Ameen Qudir

Published:
2020-03-29 19:35:15 BdST

তবুও আমি ডাক্তার হয়েই জন্ম নিতে চাই



ডা. অসিত মজুমদার
লোকসেবী চিকিৎসক
________________

এজন্মে নয় শুধু, পরজন্মেও আমি ডাক্তার হয়েই জন্ম নিতে চাই। লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের ভালবাসায় সিক্ত আমি সব সময়ই ডাক্তার হয়েই জন্ম নিতে চাই। হাজারো মানুষের অশ্রুসিক্ত নয়ন যখন আনন্দে ছলছল করে আশীর্বাদ করে তখন আমি ডাক্তার হয়েই জন্ম নিতে চাই। মৃতপ্রায় মানুষটি যখন সুস্থ হয়ে হাসিমুখে দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করে যায় তখন আমি আসলে ডাক্তার হয়েই জন্ম নিতে চাই। কোন দেশের সরকার প্রধান যখন বলেন " সাদা গাউন পরে সেবা দেওয়া মানুষগুলো ঈশ্বরতুল্য" তখন আমি সব দুঃখ ভুলে যাই। পিপিই বিষয়টি যতই জরুরী হোক এটা আমাদের মত দেশে প্রায় সম্পূর্ণ নতুন শব্দ। সেখানে পিপিইর হঠাৎ যোগান দেয়া আসলেই কঠিন। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবার মত একটা স্পর্শ কাতরে অবস্থিতরা নিজেদের সুরক্ষা না পেলেও কেউ মাঠ থেকে সরে যায় না কারণ মানুষের জীবন রক্ষায় তারাই শেষ ভরসা, একমাত্র আশ্রয়স্থল ।

আমরা যে যাই বলি না কেন, প্রকৃতপক্ষে জীবনে বেঁচে থাকাটাই হল সৃষ্টিকর্তার এক বড় দান। মানুষের জীবনে প্রথম এবং মানবিক আঁকুতি হল সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন। মহান সৃষ্টিকর্তার দয়ায় সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারলেই তবে আমি বা আপনি যে কোন কাজ করার নিমিত্তে প্রচেষ্টা চালানোর সক্ষমতা লাভ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে বেঁচে না থাকলে আমাদের সকল প্রচেষ্টাই বাস্তবিক অর্থে সবরকমভাবেই অর্থহীন। আর যত রকম কথা বাতাসে ভেসে বেড়িয়ে চলুক না কেন শেষ মুহূর্তে এই বেঁচে থাকবার মত একান্ত দায়িত্বশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে এবং নির্বিচারে করে যান আপনার চিকিৎসক।

মানুষের জীবনের মূল্য কোন কিছু দিয়েই নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এ যে আমার আপনার সবার জন্যই এক অমূল্য সম্পদ। স্রষ্টার এক অকৃত্রিম দান। কাছের লোকজন খোঁজ খবর নেয়, একটু চোখের জল মোছে আর কিছু সান্ত্বনা দেয় কিন্তু এটা সত্য এ সম্পদ যাঁর যায় সে হাড়ে হাড়ে টের পায়। বিশ্বব্যাপী বর্তমান করোনা মহামারীতে কোন কোন দেশে এই অমূল্য সম্পদ রক্ষায় যাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সবাইকে রাষ্ট্র জাতীয় বীর বা শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সুমহান সম্মানে ভূষিত করেছেন কিংবা কেউ কেউ এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় বলে সম্মানী ভাতা তিন চারগুণ বৃদ্ধি করেছেন। এত বড় সম্মান ভাগ্যে জুটুক আর না জুটুক আমি চিকিৎসক হিসেবে মানুষের জীবন বাঁচাতেই আজীবন কাজ করে যেতে চাই।

আসলে আমরা মানুষগুলো জীবনের মূল্য কখনই বুঝতে শিখিনি। জীবনের মূল্য বুঝার পথটা চেনার রাস্তাও কেউ কেউ খুঁজে পাইনি। না হলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সরকার এত বড় ছুটি ঘোষনা করলেও আমরা গণহারে গণপরিবহনে গাদাগাদি করে উঠি। সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, ঘরে থাকাসহ সরকার নির্দেশিত নিয়ম না বুঝে অনেকে পথেঘাটে ঠেলাঠেলি করে হাঁটি। তবে এটা ঠিক করোনার ফলে মানুষের মধ্যে জীবনের মূল্য বুঝার একটা দারুণ প্রবণতা তৈরী হয়েছে। আসলেই জীবনের গুরুত্ব বুঝতে মানুষের মধ্যে এক ধরণের অঘোষিত এবং অবিবেচনাসুলভ আতঙ্কও তৈরী হয়েছে। সেই অমূল্য জীবন রক্ষায় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পেরে সত্যিই আমি ঈশ্বরের কাছে ঋণী।


পরিশেষে করোনা কথাঃ
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে অযথা উল্টাপাল্টা না ভেবে আমাদের উচিত করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে বিষয়ে নিজে সজাগ হওয়া এবং পার্শ্ববর্তী সবাইকে সজাগ করা! ধরে নিন আপনি লক্ষণ বিহীন করোনা সংক্রমিত, এখন আপনার নিজের এবং সামাজিক করণীয়টা পালন করুন! সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, করোনার গতিরোধ করুন, সংক্রমণের জাল ছিন্ন করে দিন! সামাজিক দূরত্ব, হাতধোয়া, ঘরে থাকাসহ সরকার নির্দেশিত সকল নিয়ম মেনে চলুন। আমরা সবাই নিয়ম না মানলে দুর্যোগ ঘনঘটা আরো প্রলয়ংকরী ঝড় হিসেবেই দেখা দিতে পারে। আর নিয়ম মেনে চললে ঘোর অন্ধকার কালমেঘ সরিয়ে নতুন সূর্য উঠবেই পূর্বাআকাশে। পরে বলবেন এত নিয়ম না মানলেও চলত। আসলে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে রোগ ছড়াতে না দেয়াটাই হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। কারণ কোভিড ১৯ এর প্রতিকার আসলেই কখনও কখনও একেবারেই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে আসুন সবাই মিলে প্রতিরোধ করি এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন।

পরিশেষে বলব নিয়ম না মেনে দেখি কি হয় বা আমার কিছু হবে না ; দয়া করে ভুলেও এমন কথা ভাবতে যাবেন না। নিজে নিরাপদে থাকুন, অন্যকেও নিরাপদে রাখুন। দুঃসময়ের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকবই।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়