Ameen Qudir

Published:
2020-02-12 01:29:03 BdST

শহীদ আলতাফ মাহমুদের নাম বাংলাদেশের প্রকাশিত শহীদের তালিকার কোথাও নাই!


 

ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন
____________________

আলতাফ মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের একজন গণ শহীদের নাম!

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি মাস। এই মাসে সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের নাম অসংখ্যবার উচ্চারিত হয়। সুরকার পরিচয়ের আড়ালে আলতাফ মাহমুদের অন্যান্য পরিচয়গুলো চাপা পড়ে যায়।

আপনি কি জানেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন? বন্দী অবস্থায় একাত্তরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে হত্যা করেছিল। একাত্তরে তিনি ক্রাক প্লাটুনের গেরিলা আক্রমনসমূহের কৌশল প্রণয়ন করতেন। সেসব কৌশলগুলো এতটাই দক্ষতার সাথে তিনি প্রণয়ন করতেন, যা বিশ্লেষণ করলে তাঁকে অনায়াসে বিশ্বের অন্যতম সেরা গেরিলা যোদ্ধা বলা যেতে পারে।

আপনি কি জানেন, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই শহীদ আলতাফ মাহমুদের নাম বাংলাদেশের প্রকাশিত বেসামরিক শহীদের তালিকার কোথাও নাই! তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করার পরে ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সচিব আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা মাহমুদকে জানিয়ে দেন, আলতাফ মাহমুদের নাম যেহেতু কোন তালিকায় নেই, সেহেতু তার নাম গণ শহীদের অন্তর্ভুক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ হয়েছিলেন, তাদের সবার নাম তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের তালিকায় এ পর্যন্ত প্রায় উনত্রিশ শো বেসামরিক শহীদের নাম তালিকাভুক্ত করা আছে। সেই তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলতাফ মাহমুদের নাম নাই। অর্থাৎ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তার কোন অফিসিয়াল প্রমান কোথাও নাই!

যে কোন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সন্তানেরা রাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন সম্মানসূচক ভাতা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কোন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা সন্তান সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালে ব্যয়ের উপর ৫০% ছাড় পাবেন। এখানে অর্থটা মূখ্য নয়, তার চেয়ে বড় হলো রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সম্মান এবং স্বীকৃতিটুকু। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পরিবারের সদস্যদের এই সম্মানটুকু প্রাপ্য, এ থেকে তাদের বঞ্চিত করা অন্যায়।

সম্প্রতি শহীদ আলতাফ মাহমুদের একমাত্র সন্তান শাওন মাহমুদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরো হাসপাতালের সবাই তাকে খুব আপনভাবে গ্রহণ করেছেন, পরম মমতার সাথে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সকল চিকিৎসা ব্যয়ের উপরে ৫০% ছাড় পাবার যোগ্য। সম্ভবত তিনি তা পাবেন না, কারণ শহীদ আলতাফ মাহমুদের কোন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সার্টিফিকেট নাই কিংবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের কোন তালিকায় তাঁর নাম নাই। তাঁর পরিবার কখনো কোন সরকারী ভাতাও পেয়েছেন বলে জানা যায় না।

আমাদের কয়েক প্রজন্মের মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ হয়তো ভুলে যাবে, আলতাফ মাহমুদ নামের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন যাকে পাকিস্তানীরা যুদ্ধকালে গ্রেফতার করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামই যেখানে কোন তালিকায় নাই, সেখানে আরো কত হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের নাম যে সময়ের আবর্তে ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে, তা তো সহজেই বোধগম্য।

________________________

ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়