Dr. Aminul Islam

Published:
2020-11-16 00:11:47 BdST

চিকিৎসকগন যেভাবে শেষ বিদায় জানালেন বাঙালির বিশ্বতারকা সৌমিত্রকে



ডেস্ক
________________________

আজ সকাল থেকেই বেলভিউ নার্সিং হোম ছিল বিষন্নতার চাদরে মোড়া। গত কয়েক সপ্তাহ জুড়েই কলকাতাসহ এপার বাংলা ওপার বাংলার ছিল মন খারাপ। আকাশে খন্ড খন্ড শোকমেঘ। বেলভিউতেই শেষ নি:শ্বাস বাংলা চলচ্চিত্রের বিশ্বতারকা মহানায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। বেলভিউর ডাক্তাররা সবরকম চেষ্টা করেছেন নায়ককে বাঁচাতে। আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কখনও আশার আলো জ্বেলেছেন ডাক্তাররা। জীবনের পথে এনেছেন অভিনেতাকে। তাদের আশ্বাসে দুই বাংলাই আশায় বুক বেঁধেছিল। আবার ফিরবেন মহানায়ক।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না। বাংলার বিশ্বনায়ক সৌমিত্র চলে গেলেন। মহাপ্রস্থানের পথে যেতে যেতে রেখে গেছেন লাখো মনিমুক্তো। অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব। অনন্য উচ্চতা। ভদ্রতা , সভ্যতা , আন্তরিকতা , শোভন আভিজাত্যর বাঙালি প্রতীক ছিলেন তিনি।
শেষ বিদায়ে পুরো বেল ভিউ হাসপাতাল কান্নার জলে ভেসেছে। সকল ডাক্তারের মাথা নত অভিবাদন , অশ্রু জল , ভালবাসায় বিদায় নিলেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে বেলভিউ হয়ে উঠেছিল জীবন একাঙকিকার মঞ্চ। তাতে জীবনকর্মীর অভিনয় করেছেন ডাক্তাররা। আর নায়ক সৌমিত্র ছিলেন মধ্যমনি। নিখিল বাংলাকে কাঁদাবেন তিনি। কাঁদালেনও ।
বেলভিউর চিকিৎসক বসুধা এক লেখায় জানান এই শোকাবহ অভিব্যাক্তি। তার ভাষায় , আমাদের মাথা নত অভিবাদন জ্যোতিষ্কের কাছে। সূর্যাস্ত কালে জ্যোতিষ্কের পতন দেখলুম চোখের জলের ধারায়।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায় ,
৮৬ বছরে শেষ হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর। রবিবার দুপুর সওয়া ১২টায় মধ্য কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বের বেলভিউয়ে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাঁকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনও উন্নতি কখনও অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল-বন্দি সৌমিত্রর জীবন। এ ছাড়াও একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তাঁর। তার জেরে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। তবুও প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রপচার-সহ নানা ভাবে অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।

কিন্তু শুক্রবার সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। তার পরই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে অনুরাগীদের মধ্যে।

রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর এ দিন সকাল হতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সৌমিত্রর পরিবারের লোকজন। কিছু ক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও যান তাঁরা। কিন্তু পর ক্ষণেই হাসপাতালের তরফে ফের ডেকে পাঠানো হয় তাঁদের। তবে সেইসময় বাবার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘‘বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। তার পর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব আমরা। চিকিৎসকেরা ওখানে থাকতে বলেছেন আমাদের।’’

এর কিছু ক্ষণ পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অশীতিপর অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেলভিউ পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পৌলমীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। পৌলমী বলেন, ‘‘দুপুর ২টোয় প্রথমে গল্ফগ্রীনের বাড়িতে নিয়ে যাব বাবাকে। তার পর টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো হয়ে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাব। সেখান থেকে কেওড়াতলা শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেব আমরা। দিদি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এত যত্ন করে, ভালবেসে, সম্মানের সঙ্গে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন সকলে। বাবা চিরকাল আমাদের মনে রয়ে যাবেন।’’

Feluda’ is no more. ‘Apu’ said goodbye. Farewell, Soumitra (Da) Chatterjee. He has been a legend in his lifetime. International, Indian and Bengali cinema has lost a giant. We will miss him dearly. The film world in Bengal has been orphaned 1/2

— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 15, 2020
Best known for his films with Satyajit Ray, Soumitra Da was conferred with Legion of Honor, Dadasaheb Phalke Award, Banga Bibhushan, Padma Bhushan & several National Awards. A great loss. Saddened. Condolences to his family, the film fraternity & his admirers across the world 2/2

— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 15, 2020
আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সৌমিত্রকে ধরে রাখতে পারলেন বলে বেলভিউয়ে দাঁড়িয়ে এমন আক্ষেপ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ফেলুদা আর নেই। অপু আমাদের বিদায় জানিয়েছেন। বিদায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উনি এক জন কিংবদন্তী। বাংলা, ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র এক জন মহান অভিনেতাকে হারাল। ওঁকে খুব মিস করব আমরা। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ অভিভাবকহীন হয়ে গেল’।

মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের সুবাদে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সৌমিত্র। লিজিয়ঁ অব অনার, দাদাসাহেব ফালকে, বঙ্গভূষণ, পদ্মভূষণ এবং জাতীয় স্তরে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওঁর পরিবার, চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলী এবং অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই’।

শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই। ওঁ শান্তি ।

— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2020
সৌমিত্রের প্রয়াণে এ দিন টুইটারে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি লেখেন, ‘শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। ওঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি’।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়