সদস্যের ? সার্জনের অনুপস্থিতির জন্য দোষারোপ করা হয় অথচ সার্জনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি অজ্ঞানকারী চিকিৎসক এর পদ শূন্য । নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা থেকে একজনকে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করানো হয়। সংসদ সদস্য জানেন না একজন অজ্ঞানকারী চিকিৎসককে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করানো অমানবিক অপরাধ। যারা এর জন্য দায়ী – সংসদ সদস্য তাদের কিছুই বলেন নি। নাগরিকদের বিভ্রান্ত করার জন্য নড়াইল হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অনেক কিছু (চিকিৎসক, নার্স, অপরাপর জনবল, রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি, পরিচ্ছন কর্মী , পানীয় জল সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে শয্যাসংখ্যা) উপেক্ষা করে কেবল একজন শৈল্য চিকিৎসকের অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে নিজ ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য কয়েকঘন্টা ঝটিকা সফরের নামে অহেতুক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খ্যাতিমান এ ক্রিকেটার ও নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য কিছুটা বলতে পারলে তার এলাকাবাসীর উপকারে আসত । সংসদে ক্ষোভ না করে হাসপাতালে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফল কি হবে ? ১১ বছর ধরে হাসপাতালে ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’র নিয়োগ বন্ধ রেখে শৌচাগারের ভাঙ্গা দরজা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা জনগণকে শুনিয়ে ক্ষমতার বাহাদুরি হতে পারে , ভুক্তভোগী রোগীদের কোন উপকারে আসবে না ।

নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্যের প্রতি অনুরোধ – সংসদে কথা বলুন , কার্যকর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখুন। তাহলে আর নিজ হাসপাতালের ব্যর্থতার ঢোল নিজে বাজিয়ে লজ্জাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে না

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়