Ameen Qudir
Published:2019-11-29 05:48:18 BdST
১৫০ রোগী, ৩০জন মা হওয়ার অপেক্ষায় : বুলেট উপেক্ষা করে তাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন যারা
ডা. অঞ্জলি স্বর্নালী
______________________
আমরা প্রনাম জানাব দুই চিরঞ্জীবি স্বাস্থ্যসেবী অঞ্জলি কুলঠে ও মাধুরী রাহাতেকে। অঞ্জলি কুলঠে ও মাধুরী রাহাতে হলেন, সেই ১৫ জন নার্সের অন্যতম যারা ১২ বছর
আগে ১৫০ জন রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, আজমল কাসভ ও আবু ইসমাইলের একে ৪৭ এর বুলেট থেকে। ২৬/১১/২০০৮; দিনটা তাঁরা কোনদিন ভুলবেন না। সেদিন তাঁদের নাইট ডিউটি ছিল। মুম্বাই এর কামা হাসপাতালের এন্টিনেটাল ওয়ার্ডে। ডিউটি করতে করতে হঠাৎ; তারা যেন কিসের শব্দ পেলেন। ভয়ংকর শব্দ। ফটফট ফটফট শব্দ।গুলির শব্দ। সিনেমার মত নয়। ছুটে গেলেন কাঁচের জানালায় দেখেন, তাদের হাসপাতালের দুই রক্ষীর রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আর লাফিয়ে হাসপাতালে ঢুকছে দুই জঙ্গি। পরে তাদের তারা সনাক্ত করেছিলেন, আজমল কাসাব এবং আবু ইসমাইল হিসাবে। ভয়ার্ত তাঁরা ছুটে গিয়ে বন্ধ করে দেন; ওয়ার্ডের দুটো দরজা। কারণ তখন তাঁদের দায়িত্বে; ১৫০ জন রােগী আর তার মধ্যে ২০ জন মেয়ে যারা প্রত্যেকে মা হওয়ার অপেক্ষায়।জঙ্গি দুজন একের পর এক ফ্লোর পার করছে। গুলি চালাচ্ছে। গ্রেনেড ছুঁড়ছে। হাড়হিম করা পরিস্থিতি। কিন্তু তাঁরা জানেন; যে তাঁদের ভয় পেলে চলবে না। যে নার্সের পােশাক তাঁরা পরে আছেন; তাতে জড়িয়ে আছে প্রত্যেক মা এবং তাদের গর্ভস্থ সন্তান রক্ষার দায়িত্ব। তারা ঠিক করে নিলেন। আমাদের বাঁচতে হবে আর সবাইকে বাঁচতে হবে। নার্সরা প্রথমেই সকল মেয়েদের নিয়ে গেলেন; ওয়ার্ডের একেবারে কোণায় প্যান্ট্রি ঘরে। তারপর ডাক্তারদের সতর্ক করলেন; এবং খুব গােপনে ফোন করলেন পুলিশকে।প্রত্যেকটা মুহূর্তে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র থেকে গুলি নিক্ষেপে; কেঁপে কেঁপে উঠছে গোটা হাসপাতাল। তার সহকর্মী এক আয়ার গায়ে লাগল গুলি; জানালা ভেদ করে। রক্তাক্ত কলিগকে শুশ্রুষা করছেন। ওই ভয়াল অবস্থায় এক মেয়ের গর্ভযন্ত্রনা উঠলে; তাকে ধরে ধরে লেবার রুমে নিয়ে গেছেন। কারণ প্রায় সব আলো নেভানাে ছিল। বাঁচার জন্য। সন্ত্রাসীদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য। চিকিৎসক এবং সহকর্মীদের সহায়তায় নতুন প্রাণী পৃথিবীর আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এক ফ্লোর থেকে আর এক ফ্লোরে গেছেন; জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আজমল কাসভ এবং আবু ইসমাইল এর সামনে। পরে গেলে; বিদায় নিতে হবে পৃথিবী থেকে।চারপাশে সন্ত্রাসের আঁধার; আর তার ভেতরে নতুন প্রাণের আগমন। মাত্র একটি টিউব লাইটের আলোয়। একমাত্র তাদের সাহসের জন্য সম্ভব হয়েছে পুরো ব্যাপারটা। তাদের ডিউটি ড্রেসই হয়ে উঠেছিল; তার শক্তির উৎস। দুজনের নেতৃত্বে ওই ১৫ জন নার্সই প্রাণ বাঁচিয়েছেন ১৫০ জন মানুষের।
আপনার মতামত দিন: