SAHA ANTOR
Published:2020-09-17 00:36:21 BdST
করোনায় স্বজন হারিয়ে মানসিক বিপর্যয়: কাটাতে ৭ জরুরি পরামর্শ
ডা সুলতানা আলগিন
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট ওসিডি ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
____________________
করোনা কালে স্বজন হারানোর কান্না অনেকে পরিবারে। বাবা মা, ভাইবোন, সন্তান হারিয়েছেন অনেকে। এই বেদনার ভার ভীষণ কষ্টের।
কেউ করোনা ভাইরাসে হারিয়েছেন স্বজন। কেউ অন্য রোগ ব্যাধিতে হারিয়েছেন, পাচ্ছেন প্রচন্ড কষ্ট।
প্রথম দিকে করোনার যখন প্রবল প্রতাপ, প্রচন্ড কড়াকড়ি ; তখন স্বজন হারানো অনেকে দাফন কাফনে অংশ নিতে পারেন নি । শ্মশানের দাহ কার্যক্রমে যেতে পারেন নি। জানাজায় বা শেষ কৃত্যে অংশ নিতে পারেন নি; তাদের অনেকের মানসিক বিপর্যয়ের জের আজও চলছে। তারা নানারকম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে ভাবছেন , দাফন,দাহ, জানাজা, শেষ কৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন নি, তাতে বড় কোন পাপ হল কিনা।
তাদের মৃত আত্মীয়স্বজনের পারলৌকিক কোন সমস্যা হল কিনা; তাদের পরজগতের জীবন শান্তিপূর্ণ ও সুখের হবে কিনা। তাদের পারলৌকিক আজাব বা শাস্তি হবে কিনা।
করোনা ট্রমায় আক্রান্ত এধরণের মানসিক বিপর্যস্তরা এখন আসছেন মনোরোগ চিকিৎসকদের কাছে অনলাইন ভিডিও কনসালটেশনে । কাউন্সেলিং নিচ্ছেন।
বেশীর ভাগ ট্রমা রোগী সময়মত দরকারি চিকিৎসা না নেওয়ায় রোগ ভারে ভীষণ কাবু। তারা বলছেন, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞসহ ডাক্তারদের চেম্বার বন্ধ। অনলাইনে যে নিয়মিত ভিডিওতে চিকিৎসা চলছে, তা তারা জানতেন না।
অনেকে মনে করেছেন , এসব মানসিক সমস্যা মানসিক ডাক্তারদের বিষয় নয়। তারা যে মানসিক পাপবোধে ভুগছেন , তাতে সাইকিয়াট্রিস্টরা কি করবে।
অনেকে বিভিন্ন টোটকা ধর্মব্যবসায়ী তাবিজকবজ অলাদের কাছে গেছে ন। নানা টোটকা নিয়েছেন। কিন্তু তাতে মনের কোন নিরাময় হয় নি। মন আরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এধরণের রোগীদের জন্য , মানসিক বিপর্যয়-এর শিকারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা রাখছি।
১. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল, মানসিক বিপর্যয়ের শিকারদের অতি অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞর জরুরি পরামর্শ নিতে হবে।
অন্য কোন টোটকায় কোন সুফল মিলবে না।
২. একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ঠিক করবেন , রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি। অন্যদের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট হবে। শেষে সাইকিয়াট্রির ডাক্তারদের কাছে আসতে হবেই। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সঠিক রোগ নির্ণয়, সঠিক ডাক্তারের কাছে যাবেন , তত দ্রুত রোগীর কল্যাণ হবে।
কেননা, একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন , রোগী কি মেডিকেশন দরকার।
৩.
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন , তার কি কি মেডিকেশন দরকার। পরে তার কাউন্সেলিং / সাইকোথেরাপি দরকার কিনা , তিনিই জানাবেন।
এবার আরও কিছু জরুরি কথা।
৪. একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ তার নিকট স্বজনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর পর তার পারলৌকিক বিষয় নিয়ে চিন্তিত হবেন, সেটা স্বাভাবিক। এজন্য তিনি ঘরে বসেই নিজ নিজ ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী স্বজনের জন্য দোয়া প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন ।
মৃত স্বজনের কল্যাণের জন্য নিকট জনের গভীর প্রার্থণার চেয়ে বড় কোন কল্যাণ কর্ম নেই।
৫. বিশ্বাসীরা গভীর ভাবে বিশ্বাস রাখতে পারেন , স্রষ্টা নির্ধারিত গন্তব্যেই স্বজনের গমন হয়েছে। যা হয়েছে, তা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই হয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
৬. গোরস্তানে দাফন , শ্মশানে ক্রিয়াকর্মে অংশ নিতে পারেন নি , এ নিয়ে মনের মধ্যে পাথর চেপে কষ্ট পাওয়া নয়। বরং এই কষ্টবোধকে কল্যাণকর্মে রুপান্তর করুন। আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। সম্ভব সাধ্য অনুযায়ী মানুষের বিপদে সহযোগিতা করুন। যারা এই করোনাকালে কাজ পাচ্ছে না, আয় ইনকামের রাস্তা যাদের খোলা নেই; তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহায্য করুন। নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনার মৃত আত্মীয় অবশ্যই আপনার নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাসের সর্বোত্তম সুখময় স্থানে অবস্থান করবেন।
৭. দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে নিজেকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না। দুশ্চিন্তা , অপ্রয়োজনীয় নানা চিন্তা , নিজেকে মানসিক বিপর্যস্ত করে তোলায় মৃত আত্মীয়ের কোন কল্যাণ হবে না। কল্যাণ হবে , তার স্মরণে আপনি যদি কোন ভাল কাজ করেন, তাহলে তিনি সবচেয়ে বেশী ভাল থাকবেন।
আপনার মতামত দিন: