Ameen Qudir

Published:
2020-01-07 22:55:04 BdST

স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইনের খসড়া : সতর্কতার নানা পয়েন্ট জানালেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি


 

ডেস্ক
___________________

স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮ (খসড়া): সমীক্ষণ করে সতর্কতার নানা পয়েন্ট জানালেন সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ-র এডভোকেট
কাজী ওয়াসীমুল হক । তার সমীক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় পাঠকদের জন্য প্রকাশ হল।


#এই আইন সমীক্ষণ করার সময় প্রথমে ভেবেছিলাম কেবল সেকশনের উল্লেখ করে নিজ মতামত দেব, পরে অনুভব করলাম সেভাবে দিলে অনেকের জন্য এই আইনটা বোঝা কষ্টকর হয়ে যাবে, কাজেই মূল আইনের পাশাপাশি আমার মতামত দেয়া হল। মূল আইন হাইলাইটেড এবং ইটালিক ফন্টে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮ (খসড়া)
যেহেতু, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতার সুরক্ষা প্রদান এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন অত্যাবশ্যকীয়:
যেহেতু, দেশে নিরাপদ ও মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ যথাযথ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে ‘The Medical Practice and Private Clinics and Laboratories (Regulation) Ordinance, 1982’ রহিতক্রমে একটি নূতন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেইহেতু, এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হইলঃ
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন-(১) এই আইন ‘স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮’ নামে অভিহিত হইবে; এবং (২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। সংজ্ঞার্থ-- বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থি কোন কিছু না থাকিলে এই আইনে নিম্নরূপ বুঝাইবে-
(১) ‘অপরাধ’ অর্থ ধারা ২১, ২২ বা অন্য কোন ধারার লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহযোগিতা বা প্ররোচনা বা প্রতিপালন না করায় বা প্ররোচনায় সহযোগিতা;
(২) ‘অবহেলা’ অর্থ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবা গ্রহীতার যথাযথ সেবা প্রদান না করা যাহা তাহার পক্ষে বাস্তব অবস্থায় ও মানবিকভাবে পালন করা সম্ভব;
(৩) ‘আদালত’ অর্থ ধারা ২৩(২) বর্ণিত আদালত;
(৪) ‘কর্মস্থল’ অর্থ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর প্রশাসনিকভাবে নির্ধারিত অধিক্ষেত্র;
(৫) ‘কোম্পানী’ অর্থ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এ বর্ণিত কোম্পানী।
(৬) ‘চিকিৎসক’ অর্থ ‘বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৬১ নং আইন) এর অধীনে নিবন্ধিত স্বীকৃত মেডিকেল এবং ডেন্টাল চিকিৎসক;
(৭) ‘চিকিৎসা সহায়তাকারী’ অর্থ নিবন্ধিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা ও আনুষংগিক বিষয়ে সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তি;
(৮) ‘চেম্বার (Chamber)’ অর্থ চিকিৎসা সেবা বা ব্যবস্থাপত্র প্রদানের জন্য ব্যবহৃত স্থান;
(৯) ‘তথ্য’ অর্থ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য;
(১০) ‘দন্ড’ অর্থ এই আইনের ২৪ ধারায় বর্ণিত দন্ড;
(১১) ‘নমুনা’ অর্থ রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত রি-এজেন্ট, রক্ত, মলমূত্র, থুথু, মানবদেহের অংশবিশেষ এবং চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত অন্য কোন নমুনা;
(১২) ‘নার্স’ অর্থ বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কাউন্সিল আইন, ২০১৬ (২০১৬ সনের ৪৮ নং আইন) এর অধীনে নিবন্ধিত নার্স;
(১৩) ‘নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ’ অর্থ পেশাগত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট আইনের শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ;
(১৪) পেশাগত নৈতিকতা (Professional Ethics)’অর্থ সংশ্লিষ্ট পেশার সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহ দ্বারা অবশ্য পালনীয় বিষয়াদি;
(১৫) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(১৬) ‘বেসরকারি চিকিৎসা সেবা’ অর্থ সরকারি বা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ব্যতিত কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানীর মালিকানাধীন বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে অথবা বিনামূল্যে প্রদত্ত চিকিৎসা সেবা;
(১৭) ‘হাসপাতাল’ অর্থ চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত কোন সরকারি বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম, মেডিকেল সেন্টার, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, এ্যাম্বুলেটরী ডে-কেয়ার সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, উহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;
(১৮) ‘ব্যবস্থাপত্র' অর্থ কোন রোগীকে চিকিৎসক প্রদত্ত সেবা প্রদান সম্পর্কিত পরামর্শপত্র;
(১৯) 'মিডওয়াইফ' অর্থ বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কাউন্সিল আইন, ২০১৬ (২০১৬ সনের ৪৮ নং আইন) এর অধীনে নিবন্ধিত মিডওয়াইফ;
(২০) ‘মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট’ অর্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত কারিকুলামের অধীনে ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তি;
(২১) ‘রোগী’ অর্থ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবা গ্রহীতা;
(২২) ‘লাইসেন্স’ অর্থ এই আইনের ধারা-৪ এর অধীনে প্রদত্ত লাইসেন্স;
(২৩) ‘লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ’ অর্থ সরকার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ;
(২৪) ‘সম্পত্তি’ অর্থ কোন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বমূলে মালিকানাধীন বা আইনসঙ্গতভাবে দখলাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি;
(২৫) ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’ অর্থ এইরূপ কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যাহা সুনির্দিষ্ট আইন বা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিচালিত হয়;
(২৬) ‘স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতা’ অর্থ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের জন্য আগত ব্যক্তি;
(২৭) ‘স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি’ অর্থ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধিত স্বীকৃত মেডিকেল এবং ডেন্টাল চিকিৎসক, মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট, নার্স, মিডওয়াইফ, প্রশিক্ষণরত মেডিকেল নার্স ছাত্র-ছাত্রী, চিকিৎসা সহায়তাকারী অথবা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি;
(২৮) ‘ক্ষতি’ অর্থ রোগীর শারীরিক, মানসিক বা কর্ম ক্ষমতা বা আর্থিক ক্ষতি।
উপরে যে সংজ্ঞাগুলি দেয়া হয়েছে তা এই আইনের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য, তবে এই সংজ্ঞাগুলির মাঝে কিছু সমস্যা লুকিয়ে আছে যা পাশাপাশি আলোচনা করা হল।
ধারাঃ ২(১) - ‘অপরাধ’ অর্থ ধারা ২১, ২২ বা অন্য কোন ধারার লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহযোগিতা বা প্ররোচনা বা প্রতিপালন না করায় বা প্ররোচনায় সহযোগিতাঃ
এই আইনে যা কিছু করতে না করা হয়েছে বা করতে বলা হয়েছে, তা করলে বা না করলে যেমন অপরাধ, তেমনি তেমন করায় বা না করায় কাউকে সহযোগীতা বা প্ররোচনা দানও অপরাধ হিসেবে গন্য হবে। আশংকা করা যায় সহযোগীতা বা প্ররোচনার অভিযোগে চাইলে সহজেই কাউকে ফাসানো যেতে পারে।
ধারাঃ ২(২) - ‘অবহেলা’ অর্থ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবা গ্রহীতার যথাযথ সেবা প্রদান না করা যাহা তাহার পক্ষে বাস্তব অবস্থায় ও মানবিকভাবে পালন করা সম্ভব;
প্রথম কথা ‘যথাযথ সেবার’ সংজ্ঞাটা কি? এটা কে কিভাবে নিরুপন করবেন? এই আইনে কোথাও ‘যথাযথ’ সেবার সংজ্ঞা দেয়া নেই। ‘বাস্তব অবস্থা’ না হয় বুঝলাম ‘Practically’ বুঝিয়েছে, কিন্তু ‘মানবিকভাবে’ বলতে এখানে কি বোঝানো হয়েছে? নাকি ‘Practically and Humanely’ র্টামটা Google Translator দিয়ে অনুবাদ করতে যেয়ে এই ঘ্যাট পাকানো হয়েছে?
পয়েন্ট টু বি নোটেড, দেশে যখন আইন পেশাজীবীদের মান আশংকাজনক ভাবে কমছে, সাধারন অপারেশন প্রসিডিওর নিয়েও যখন হাইকোর্টে রিট ফাইল হতে দেখা যাচ্ছে, তখন এইরকম একটি অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করে ডাক্তারদের আরো বেশী বিপদে না ঠেললে হয়না?
আরেকটা কথা টেন্স বা কাল নিয়ে ভুল কেন? বলা উচিত ছিল পালন করা ‘সম্ভব ছিল’, ‘সম্ভব’ না, কারন কেস যখন ফাইল হবে তখন হয়তো পালন করা সম্ভব, কিন্তু ঘটনা ঘটার সময় যা হয়তো অসম্ভব ছিল। আপনারা যারা ভাবছেন ভাষার সামান্য এই গড়বড়ে কি আসে যায়, তাদের সবিনয়ে জানাচ্ছি, আসে যায়! আইনে ভাষার ভুলের কারনে অপরাধী যেমন ছাড়া পেয়ে যেতে পারে, নিরাপরাধ লোকও তেমনি ফেসে যেতে পারে।
ধারাঃ ২(৬) - ‘চিকিৎসক’ অর্থ ‘বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৬১ নং আইন) এর অধীনে নিবন্ধিত স্বীকৃত মেডিকেল এবং ডেন্টাল চিকিৎসক;
মতামতঃ খুবই ইন্টারেস্টিং সংজ্ঞা আসলে, যারা বেশ কিছুদিন ধরে এই কোয়ালিফিকেশন না থাকা সত্বেও নিজেদের ডাক্তার বা চিকিৎসক বলে দাবী করে আসছে, ‘চিকিৎসক’ হিসেবে তাদের এখানে সম্পূর্ন অস্বীকার করা হয়েছে।
ধারাঃ ২(৮)- ‘চেম্বার (Chamber)’ অর্থ চিকিৎসা সেবা বা ব্যবস্থাপত্র প্রদানের জন্য ব্যবহৃত স্থান;
মতামতঃ লোকেরা যখন মাঠে-ঘাটে-খাটে এবং ফোনে ব্যবস্থাপত্র চায় বা তাদের যখন সেখানে দেয়া হয়, চেম্বারটা তখন কোথায় থাকবে? নাকি সেটাই তখন ‘চেম্বার’ হয়ে যাবে?
ধারাঃ ২(১৩)- ‘নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ’ অর্থ পেশাগত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট আইনের শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ;
মতামতঃ ব্যাখ্যা করার কিছু নেই, জাস্ট মনে রাখুন, কিছু পরেই এই ‘কতৃপক্ষের’ জাহেরী-বাতেনী সব গুনাবলী টের পাবেন।
ধারাঃ ২(১৪)- ‘পেশাগত নৈতিকতা (Professional Ethics)’ অর্থ সংশ্লিষ্ট পেশার সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহ দ্বারা অবশ্য পালনীয় বিষয়াদি;
মতামতঃ দেশী আইনের সাথে যদি ম্যাচ না করে? দেশী রুগীদের যদি আন্তর্জাতিক সনদ মেনে চলার মত রেস্ত না থাকে? প্লাস আন্তর্জাতিক সনদ যদি দেশী আইন বা সনদের সাথে বিভেদ তৈরী করে? বিশেষ করে যখন ধারা ১৭ তেমন একটি বিরোধপূর্ন অবস্থান তৈরী করতে পারে বলে মনে করার যুক্তিযুক্ত কারন আছে।
ধারাঃ ২(১৫)- ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
মতামতঃ বিলিভ ইট অর নট, এই আইনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন সংজ্ঞার মধ্যে এটি একটি! এই লেখায় পরে টের পাবেন কেন!
ধারাঃ ২(১৬)- ‘বেসরকারি চিকিৎসা সেবা’ অর্থ সরকারি বা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ব্যতিত কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানীর মালিকানাধীন বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে অথবা বিনামূল্যে প্রদত্ত চিকিৎসা সেবা;
মতামতঃ বেসরকারী সংস্থার সংজ্ঞা থেকে ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলি’ কে কেন বাদ দেয়া হয়েছে সেটা পরিস্কার না, কারন এই আইনে দেয়া ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’র সংজ্ঞায় কিছু ফাক আছে। বাই দি ওয়ে, ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিলেও সেটা কিন্তু এই আইনে পড়বে। কাজেই এখন থেকে ফ্রী চিকিৎসা সাবধানে, টিপে টিপে।
ধারাঃ ২(১৭)- ‘হাসপাতাল’ অর্থ চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত কোন সরকারি বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম, মেডিকেল সেন্টার, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, এ্যাম্বুলেটরী ডে-কেয়ার সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, উহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;
মতামতঃ এই সংজ্ঞাটা সাবধানে নেবেন কারন প্রচলিত অর্থে হাসপাতাল না এমন বেশ কিছু জিনিস এখানে হাসপাতাল হিসেবে বলা হয়েছে এবং সেই রকম দায়ভার চাপানো হয়েছে। যেমন ধরুন ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, এ্যাম্বুলেটরী ডে-কেয়ার সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক।
ধারাঃ ২(২৫)- ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’ অর্থ এইরূপ কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যাহা সুনির্দিষ্ট আইন বা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিচালিত হয়;
মতামতঃ এখানে কিছু প্যাচ আছে, ধারা ২(১৬) হতে আমরা জানি যে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এই আইনে বেসরকারী চিকিৎসা সেবা হিসেবে গন্য হবেনা। সুনির্দিষ্ট আইন বিষয়টা বোঝা গেল কিন্তু ‘সমঝোতা স্মারকে’র কথায় এত বিশাল ফাক রাখার মানে কি? সমঝোতা স্মারকের এক পক্ষ যে বাংলাদেশ সরকার থাকতে হবে, সেটা মাথায় আসেনি? এখন আইন যেভাবে আছে, স্কয়ার আর ল্যাবএইড মিলে একটা সমঝোতা স্মারক (আমাদের ভাষায় MOU বা Memorandum of Understanding) সাইন করে স্কয়ারকে একটা হাসপাতাল চালানোর দায়িত্ব দিলে টেকনিক্যালি সেটা এই আইন অনুসারে ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’ হয়ে ‘বেসরকারী চিকিৎসা সেবার’ সংজ্ঞার বাইরে চলে যাবে।
ধারাঃ (২৮)- ‘ক্ষতি’ অর্থ রোগীর শারীরিক, মানসিক বা কর্ম ক্ষমতা বা আর্থিক ক্ষতি।
মতামতঃ পরিমাপ আর নির্নয় করার পদ্ধতি কি হবে? এটা আসলে একটা সিরিয়াস ইস্যু কারন এই আইনে কোর্টের হাতে ক্ষতিপূরনের অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
৩। আইনের প্রাধান্য-আপাতত: বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।
৪। বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনঃ
(১) সরকার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত লাইসেন্স (Licence) গ্রহণ সাপেক্ষে বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন করা যাইবে;
(২) বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, উহার শ্রেণী ও মান নির্ধারণ বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে;
(৩) এই আইন কার্যকর হইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ইত:পূর্বে স্থাপিত সকল বেসরকারি হাসপাতালকে এই আইনের অধীনে লাইসেন্স গ্রহণ করিতে হইবে; এবং
(৪) উপধারা ৪(৩) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করিবার নিদের্শ প্রদান করিতে পারিবে;
তবে শর্ত থাকে যে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বা কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসঙ্গত কারণে ২০ (বিশ) দিন অতিরিক্ত সময় প্রদান করিতে পারিবে।
ঈশ্বর স্বাক্ষী, এর চেয়ে ‘ঘুষ বান্ধব’ এবং বাস্তবতাবর্জিত ধারা আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি, ধারা ৪(৩) লক্ষ্য করেছেন? এই আইন পাশের ৯০ দিনের মধ্যে এর আগে লাইসেন্স পাওয়া সকল হাসপাতালকে আবার এই আইনের অধীনে যে বিধি হবে, সেটা অনুসারে লাইসেন্স নিতে হবে, পয়েন্ট টু বি নোটেড, হাসপাতাল বলতে অনেক কিছুই বোঝানো হচ্ছে আর সেই বিধি কেমন হবে এখনো কারো জানা নেই।
আচ্ছা বিধি না হয় কিছু একটা হবে, কিন্তু টাইম লাইনের ব্যাপারে কি হবে? প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে যে এই আইন ‘পাশের’ (আবেদনের না কিন্তু!) ৯০ দিনের মধ্যে হাসপাতালদের লাইসেন্স নিতে হবে, ওকে ফাইন, কোন হাসপাতাল আবেদন করার কতদিনের মধ্যে (সব ঠিক থাকলে) ‘কতৃপক্ষ’কে আবেদনকারীকে লাইসেন্স দিতে হবে, তা কিন্তু এই আইনে কোথাও নেই!
তারমানে কোন হাসপাতাল আবেদন করার পরে যদি কতৃপক্ষ ‘ব্যস্ততার’ অজুহাতে বা স্রেফ নিজের অযোগ্যতার কারনে বা দুষ্ট লোকের ভাষায় ‘ঘুষ খাবার উদ্দেশ্যে’ সেই ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স দিতে না চায় বা না দেয়, তখন সেই হাসপাতাল কতৃপক্ষের হাতে ঠিক কোন রেমেডিটা থাকবে? কতৃপক্ষ লাইসেন্স কেন দিচ্ছে না সেটার জবাবদিহিতার কোন ব্যবস্থা যেমন এই আইনে নেই, তেমনি কতৃপক্ষ লাইসেন্স না দিলে বা দিতে না চাইলে করনীয় কি, সেটাও এই আইনে কোথাও বলা নেই।
সোজা ভাষায় বলি, এই ধারার মাধ্যমে সরকার এমন এক কতৃপক্ষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, যারা এই আইন পাশের ৯০ দিনের মধ্যেই লাইসেন্স ঠেকিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করে নিতে পারবে। এটা হতে যাচ্ছে ঘুষখোরদের অভয়ারন্য, তার চেয়ে বড় কথা কতৃপক্ষ লাইসেন্স দিতে অস্বীকার করলে কতৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করার কোন বিধান এই আইনে নেই। যে দেশে ঢেউ গোনার চাকুরী পেলে মানুষ কোটিপতি হয়ে যায়, সে দেশে এই আইন এভাবে চালু হলে তার পরিনতি কি হবে, সেটার ব্যাখ্যা নিতান্ত অপ্রয়োজনীয়। বাই দি ওয়ে, যারা খেয়াল করেননি, লাইসেন্স না থাকলে কতৃপক্ষ সেই হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে পারবেন।
৫। লাইসেন্স প্রদান ও ফি নির্ধারণ-
(১) সরকার বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান করিবে;
(২) সরকার, সময়ে সময়ে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের লক্ষ্যে লাইসেন্স প্রদান এবং নবায়ন ফিস নির্ধারণ করিতে পারিবে; এবং
(৩) লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন সংক্রান্ত শর্তাবলী এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
মতামতঃ নো কমেন্ট, জবাই দেবার জন্য গরু কোন দিকে কাত করে শোয়াবে, সে সর্ম্পকে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, তবে উল্লেখ থাকে যে, ধারা ৫ লঙ্ঘন করলে, উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী অনধিক ৩(তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা ১(এক) বছর কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
৬। পরিদর্শন, প্রবেশ, তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা- (১) সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক নিযুক্ত কোন কর্মকর্তা বা কমিটি কোন হাসপাতালে যেকোন সময়ে প্রবেশ, পরিদর্শন, রেজিস্টার ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বা নমুনা বা কাগজপত্র পরীক্ষা এবং উহার উদ্ধৃতাংশ জব্দ করিতে পারিবে; তবে শর্ত থাকে যে, রেজিস্টার বা কাগজপত্রের উদ্ধৃতাংশ কোন রোগীর রোগ সংক্রান্ত হইলে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগী বা তাহার আইনসংগত অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত উহা সংগ্রহ করা বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাইবে না।
উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত পরিদর্শনে এই আইনের বিধান লংঘিত হইয়াছে মর্মে প্রতীয়মান হইলে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ-
(ক) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণের বা প্রতিপালনের জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে এবং উক্ত হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ উহা পালনে বাধ্য থাকিবে;
(খ) সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল প্রদত্ত সেবা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা মানসম্মত না হইলে এবং এই আইন, বিধি বা তদধীন প্রদত্ত নির্দেশ বা লাইসেন্সের শর্তাবলী ভঙ্গের প্রকৃতি যদি এইরূপ হয় যে, উক্ত বেসরকারি হাসপাতালকে কারণ দর্শানাের সুযোগ প্রদান করা সমীচীন নহে, তৎক্ষেত্রে জনস্বার্থে উক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিতপূর্বক তাৎক্ষণিকভাবে উহা বন্ধ করিয়া দিতে পারিবে।
মতামতঃ ধারা ৬(খ) অসৎ সরকারী র্কমচারীদের অপব্যবহারের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠবে, কোন বেসরকারি হাসপাতাল প্রদত্ত সেবা জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘ক্ষতিকারক’ বা ‘মানসম্মত’ কিনা বা ঠিক কি কারনে তেমন বিবেচনা করা যায়, বিধি বা তদধীন প্রদত্ত নির্দেশ বা লাইসেন্সের শর্তাবলী ঠিক কিভাবে ভঙ্গ করেছে, বেসরকারি হাসপাতালকে কারণ দর্শানাের সুযোগ প্রদান করা সমীচীন নয় ঠিক কি কারনে, ‘জনস্বার্থ’ বলতে এখানে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে বা প্রদত্ত সেবা ঠিক কিভাবে বা কেন ক্ষতিকর বা মানসম্মত নয়, তার ব্যাখ্যা প্রদানের কোন দায়িত্ব এই আইনে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মচারীর নেই, সোজা ভাষায় বলতে গেলে পরিদর্শনে আসবে, বলবে আপনাদের (বেসরকারি হাসপাতালের) প্রদত্ত সেবা জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বা ‘মানসম্মত’ নয়, আপনাদের কারন দর্শাতে আমি বাধ্য না (জী আইনেই আছে, আরেকবার দেখে নিন), ‘জনস্বার্থে’ আপনাদের লাইসেন্স স্থগিতপূর্বক তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করে দিচ্ছি।
হ্যা সরকারী কর্মচারীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ আইনে আছে, কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? কোন হাসপাতাল কি মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে ফাইট করবে নাকি জাস্ট এই কর্মচারীকে ঘুষ খাইয়ে ব্যবসা চালু রাখবে? বলা যায় ভাল সম্ভাবনা আছে এই আইনের বলে বেশ কিছু সরকারী কর্মচারী মাসোহারা পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কেবল কলাগাছ না, কমপক্ষে বটগাছ হবে!
৭। লাইসেন্স (Licence) বাতিল-(১) কোন বেসরকারি হাসপাতাল এই আইন, বিধি বা তদধীন প্রদত্ত নির্দেশ বা লাইসেন্সের কোন শর্ত ভঙ্গ করিলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হইবে;
(২) উপধারা ৭(১) অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে লাইসেন্স গ্রহণকারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ (পনের) দিনের সময় প্রদান করিতে হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত বিবেচিত হইলে আরও ১৫ (পনের) দিন সময় বৃদ্ধি করা যাইবে।
(৩) উপ-ধারা ৭(১) অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল হইলে উক্ত সময়ে চিকিৎসাধীন রোগীকে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা সুবিধা সম্বলিত অন্য কোন হাসপাতালে নিজ দায়িত্বে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
৮। আপীল ও পুনর্বিবেচনা-(১) ধারা ৬ এবং ৭ অনুযায়ী প্রদত্ত আদেশে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হইলে, উক্ত আদেশ জারির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সরকারের নিকট আপীল করিতে পারিবে;
(২) সরকার আপীল আবেদন প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করিবে;
(৩) উপধারা ৮(২) এ প্রদত্ত আপীল আদেশের বিষয়ে ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে সরকারের নিকট পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাইবে; এবং
(৪) আপীল বা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবো,
মতামতঃ ধারা ৮(৪) অগ্রহনযোগ্য, সরকারী স্বেচ্ছাচারীতার অসীম সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে প্লাস কি কারনে আপীল গ্রহন করা হচ্ছেনা তার ব্যাখ্যা পাবার কোন অধিকার এই আইনে দেয়া হয়নি।
৯। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সেবার মান ও যথার্থতা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সেবার মান ও প্রদত্ত সেবার যথার্থতা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
১০। বেসরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদানের শর্ত-(১) সরকারি বা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকুরিরত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি-
(১) নির্ধারিত অফিস সময়ে বা পালাক্রমিক দাপ্তরিক দায়িত্ব (Roster Duty) পালনের সময়ে কোন বেসরকারি হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করিতে পারিবেন না;
(২) উপধারা ১০(১) এ বর্ণিত সময় ব্যতিত ও ছুটির দিনে স্ব-স্ব কর্মস্থলের জেলার বাহিরে বেসরকারি হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ফিস গ্রহণপূর্বক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হইবে; তবে শর্ত থাকে যে, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে যেকোন সময় উক্ত অনুমতি স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে।
(৩) কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্তরূপ কোন ব্যক্তিকে অফিস সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদানের জন্য নিয়োজিত করিতে পারিবে না।
মতামতঃ ধারা- ১০(১) সরকারী হাসপাতালে ডাক্তারদের ডিউটি সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদান না করতে দেয়ার আইন সর্ম্পূন ঠিক আছে, এটাই উচিত। জেনে রাখা ভাল আইনের ধারা-১০ (১) লঙ্ঘন করলে অনধিক ১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারাঃ ১০(২), এটা দেয়ার কারন? বাংলাদেশের আর কোন পেশার কাউকে তো এভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে না, ডাক্তারদের এভাবে বাধা দেবার কারন কি? সরকারের যদি টাকার এতই খাই থাকে, তাহলে সেটা ডাক্তারদরে উপর আয়কর এবং ভ্যাট চাপিয়ে মেটালেই পারে, ‘নিয়ন্ত্রনকারী কতৃপক্ষের’ হাতে ডাক্তারদের প্র্যাকটিসের ‘অনুমোদন’ ইস্যু তুলে দিয়ে তাদের ঘুষ খাবার পথ খুলে দেবার তো কোন কারন দেখিনা।
পয়েন্ট টু বি নোটেড, এই তথাকথিত ‘কতৃপক্ষ’ যে কেবল অনুমোদন দেবার জন্য ‘চা-পানি’ খাবে তাই না, অনুমোদন বজায় রাখার জন্যও নিয়মিত খাবে, হাজার হোক তাদের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে ‘জনস্বার্থে’ যেকোন সময় উক্ত অনুমতি ‘স্থগিত’ বা ‘বাতিল’ করার।
উল্লেখ থাকে যে, ধারা ১০ (২) লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল অনধিক ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে; অনাদায়ে ৩(তিন) মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে; তারমানে পারমশিন নেই এমন কোন চিকিৎসককে কোন বেসরকারি হাসপাতাল কাজে রাখবে না, একইে বলে হাতে না মেরে ভাতে মারা।
১১। চিকিৎসা সেবা চার্জ বা মূল্য বা ফি নির্ধারণ-(১) সরকার, সময়ে সময়ে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল প্রদত্ত সেবা এবং রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি পৃথকভাবে নির্ধারণ করিবে;
(২) চিকিৎসকের ফি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আদায়যোগ্য চার্জ বা মূল্য বা ফি’র তালিকা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা চেম্বারের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করিতে হইবে; এবং
(৩) চিকিৎসা সেবা বাবদ আদায়কৃত চার্জ বা মূল্য বা ফি’র রশিদ সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহীতা বা তাহার অভিভাবক বা তাহার প্রতিনিধিকে প্রদানপূর্বক উক্ত রশিদের অনুলিপি সংরক্ষণ করিতে হইবে।
মতামতঃ নো কমেন্ট। তবে মনে রাখবেন ধারা ১১ লঙ্ঘন করিলে অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রযোজ্য হইবে; অনাদায়ে ১৫ (পনের) দিন বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে।
১২। ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা প্রদান-(১) ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতাদের জন্য ন্যূনতম বসার স্থান থাকিতে হইবে;
(২) রোগী পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকিতে হইবে; যাহা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে;
(৩) যথাযথ কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত বা অনুমোদিত ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী ব্যতিত অন্য কোন যোগ্যতার বিবরণ সাইনবোের্ড বা নামফলক বা ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ করা যাইবে না;
(৪) স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তির ব্যবস্থাপত্র ও ভিজিটিং কার্ডে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধনকারী সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত নিবন্ধন নম্বর লিপিবদ্ধ থাকিতে হইবে;
(৫) সেবা গ্রহীতার রোগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে জেন্ডার বিবেচনায় একজন সহায়তাকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করিতে হইবে। তবে জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে যৌক্তিক পরিস্থিতিতে এই আবশ্যিকতা শিথিলযোগ্য হইবে;
(৬) উপধারা ১১(১) এর বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা তৃতীয় পক্ষের সংগে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রহণ বা প্রদান করা যাইবে না; এবং
(৭) ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা প্রদান সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
মতামতঃ ধারা ১২(১)- আচমকা রুগী বেশী আসলে করনীয় কি? চেয়ার অনুযায়ী রুগী বসিয়ে বাকিদের রাস্তায় বের দেয়া? টেকনিক্যালি ঝুম বৃষ্টিতেও বাড়তি রুগীদের রাস্তায় বের করে দিলেও এই আইনে অন্যায় হবেনা, কিন্তু দাড় করিয়ে রাখলে হবে, উল্লেখ থাকে যে ধারা ১২ (১) লঙ্ঘন করিলে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারাঃ ১২(৬)- টেস্ট বাবদ কমিশন খাওয়া নিষিদ্ধকরন। উল্লেখ থাকে যে, ধারা ১২(৬) লঙ্ঘন করিলে অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে; অনাদায়ে ১(এক) মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারা ১২(৭)- কুমীর আসতে যাচ্ছে, চিকিৎসকদের সাবধান হওয়া উচিত। চামে সর্বোচ্চ ফী নির্ধারন করে দিতে পারে।
১৩। রোগী বা রোগীর অনুসংগীকে (Attendant) চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিতকরণ ও তথ্য প্রদান- রোগী বা রোগীর অনুসংগীকে প্রয়োজনীয় ও বিকল্প চিকিৎসা, চিকিৎসাকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধের গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা পদ্ধতি, অস্ত্রোপচারের জটিলতা, চিকিৎসা প্রদানের সম্ভাব্য সময় ও চিকিৎসা সম্পর্কিত খাতওয়ারী ব্যয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি অবহিত করিবেন।
মতামতঃ কিভাবে? মৌখিক নাকি লিখিতভাবে? রুগী বা রুগীর লোকেরা যদি এতকিছু না বুঝে? আসলেই বুঝতে পেরেছে কিনা, তার প্রমান কি হবে? বাংলাদেশে রুগীর সাথে তো আসে এক বস্তা লোক, এর মধ্যে কাকে কাকে বোঝাতে হবে? প্লাস যতক্ষন লাগবে বোঝাতে, সেটা কি বাংলাদেশের পক্ষে বাস্তবসম্মত হবে? হাসপাতালে এই দায়িত্ব সরাসরি ডাক্তারের উপর না রেখে এমন কোন কর্মচারীর উপর রাখা উচিত যে ডাক্তারের সাথে কোলাবোরেশনে এটা করতে পারবে, বা এমন কোন ডাক্তার যার মূল কাজই হবে কেবল এসব ব্যাখ্যা করা। এক হিসাবে এটা হলে ভাল হয়, পরে রুগীর লোকেরা ডান-বাম দাবী করতে পারবে না।

১৪। জরুরী স্বাস্থ্য সেবা প্রদান-(১) লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রত্যেক হাসপাতালে ন্যূনতম জরুরী সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্বলিত জরুরী বিভাগ থাকিতে হইবে।
(২) উপধারা ১৪(১) এ বর্ণিত জরুরী সেবাসমূহ এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
মতামতঃ এই আইনের ধারা ২(১৭) অনুযায়ী অন্যান্য কিছুর সাথে ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, এ্যাম্বুলেটরী ডে-কেয়ার সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, এসবও কিন্তু ‘হাসপাতাল’, মানে এসবেও ‘ন্যূনতম জরুরী সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্বলিত জরুরী বিভাগ’ থাকতে হবে। আবার সেই তথাকথিত জরুরী বিভাগে কি কি থাকতে হবে, সেটা আবার নির্ধারন করা হবে এই আইনের অধীনে যে বিধি প্রনয়ন করা হবে তা দিয়ে। তো এখন এই আইনে যারা ‘হাসপাতাল’ হিসেবে ট্যাগ খেয়েছেন, ‘নূন্যতম জরুরী সেবা’ দেবার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
উল্লেখ থাকে যে ধারা ১৪ লঙ্ঘন করলে, ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রযোজ্য হবে; অনাদায়ে ৩(তিন) মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।
১৫। মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান-(১) বেসরকারি হাসপাতালসমূহ মুক্তিযোদ্ধা রোগীর সম্মানার্থে বিনামূল্যে শতকরা ২ ভাগ শয্যা এবং দরিদ্র রোগীদের জন্য শতকরা ৩ ভাগ শয্যা সংরক্ষণ করিবে;
(২) বেসরকারি হাসপাতালসমূহ মুক্তিযোদ্ধা এবং দরিদ্র রোগীদের হ্রাসকৃত মূল্যে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করিবে; এবং
(৩) এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে উপধারা ১৫(২) এর বিধান কার্যকর হইবে।
মতামতঃ হাততালি পাবার জন্য ঠিক আছে, বাস্তবে মূলত অবাস্তব, মুক্তিযোদ্ধা না হয় সার্টিফিকেট দিয়ে বোঝা যাবে, যদিও সবার সার্টিফিকেট নেই, আর ‘গরীব’ কিভাবে বোঝা যাবে? বিধিতে কি গরীবের সংজ্ঞা দেয়া থাকবে? বলাবাহুল্য যেকোন অবস্থায় মোটামুটি ব্যবসাবুদ্ধি সম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এই ধারাকে বাইপাস করতে পারবে, কিভাবে সেটা খুলে বলার কোন দরকার দেখিনা। :::পরের অংশ নীচের লিঙ্কে :

কাজী ওয়াসীমুল হক
এডভোকেট
সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।

Head
Wasimul Haque & Associates
Legal Adviser & Head of Legal Wing
Bangladesh Doctor’s Foundation (BDF)


দ্বিতীয় ও বাকি অংশ পরবর্তী প্রকাশনায় পাঠ করুন।
এখানে লিঙ্ক দেয়া হল।
বাকী অংশের লিঙ্ক :https://daktarprotidin.com/manusher-jonno/4687/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%B8%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AE-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B6

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়