ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-05-29 18:15:41 BdST

করোনার চিকিৎসায় সর্বশেষ কিছু সুসংবাদ


 


অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসাহিত্যের পথিকৃৎ
_________________________

করোনা সম্বন্ধে কিছু সুসংবাদ ।
একটি প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে , করোনা সংক্রমণ কি দুবার হতে পারে ? একবার সংক্রমণ হলে আবার কি তার হতে পারে সে রোগ । বিজ্ঞানীরা বলছেন , না । কোরিয়ার নামকরা বিজ্ঞানী দলের একটি গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে । বিষয়টি দুভাবে দেখা যেতে পারে
ভাইরাসের কি এতো দ্রুত মিউটেশন হতে পারে? হয়ত আজ সংক্রমণ হল ভাইরাস কি এত দ্রুত মিউ টে শন হল যে শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডি নব রুপী ভাইরাস চিহ্নিত করতে পারলনা ? বিজ্ঞানীরা বলছেন করোনা ভাইরাস এত দ্রুতও মিউ টে শন হয়না । এটি খুব ধীরে মিউটে ট করে /। এটি একটি সুসংবাদ ।
দ্বিতীয় কথা হল পুনঃ সঙ্ক্রমন হতে পারে যখন শরীরে যদি ইম্মুন রেসপন্স তৈরি না হয় । আর তাই একই ভাইরাস শরীরে ঢুকে রোগ ঘটাল । বিজ্ঞানীরা বলেন না এই সংক্রমণে দেহে ইম্মুনিটি তৈরি হয় সুতরাং এও একটি সুসংবাদ ।একবার সংক্রমণ হলে শরীর ভাইরাসের প্রতি ইম্মুন হয়ে যায় , তাই পুনঃ সঙ্ক্রমন হবে না । ভাল সংবাদ ।
আর সেরে উঠা মানুষ সংক্রমণ ক্ষম হবেনা আর অন্যকে সংক্রমণ ছড়াবে না । এরা HERD IMMUNITY বিকাশে সহায়ক হবে । আর এরা পেতে পারে Immunological passport আর এরা ফিরে যেতে পারে স্বাভাবিক কাজে । দক্ষিণ কোরিয়ার এই গবেষণা কে অনুমোদন দিয়েছেন সে দেশের Korean Science and disease control authority .। দেখা গেছে নানা দেশ যেমন চীন , জাপান । ইতালির কিছু লোক সংক্রমণ থেকে সেরা উঠার ১০ হপ্তা পরও টেস্ট পজিটিভ । অথচ করোনা সঙ্ক্রমনের পর পজিটিভ হওয়ার কথা নয় । এরা সেরে উঠেছেন কিন্তু তবু টেস্ট পজিটিভ তবে পুনঃ সংক্রমণ হয়নি তাহলে? এন্টিজেন টেস্ট ভাইরাল আর এন এ এর প্রতি অত্যন্ত সংবেদন শীল( সেন্সিটিভ )। শ্বাস নালী র আস্তরণ কোষে থেকে যেতে পারে ভাইরেল আর এন এ । তাই কফ কাশে আসে বেরিয়ে শ্বাসযন্ত্রের আস্তরণ কোষ আর সে সাথে আর এন এ । মৃত আর এন এ । আর এই আর এন এ সংক্রমণক্ষম নয় । সেরে উঠা কিছু লোকের শরীর থেকে ভাইরাস পরিষ্কার হয়ে যেতে সময় লাগে আর এন্টিজেন টেস্ট এদের চিহ্নিত করে আর পি সি আর মৃত ভাইরাস আর জীবন্ত ভাইরাসের পার্থক্য করতে পারেনা ।
আমাদের প্রশ্নও সেই ভাইরাস কি viable ? এটি কি রোগ ঘটাতে পারে ? অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে ? উত্তর হল না । সুসংবাদ । লক্ষণ উপসর্গ নাই , পুনঃ সঙ্কমন প্রায় অসম্ভব । এটাকে বিজ্ঞানী বলছেন artifact of our testing limitations ।টেস্ট পজিটিভ হলেও এদের সক্রিয় সংক্রমণ ক্ষমতা নাই । এরা অন্যকে সঙ্ক্রমিত করতে পারেনা । আর হয়ত দুই তিন মাসে সব ভাইরাস শরীর থেকে নিষ্কাসিত হবে আর টেস্ট নিগে টি ভ হবে ।
যাদের মনে হবে পুনঃ সংক্রমিত কারন তাদের টেস্ট পজিটিভ বস্তুত টেস্ট চিহ্নিত করেছে মৃত ভাইরেল ডি এন এ । এরা আসলে ফলস পজিটিভ ।
কোরিয়ান বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ প্যানেল বলছেন উপসংহারে , মানুষ পাবে দীর্ঘ মেয়াদী ইম্মুনি টি , যদিও কতদিন তা জানার অপেক্ষায় আমরা । বিশেষজ্ঞ প্যানেল বলছেন সঙ্ক্রমন থেকে সেরে
উঠা ১০০০০জনের মধ্যে ২৯০ জনের পাওয়া গেছে এমন ফলস পজিটিভ আর মৃত ভাইরাস খণ্ডের কারনে এমন পজিটিভ ফল হয়েছিল ।
এ যেন দেহে ভাইরাসের সাথে দেহ প্রতিরোধী সেনাদের সাথে যুদ্ধের পর ভাইরাস ধ্বংসাবশে ষ এর চিহ্ন ।এই মৃত ভাইরাস অপদার্থ এটি মানুষকে সংক্রমিত করেনা অসুস্থ করেনা / তাই ভাইরাস যেমন পুনঃ সংক্রমণ করেনা তেমনি পুন সক্রিয়ও হয়না । কিছু ভাইরাস যেমন এইচ আই ভি , হেপাটাইটিস বি ক্রনিক সংক্রমণ করে এরা এরা প্রবেশ করে কোষের নিউ ক্লিয়াআসে ডি এন এ তে , এরা পুন সক্রিয় হয় ।
পি সি আর মৃত আর জীবিত ভাইরাসের পার্থক্য ধরতে পারেনা তাই মৃত ভাইরাস চিহ্নিত করে আর হয় ফলস পজিটিভ । দেখা যায় দুই মাস পর্যন্ত ভাইরাসের ছোট খণ্ড চিহ্নিত হতে পারে ।
শ্বাস যন্ত্রের আস্তরনের কোষের হাফ লাইফ ৩ মাস ।তাই ভাইরাস কনা নিঃসৃত হতে পারে কয়েক মাস কিন্ত সংক্রমণক্ষম থাকবেনা
সের উঠা লোকের রক্তে থাকে এন্টিবডি ইম্মমুন প্রোটিন , ইম্মুন গ্লবুলিন ।কো ভি ড ১৯ যে পধতির মাধ্যমে একটি নতুন ভাইরাস তৈরি করে তা ঘটে একমাত্র আশ্রয়দাতা কোষে । আর এটি কোষের নিউ ক্লিয়াস ভেদ করেনা । এটি কোষের সাইটো প্লাজমে ঢোকে সেখানে পুনঃ জনন করে ,এক সময় কোষ ভেদ করে বাইরে আসে অন্য কোষ সংক্রমিত করে , , কোষ মরে যায় কিন্তু কোষের কেন্দ্র স্থলে যায়না আর ক্রনিক সঙ্ক্রমণ হয়না । এটি সুসংবাদ ।
কারো কারো শরীরে ইম্মুন শক্তি কমে । আমাদের দেহে আছে বি সেল এরা তৈরি করে এন্টিবডি ইম্মুন গ্লবুলিন । এগুলো কমে গেলেও আছে মেমোরি সেল । এরা সঙ্ক্রমণ স্মৃতিতে রাখে । এরা করোনাভাইরাসের প্রতি অনেক সংবেদন শীল / এদের প্রভাবে তৈরি হয় বি কোষের পুরো ক্লোন । এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পুরো ইম্মুন সিস্টেম ,তৈরি হয় যুদ্ধের জন্য । বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সেরে উঠা লোক যাদের এমন টেস্ট পজিটিভ হয়েছে এদের একজনও অন্যকে সংক্রমিত করেনি । এরা ইম্মুন । একদিন এই ভাইরাস চলে যাবে এই পৃথিবী থেকে । অনেকে বলেছেন এ ভাইরাস আমাদের সঙ্গে থাকবে । অনেকে বলেন ইম্মুনিটি থাকবে ৬ মাস । চলমান গবেষণা একদিন সিদ্ধান্তে আসবে এতদিন আমরা কিছু তথ্য প্রমান ভিত্তিক কথা শুনি । এর পুনঃ সঙ্ক্রমণ হয়না , এর পুনঃ আবির্ভাব কম সম্ভাবনা । আর যাদের হয় তারা হন ইম্মুন । তাই কাজে ফিরতে এদের বাধা নাই , আমরা HERD IMMUNITYর দিকে কি এগুচ্ছি ?
২.

SARSCoV2 টিকার প্রথম হিউম্যান ট্রায়েল ।
চীনের গবেষক রা SARSCoV2 বিরুদ্ধে সম্ভাব্য টিকার প্রথম হিউম্যান ট্রায়েলের প্রাথমিক ফলাফল পরিবেশন করছেন । ফলাফল আশাব্যঞ্জক ।এই টিকা হতে পারে নিরাপদ আর কার্যকর ।
বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে করোনার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য টিকা নিয়ে কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল হচ্ছে । মার্চের গোঁড়ায় প্রথম হিউম্যান ট্রায়েল শুরু হয় , বেজিং এর ন্যাশনেল ইন্স টি টুট , বেজিং ন্যাশনেল ইন্সটি টুট অব বায়টেকনোলজি , আর চীনের ভ্যাক্সিন কোম্পানি কেন সিন বায়লজিক্স এর গবেষকরা আরম্ভ করেন অনুসন্ধান আর গবেষণা ।ট্রায়েলের প্রথম পর্যায় শেষ হল , বিশেষ করে এর নিরাপত্তা টেস্ট করা হল এই ফল রিপোর্ট করা হয়েছে প্রখ্যাত মেডিক্যাল জরনাল ল্যান্সেট এ । এটি নিরাপদ আর সম্ভাব্য কার্যকর । বেজিং ইন্স টি টুটের বিজ্ঞানী আর মুখ্য গবেষক প্রফেসর ওয়েই চেন বলেন এই ফলাফল একটি গুরুত্ব পূর্ণ মাইল ফলক ।
কি ধরনের টিকা ?
ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল এ এই টিকার নাম হল adenovirus type 5 vectored COVID19 (Ad5-nCoV0 vaccine। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার এডেনো ভাইরাস যা আর সংক্রমিত করতে বা পুনঃ জনন হতে অক্ষম , একে ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ।এর সঙ্গে যুক্ত করা হল কো ভি ড ১৯ এর স্পাইক প্রোটিন । ভাইরাসের পৃষ্ঠ দেশে থাকে প্রোটিন স্পাইক প্রোটিন যা ভাইরাসকে সংক্রমিত করতে আর বিস্তার লাভ করতে সাহায্য করে । এরকমের নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহার করে টিকার উদ্দ্যশ্য ইম্মুন সিস্টেম কে SARSCoV2চিহ্নিত করতে আর এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিক্ষা দেওয়া ।
৩.
মশার মাধ্যমে কি ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস ?
মশা ঋতু আসন্ন আর যেহেতু এই রক্ত চোষারা রোগ ছড়ায় তাই অনেকে উদ্বিগ্ন । মশা কি ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস ?
ছোট উত্তর এটি অসম্ভব । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আনুষ্ঠানিক উৎস বলছেন মশার কামড়ে করোনা হয় এর পক্ষে কোন তথ্য প্রমান নাই ।
SARS CoV2 যে ভাইরাস ঘটায় COVID 19 এটি একটি রেসপিরেটারি ভাইরাস যা থাকে শ্বাসযন্ত্রে আর এটি রক্তে পৌছায় না সাধারন ভাবে । এর প্রধান সম্প্রচার হয় ভাইরেল ড্রপ লেট যা বাতাসে আসে যখন সংক্রমিত ব্যক্তি হাচি কাশি দেয় । মশা ভাইরাস সংক্রমিত হতে হলে ভাইরাস থাকতে হবে রক্তে আর মশা যদি সেই রক্ত পান করে তাহলে । কলরেডো ষ্টেট কলেজের ইম্মুনলজি আর মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের ড এমিলে গেলিকতে বলেন এটি রেস্পিরা টারি ভাইরাস থাকে একান্ত শ্বাস যন্ত্রে আর রক্তে যাবার ঘটনা বিরল ।
আর মশা বা কোন পতঙ্গের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যেতে হলে ভাইরাসকে মশার দেহে পুন জননের মধ্য দিয়ে যেতে হবে । করোনা বা কোন পোকা তা করতে সক্ষম নয় মশার দেহে , ।
মশা মানুষের তুলনায় জেনেটি কেলি অনেক ভিন্ন । তাই ভাইরাস মশা আর মানুষ দুজনকেই সংক্রমিত করবে তা অসম্ভব । আমাদের কোষ পৃষ্ঠে ভিন্ন রিসেপ্টার আর কোষের ভেতর পুনঃ জনন মেশিনারি ভিন্ন।
যে ভাইরাস মশার মাধ্যমে মানুষে ছড়াতে পারে তা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস , যে ভাইরাস করে ডেঙ্গু জ্বর আর চিকেঙ্গুনিয়া ভাইরাস । যা সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তে বহমান। ওয়েস্ট নাইলে ভাইরাস মশাকে এমন সংক্রমিত করে যে ভাইরাস অনেক জমা হয় এর লালা গ্রন্থিতে
মশা মানুষকে কামড়ালে ভাইরাস লালা ঠেকে ঢোকে মানব দেহে ।
তবে মশার মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না ।
______________

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়