ডা. সুব্রত ঘোষ

Published:
2020-06-22 15:54:28 BdST

যোগাসন করুন: ১১টি উপকার পাবেন:নিরোগ ও দীর্ঘজীবী হোন 


ফাইল ছবি

ডা. সুব্রত ঘোষ

___________________

যোগ শব্দের অর্থ দেহ ও মনের প্রগাঢ় সংযোগ বা ঐকান্তিক মিলন। ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যোগ বা মিলনকে যোগ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সংযোগ যোগ ইত্যাক্তো জীবাত্মা পরমাত্মানমঃ’ ।

যোগ বলতে কি বোঝায়, কার সঙ্গে কার যোগ, সেই যোগ ঘটাবে কে- এ সব বুঝতে হলে নিজের সীমাবদ্ধ গন্ডি ছেড়ে ‘বিশ্ব ঐক্যতাবাদ’ তথা সৃষ্টির মূলের দিকে তাকাতে হবে। কারণ যোগ মানেই আদির সঙ্গে প্রান্তের যোগ, মূলের সঙ্গে শাখার যোগ, বৃহত্তের সঙ্গে ক্ষুদ্রের যোগ।

স্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যে বিধিসম্মতভাবে অঙ্গ সঞ্চালনই ব্যায়াম। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষেরই সুস্থ থাকার জন্য কিছু না কিছু যোগ ব্যায়াম করা দরকার। বলতে হয়, ‘সুষম খাদ্য খাও, যোগাসন কর, জীবনাচার (লাইফ স্টাইল) পাল্টাও, টেনশন (স্ট্রেস্) মুক্ত জীবনযাপন কর।’ টেনশন বা স্ট্রেস্ থেকে মানুষের যে কত রোগ হতে পারে এবং আয়ু কমে যেতে পারে আধুনিক বিজ্ঞানীরা অনেকভাবে দেখিয়েছেন।

যোগাসনকে অনেকে যোগ ব্যায়াম বলেন। আসন আর ব্যায়ামে কিছুটা পার্থক্য আছে। ব্যায়াম হচ্ছে খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম, এ্যক্রোবিক ইত্যাদি। খালি হাতে ব্যায়াম করা যায় আবার যন্ত্রযোগেও ব্যায়াম করা হয়। এর মাধ্যমে অঙ্গ সঞ্চালন হয় বটে। এতে যেমন দ্রুতি আছে তেমন শারীরিক পরিশ্রমও আছে। শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক পূর্ণ প্রশান্তির জন্য যোগাসনের বিকল্প নেই। বলা হয়, জগিংয়ে দশভাগ উপকার হয়, টেনিস খেলায় হয় পনেরো ভাগ, সাঁতারে হয় পনেরোভাগ। কেবল যোগাসনের মাধ্যমে এক শ’ ভাগ উপকারিতা পওয়া যায়। যোগাসন ছাড়া এমন কোন ব্যায়াম নেই যাতে শরীরের অস্থি সন্ধিতে এবং ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী, মূত্রথলী, যকৃৎ, বৃক্ক ইত্যাদি অন্ত্রে ভালভাবে রক্ত সঞ্চালন হতে পারে। যোগাসন ছাড়া এমন কোন ব্যায়াম নেই যাতে মেরুদন্ডে আড়াআড়ি আর লম্বালম্বী চাপ পড়তে পারে এবং মেরুদন্ড দুইদিকে স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। যোগাসন ছাড়া আর কোন ব্যায়ামই নেই যাতে শরীরের প্রয়োজনীয় গ্রন্থিগুলো অধিক সতেজ ও সক্রিয় হতে পারে। তাই যোগাসনকেই সর্বোত্তম বলে ধরা হয়।

প্রশ্ন হলো কেন আপনি যোগাসন করবেন? এর প্রথম ও প্রধান কারণ হলো যোগাসন কখনও আপনাকে কিছু করতে বাধ্য করে না, আপনার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করতে বলে না। অর্থাৎ আপনার ইচ্ছা অনিচ্ছা বা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। শুধু আপনাকে পথ দেখিয়ে দিয়ে বলে, ‘এই পথে চললে তুমি সহজে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।’ যোগাসন আপনাকে হিরো হতে বলে না আবার পালাতেও বলে না। শুধু বলে ‘শুধু একটু সুস্থ থাক।’

যোগাসনে চাই নিষ্ঠা, আন্তরিকতা। আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে যোগাসন কাউকে হতাশ করে না। কিছু-না কিছু ফল পাওয়াই যায়। বলা হয়ে থাকে, ‘স্থিরসুখাসনম্ আসনমঃ।’ অর্থাৎ স্থির শান্ত ও সহজ ভঙ্গিমায় তথা যথাযথ শ্বাস-প্রশ্বাসসহ যে শারীরিক-মানসিক বিভিন্ন অনুশীলন করা হয় তারই নাম আসন। মানব শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্ত্র, টিস্যু, পেশী, গ্রন্থি-উপগ্রন্থিসহ প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথোপযুক্ত ব্যায়ামই আসন। আসন অভ্যাসকারী অনুশীলনের সময় অবশ্যই শারীরিক সুখবোধ ও আরাম তথা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন। আসনের দৈনন্দিন অভ্যাস শরীরকে প্রশান্তি দেয়। মনোদৈহিক রোগ নিরাময় করে। আসন যেহেতু গ্রন্থি-উপগ্রন্থি তথা গ্রন্থিরস (Hormones) নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই আসনের মাধ্যমে মনের বৃত্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়। তাই আসন সাধকের শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা ও মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।

যোগের ইতিহাসঃ

যোগ, এই শব্দতা সংস্কৃত শব্দ ‘ইউয্‌’ থেকে এসেছে যার মানে হল একত্রিত; আত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ। পতঞ্জলির সংঞ্জানুসারে যোগ মানে হল মনের পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা। বিভিন্ন ধরণের যোগ থাকলেও, প্রত্যেক ধরণের যোগের উদ্দেশ্য হল মনকে নিয়ন্ত্রণ বা বশ করা।

যোগ সম্পর্কিত যে ধারণা (বিভিন্ন শারীরিক ভঙ্গিমা ও আসন) বর্তমানে সারা পৃথিবীর নজর কেড়েছে তা সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই প্রচলিত ছিল। তখন থেকেই এটা অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং এখন আমরা যাকে যোগাভ্যাস বলে জানি তা প্রকৃত যোগাভ্যাসের থেকে অনেকটাই আলাদা।

এখানে “যোগ”-এর এই বিবর্তনের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

বেদের আগের যুগ (৩০০০ খ্রীষ্টপূর্বের আগে)

কিছুদিন আগেও পশ্চিমের শিক্ষিতরা এটাই বিশ্বাস করতেন যে যোগ আবিষ্কৃত হয় ৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে যখন বৌদ্ধ ধর্মে সূত্রপাত হয়। যদিও হরপ্পা ও মহেঞ্জোদরোর সর্বশেষ খনন কার্যের ফলে যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে যোগের বিভিন্ন ভঙ্গিমার ছবিও আছে। এর থেকেই বোঝা যায় যে খ্রীষ্টের জন্মের ৫০০০ বছর আগেও যোগাভ্যাসের প্রচলন ছিল। যদিও এই বক্তব্যের লিখিত কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

বৈদিক যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০)

বৈদিক যুগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে যোগাভ্যাস করা হত, মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য এবং দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য। এখনকার যুগের যোগাভ্যাসের থেকে তখনকার ধর্মীয় আচারের যোগাভ্যাস অনেকটাই আলাদা ছিল। বৈদিক যুগের ধর্মীয় আচারগুলোই ছিল যোগের সংঞ্জা - আত্মার সাথে পরমাত্মার যোগ।

প্রি-ক্ল্যাসিকাল বা ঊপনিষদের যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০)

ঊপনিষদ, মহাভারত ও গীতাতে যোগের উল্লেখ দেখা যায়। ভগবৎগীতাতে জ্ঞান যোগ, ভক্তি যোগ, রাজ যোগ ও কর্ম যোগ এই চার প্রকারের যোগেরই উল্লেখ পাওয়া যায়। গীতার উপদেশে শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে যদি কোন ব্যক্তি নম্রতা ও নিষ্ঠার সাথে বাস্তবতাকে খোঁজে তাহলে তিনি উচ্চ মার্গের চেতনা লাভ করেন। সেই সময় যোগ শুধুমাত্র শ্বাস বা ভঙ্গিমা সংক্রান্ত অভ্যাস ছিল না, তা ছিল প্রাত্যহিক জীবনের একটা অঙ্গ।

ক্ল্যাসিকাল যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব ১৮৪ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১৪৮)

ক্ল্যাসিকাল যুগে পতঞ্জলি ১৯৫টা সূত্রকে একত্রিত করে যোগকে একটা সংক্ষিপ্ত আকার দেন। পতঞ্জলির যোগ দর্শন রাজ যোগ নামেই পরিচিত। এর মোট আটটা শাখা আছে - ইয়ম্‌ (সামাজিক বিধি), নিয়ম (ব্যক্তিগত বিধি), আসন (শারীরিক ভঙ্গিমা), প্রাণায়াম (শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি), প্রত্যাহার (চেতনা কে সরিয়ে রাখা), ধারণ (মনঃসংযোগ), ধ্যান ও সমাধি। যদিও আগেকার যোগাভ্যাসে পতঞ্জলি বেশ কিছু শারীরিক ভঙ্গিমা ও শ্বাস বিধির সংযোগ করেছিলেন সেগুলো ব্যবহার করা হত শুধুমাত্র ধ্যান ও সমাধির আনুষঙ্গিক হিসাবে। পতঞ্জলির সূত্রে কোন আসন বা প্রাণায়ামের নাম পাওয়া যায় না।

পোস্ট ক্ল্যাসিকাল যুগ (৮০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দ)

এই সময়ে পতঞ্জলিযোগের অনুগামীরা আসন, ক্রিয়া ও প্রাণায়ামের দ্বারা শরীর ও মনের শুদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে যোগাভ্যাসকে একটা নতুন মাত্রা দেন। এই শরীর ও মনের শুদ্ধি এই যোগাভ্যাসকারীদের সমাধির মত উচ্চ মার্গের সাধনাতে সাহায্য করত। এই ধরণের যোগ কে বলা হয় হট্‌ যোগ।

আধুনিক যুগ (খ্রীষ্টাব্দ ১৮৬৩ পরবর্তী)

শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে যোগকে পৌঁছে দেন। অনেক যোগী পুরুষ যেমন মহর্ষি মহেশ যোগী, পরমহংস যোগানন্দ, রামন মহর্ষি ও আরও অনেকে পশ্চিম বিশ্বকে তাঁদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানে এতটাই অনুপ্রাণিত করেন যে সারা বিশ্বই যোগকে ধর্ম নির্বিশেষে আধ্যাত্মিকতার এক অন্যতম অঙ্গ হিসাবে গ্রহন করেছে, কোন বিশেষ ধর্মর আচার হসাবে নয়।

আধুনিক সময়ে টি কে কৃষ্ণমাচার্য তাঁর তিন শিষ্য বি কে এস্‌ আয়ান্‌গার, পট্টভি জয়েস্‌ এবং টি ভি কে দেসিকাচার কে যোগাভ্যাসের শিক্ষা দেন; তাঁর এই শিষ্যরা সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলেন।

বর্তমানে আমরা যে যোগাভ্যাস করি তা হয়তোবা প্রাথমিক কালের যোগের থেকে অনেকটাই আলাদা, কিন্তু পতঞ্জলির যোগ-দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই এরও সৃষ্টি হয়েছে। আজকাল যে তফাৎটা দেখা যাচ্ছে তা হল আজ আমরা মনের সুস্থতার থেকে বেশী শরীরের সুস্থতার দিকে নজর দিচ্ছি।

আয়ুর্বেদ - জীবন সম্বন্ধিত বিজ্ঞান:

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদ হল পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী ও সূক্ষ্ম গভীর জ্ঞানসমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। শুধুমাত্র কোনো অসুখের নিরাময় পদ্ধতি নয়, আয়ুর্বেদ জীবনের স্ফুরণের বিজ্ঞান। আয়ুর্বেদ এমন এক জ্ঞানের ভান্ডার যা মানুষকে প্রাণবন্ত এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ও তার ভেতরে যে চেতনার পূর্ণ বিকাশ সম্ভব সে কথার উপলব্ধি করায়। এটি ব্যবহৃত হয় প্রকৃতির সহজাত ধর্ম মেনে, যাতে মানুষ তার নিজস্ব দেহ, মন ও আত্মার সাথে প্রকৃতির সঠিক সমতা রক্ষা করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে। এমনকি আয়ুর্বেদ চর্চা আপনার যোগ সাধনাকে উন্নত করে প্রকৃত সিদ্ধিলাভের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এই চর্চার ফলে আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত বিস্তারিত জ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটে ও কিভাবে স্বাস্থ্যদীপ্ত সুস্থ জীবনযাপন করা যায় তার হদিশ পাওয়া যায়।

শ্বাাসের কৌশল (প্রাণায়াম) এবং সমাধি (ধ্যান):

প্রাণায়াম হল ব্যক্তির নিজস্ব শ্বাসের প্রসারণ ও নিয়ন্ত্রণ। শ্বাসের সঠিক অভ্যাস পদ্ধতির সাহায্যে অনেক বেশী পরিমাণে অক্সিজেন আমাদের রক্তে মেশে ও মস্তিষ্কে পৌঁছায় ও এই ভাবে পরিশেষে আমাদের মূল জীবনী শক্তি বা প্রাণশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন যোগাসনের সাথে সাথে আমরা প্রাণায়ামও অভ্যাস করতে পারি। যোগাসন ও প্রাণায়াম এই দুই যোগ পদ্ধতির সমন্বয়কে মনে করা হয় শরীর ও মনের একত্রিত হয়ে নিয়মানুবর্তিতার পথে চলবার ও বিশুদ্ধিকরণের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। প্রাণায়ামের কৌশল আমাদের ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করবার জন্য তৈরী করে দেয়।

পতঞ্জলি যোগ সূত্র:

এই বিভাগে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর একান্ত আগ্রহীদের জন্য প্রাচীন শাস্ত্রের, পতঞ্জলি যোগ সূত্রের উপর কথা বলেছেন, যা আপনাকে যোগের জ্ঞান ও সেই জ্ঞানের উৎস এবং উদ্দেশ্যের বিষয়ে আলোকিত করবে। এই যোগসূত্র উপস্থাপনার লক্ষ্য হল যোগসূত্রের মূলনীতি ও সাধনপদ্ধতিকে আরো বেশী সহজসাধ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা। শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রতিটি সূত্রকে এমন বাস্তবসম্মত ভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপিত করেছেন যাতে যোগসাধনা জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে ওঠে আর জীবনে তার সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য পিছিয়ে পড়ছেন? আপনার আবেগের জন্য ব্যক্তিগত জীবনে এবং কর্মজীবনে কি মাশুল দিতে হচ্ছে? যোগাভ্যাসকে আপনার সঙ্গী করে, সামান্য জীবনধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে আপনার সমস্যার নিষ্পত্তি করতে পারেন সেজন্য যোগ শুরু করুন।

আসনের উপকারিতাঃ

১) দেহের নমনীয়তা বাড়ায়।

২) দেহ ও মনের সমতা রক্ষা করে।

৩) অবাঞ্ছনীয় চিন্তা মনে আসতে দেয় না।

৪) সূক্ষ্মতর ও উচ্চতর সাধনার জন্য মনকে প্রস্তুত ও সাহায্য করে।

৫) গ্রন্থিগত ত্রুটি দূর করে আর গ্রন্থিরস ক্ষরণে সমতা আনে।

এইভাবেই আসনের মাধ্যমে বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।

আসনের নামকরণঃ

ক) কিছু কিছু আসনের ভঙ্গিমা প্রাণীদেহের বিশেষ চলাফেরার মতো। তাই তাদের নামকরণ সংশ্লিষ্ট প্রাণীটির নামানুসারে রয়েছে যেমন- মৎস্যমুদ্রা, গরুড়াসন ইত্যাদি।

খ) কিছু আসন প্রাণীর সংরচনার বৈশিষ্ট্য বা স্বভাবের সমান। তাদের নামকরণ সে অনুযায়ী হয়েছে, যেমন- কুর্মাসন, শলভাসন (শলভা মানে পঙ্গপাল) ইত্যাদি।

গ) কিছু আসন বিশেষ গুণসম্পন্ন হওয়ায় তাদের নামকরণ সেভাবেই হয়েছে। যেমন- সর্বাঙ্গাসন। এতে সমগ্র দেহযন্ত্র উপকৃত হয়।

ঘ) কিছু আসন যিনি প্রথম আবিষ্কার করেছেন তার নামানুসারে হয়েছে। যেমন- মৎস্যেন্দ্রাসন (যোগী মৎস্যেন্দ্রনাথ কর্তৃক আবিষ্কৃত)। এই আসনটিও সমগ্র দেহযন্ত্রকে প্রভাবিত করে।

আসনের প্রকারঃ

আসন প্রধানত দুই প্রকারের- স্বাস্থ্যাসন আর ধ্যানাসন। স্বাস্থ্যাসনের অভ্যাস করা হয় মুখ্যত দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য আর কিছু করা হয় আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য। ধ্যানাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মনের একাগ্রতা আর সাধনা। ধ্যানাসনের উদাহরণ পদ্মাসন, বদ্ধ পদ্মাসন, সিদ্ধাসন, বীরাসন।

দুই প্রকারের মধ্যেই বহুসংখ্যক আসন আছে। যোগীরা সব মিলিয়ে ৫০,০০০ আসন ভঙ্গি আবিষ্কার করেছেন। কোন আসন করলে কি উপকার হয় বা কোন আসন কার করা উচিত একজন যোগাভ্যাসকারীর পক্ষে বুঝে ওঠা অসম্ভব। তাই আসনের ক্ষেত্রে একজন অভিঙ্গ আচার্যের মূল নির্দেশনা অপরিহার্য। বই দেখে আসন করা ও কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শক্তিশালী ওষুধ সেবন করার একই। আচার্যের বিনা নির্দেশনায় আসন অভ্যাস করলে উপকারের চেয়ে বিপদের ঝুঁকি থাকবে।

সর্বাঙ্গাসনঃ

সর্ব অঙ্গের জন্য উপকারী বলে এমন নামকরণ হয়েছে। যারা সবসময় অন্য আসন করতে পারেন না তাদের পক্ষে এই আসনটি অবশ্যই করা উচিত। এতে অন্যান্য আসনের উপকারিতা পাওয়া য়ায়। যাঁরা নিয়মিত আসন করেন তাঁদের কাছে এই আসনটি অতি প্রিয়।

চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’হাত দু’পাশে রাখুন। এবার শ্বাস নিতে নিতে দু’পা উপরে তুলুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। দু’হাতের করতল দিয়ে কোমরের উপরের অংশ ধরুন যেন পা দুটি সোজা থাকে। চিবুক ঠেকে থাকবে বুকের সঙ্গে। এভাবে এক মিনিট থেকে সর্বাধিক ৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবেন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। ৪/৫বার আসনটি করতে হবে। দু’বেলা আসনটি করতে পারলে ভাল হয়।

উপকারিতাঃ

১. বদহজম, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদদ্ধতা সেরে যায়।

২. পেটের ও অন্ত্রের গোলযোগ দূর হয়।

৩. নারীর গর্ভাশয়ের রোগ নিরাময় হয়। গর্ভাশয় সবল হয়।

৪. পায়ুুরোগ ও গলিত কুষ্ঠরোগের পক্ষে পরম উপকারী।

৫. চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও পদতলের রোগ সেরে যায়।

৬. মূত্রাশয়ের সকল রোগ নিরাময় হয়।

৭. পাচনতন্ত্র ও নাড়ীতন্ত্রের পক্ষে উপকারী।

৮. মেরুদন্ড নমনীয় হয়। জড়তা ও দুর্বলতা সেরে যায়।

৯. শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফড়ানি, ব্রঙ্কাইটিস্, টনসিলাইটিস বিশেষ করে থাইরয়েডের বিশেষ উপকার হয়।

১০. শরীরকে সুস্থ সবল রাখে। মনে স্ফুর্তি আসে।

১১. অকাল বার্ধক্য রোধ করে এবং যৌবন দীর্ঘস্থায়ী করে ।

আসুন যোগাসন করি, নিরোগ থাকি এবং দীর্ঘজীবী হই।

ডা. সুব্রত ঘোষঃ চিকিৎসক, কলামিস্ট, যোগ বিশেষজ্ঞ এবং সমাজকর্মী।

_______________________________

 

____________INFORMATION__________________

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়