দুটো আশ্চর্য খাদ্যের কথা লিখি: যা সবসময় হাতের কাছেই

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_____________________

দুটো আশ্চর্য খাদ্যের কথা লিখি। ভাগ্যং ফলতি সর্বত্রং।
নারকেলের শাঁস এবং নারকেলের এত গুণ কজন জানেন, বা মানেন!!
যে যুগে মানুষ চাষ শেখেনি, তখনো সমুদ্রতীর জুড়ে উঁচু উঁচু নারকেল গাছ হতো। মানুষ তাদের অভিযোজন তুতো ভাই হনুমান বা বাঁদরের মতো শাখামৃগ ছিল না বলে কচি ডাব খাড়া উঁচু নারকেল গাছের মাথা থেকে পাড়া মুশকিল ছিলো হোমো সেপিয়ান দের পক্ষে।
সেগুলো ইয়েতুতো ভাই রাই খেতো। আর তারপরেও যে বিপুল বিশাল পরিমাণ নারকেল পেকে ঝুনো হয়ে খসে পড়তো মাটি বা বালিতে, সেটিই ছিল এক আশ্চর্য সম্পূর্ণ আহার।
নারকেলের শাঁস, স্বাভাবিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট, এক গ্রামে ৯ ক্যালরি শক্তি দিতে পারে, এমন খাদ্য। আর যেহেতু সম্পৃক্ত চর্বি , হজম হয়ে শরীরে র কাজে লাগতো অনেকক্ষণ ধরে। একবার খেলে বারো থেকে আঠেরো বা চব্বিশ ঘন্টা খিদের উদ্রেক ই হতো না । আর উপরি পাওনা ছিল প্রাকৃতিক পেয় জীবাণুরহিত মিঠে জল, মন আর পেট সবই ভরতো।
আজো কিন্তু ভারি প্রাসঙ্গিক। আমরা নারকেল তেল রান্নায় ব্যবহার করিনে, মালয়ালী রা করেন, তবে মাথায় গায়ে মাখার চল আছেই।
এছাড়া ও আপনি ডায়াবেটিক হোন কি নাই হোন, রোগা বা মোটা হোন, পেটরোগা কি পেটমোটা যাই হোন না কেন নারিকেলের জল সবার কাছে একটি প্রাকৃতিক পানীয়।
এবং নারকেলের শাঁস ও তাই ই। জাতি ধর্মের নিগড় ছাড়িয়ে প্রকৃতির এতোবড়, মহৎ অনায়াস অবদান আর তেমন কই।
এর যশোভাগ্য কিঞ্চিৎ মন্দ। নইলে মাখন, ঘি বা চীজের থেকে এর উপকারিতা কম নয় মোটেই এবং প্রকৃতির এই অবারিত দান একেবারে রেডিমেড, প্রস্তুত খাদ্যবস্তু ও বটে। রান্না, গরম কিছুটি করার দরকার নেই। আর ছোবড়া টি পর্যন্ত আগুন জ্বালানো র কাজে আগে তো লাগতই, আজো লাগে। মশা তাড়াতে, আগুন জ্বালাতে।
তবু, যদিও আজ বাতানুকূল দোকানে লভ্য, যেন কোথাও এর ওপর গ্ল্যামারের দ্যুতি কম পড়েছে। ভাগ্যই মন্দ বলতে পারেন।
অবশ্য পুজো বা শুভ অনুষ্ঠানে র শুরুতে নারিকেল ফাটানোর রীতি টি বহু পুরনো। সম্ভবত উর্বরতার প্রতীক হিসেবে।
আজো। সর্বত্র।।
___________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC