Ameen Qudir

Published:
2019-07-02 07:33:49 BdST

মরণাপন্নদের বাঁচাতে স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড নিয়ে জেলে গেলেন যে মহান ডাক্তার




ডেস্ক
__________________________

মুখ দেখে রোগীর চিকিৎসা করতেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ১৯৩০ সালে ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন দিল্লি থেকে। তারপর তাঁকে আনা হয় কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। জেলে ওই সময় বন্দি ছিলেন বর্ধমানের এক গান্ধীবাদী শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য। বিজয়বাবু লিখেছেন, তিনি বর্ধমান জেলে থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। সর্ব ক্ষণ জ্বর থাকত। এই সময় তাঁকেও আনা হয় আলিপুর জেলে।
বিধান রায় জেলে এসেছিলেন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। সাধারণত এটা করা যায় না, কিন্তু সম্ভবত বিধান রায়ের ব্যক্তিত্বের সামনে ওঁরা না বলতে পারেননি। ফলে ডাঃ বিধান রায়ের ডিউটি পড়ল জেলের হাসপাতালে। কিছু দিনের মধ্যেই বোঝা গেল জেলে রোগীর মৃত্যুসংখ্যা কমে গেছে। নিউমোনিয়া, টাইফায়েড ইত্যাদি কিছু কঠিন অসুখের ওষুধ জেলে থাকত না, সে সব বিধান রায় তাঁর দাদা সুবোধ রায়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে নিজের টাকায় আনাতে শুরু করলেন। প্রায়ই দেখা যেত ছ’ফুট ছাড়ানো লোকটা স্টেথো গলায় দিয়া জেলের হাসপালে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন, পেছন পেছন চলেছেন জেলের সরকারি ডাক্তার।
গান্ধীবাদী সেই শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বিধানবাবু চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার বিছানার পাশে বসলেন। মিনিট কয়েক চেয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর অসুখ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। মুখের দিকে তাকালাম। একটু যেন চিন্তিত বলে মনে হল। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে মুখখানা আবার প্রফুল্ল হয়ে উঠল। হেসে বললেন, ‘কিছু না। সেরে যাবে।’ মনে হল এর মধ্যেই অসুখের সব কিছু বুঝে ফেলেছেন। বিজয়কুমার ভট্টাচার্যই এরপর জানিয়েছেন, কোনও রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে বিধান রায় কিছু ক্ষণ সেই রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। সেই অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি রোগ নির্ণয় করতেন।
ওই জেল হাসপাতালে তখন ১১০ জন রোগী। একদিন জেলের ডাক্তার বঙ্কিমবাবু (উপাধি লেখেননি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য) কোনও কারণে আসতে দেরি করছেন। বিধান রায় একাই এক এক করে ১১০ জন রোগীকে দেখলেন। তার পর ছুটতে ছুটতে বঙ্কিমবাবু এসে হাজির। কাঁচুমাঁচু মুখে বন্দি বিধান রায়কে বলছেন, স্যার একটু দেরি হয়ে গেল। বিধান রায় হেসে বললেন, না না ঠিক আছে, রোগী আমি দেখে নিয়েছি, আপনি ওদের টিকিটগুলো আনুন, পথ্য আর ওষুধটা আমি বলে দিচ্ছি। বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, আধঘণ্টা আগে দেখা ১১০ জন রোগীর প্রত্যেকের জন্য ওষুধ, পথ্য প্রায় মুখস্থ এক এক করে বলে গেলেন ডাঃ বিধান রায়। এমনই অসামান্য স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর।

বিধান রায় জেলে থাকাকালীন পেয়ে গেলেন বন্দি কানাই গাঙ্গুলিকে। কানাইবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডক্টরেট করেছিলেন জার্মানি থেকে। খুব ভালো জার্মান ভাষা জানতেন তিনি। তিনি বরিশালের শঙ্কর মঠের স্বামী প্রজ্ঞানন্দের বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। পরে গ্রেফতার হন ব্রিটিশ পুলিশে হাতে। এই কানাই গাঙ্গুলির কাছে জেলের ভিতর বিধান রায় শুরু করলেন জার্মান ভাষা শেখা। এই নিয়ে কানাইবাবু লিখেছিলেন, ছ’মাস জেলে থাকাকালীন বিধান রায় একদিনও বাদ দেননি জার্মান শেখার ক্লাস। এবং যখন জেল ছেড়ে চলে গেলেন, তখন তাঁর এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেছে।
জেলে বিধান রায়ের খাবার আসত ওয়েলিংটনের বাড়ি থেকে। আলিপুর জেলে তখন সিনিয়র ডেপুটি জেলার ছিলেন রায় সাহেব অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। সব রাজনৈতিক বন্দির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি থেকে খাবার এলে আগে তা ‘টেস্ট’ করে দেখবেন ডেপুটি জেলার। তার পর তা বন্দিকে দেওয়া হবে। এক রাতে অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে বসে খবর পেলেন, বিধান রায়ের খাবার আসেনি। ছুটে গেলেন জেলে। গিয়ে দেখলেন, খাবার এসেছিল, কিন্তু তা এত সুস্বাদু ছিল যে টেস্ট করতে করতে সবটাই খেয়ে ফেলেছেন ডেপুটি জেলার। লজ্জার মাথা খেয়ে অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বিধান রায়ের ঘরে গিয়ে সব জানালেন। বিধান রায় হেসে বললেন, আগে বললে তো আমি ওর জন্যেও খাবার পাঠাতে বলে দিতাম। অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বিধান রায়কে বললেন, তিনি বিধান রায়ের বাড়িতে ফোন করে দিয়েছেন, নতুন করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। সেই খাবার এল রাত ১১টায়। বিধান রায় খেলেন। তার পর বাড়ি গেলেন রায় সাহেব অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।

 


লেখা তথ্য বঙ্গদর্শণ পত্রিকা ও শুভাশিস মৈত্র

 

সোমনাথ সেনগুপ্ত জানান,

______________________

 

ডাক্তার বিধান রায় মজার ছলে তাঁর পেশেন্টদের বলতেন :

- অসুখ হলে অব্যশই দেরি না করে ডাক্তার দেখবেন কারণ ডাক্তারদের তো বাঁচতে হবে !

- ডাক্তাররা যে ওষুধ লিখে দেবেন তা অব্যশই কিনবেন কারণ দোকানদারদেরও তো বাঁচতে হবে !

- ওষুধ কিনে বাড়ি ঢুকেই ওগুলো অব্যশই ফেলে দেবেন কারণ আপনাকেও তো বাঁচতে হবে !

এটা শুনে চেম্বারে হাসির রোল উঠতো !!

আরেকটা ঘটনার কথা বলি :

এক ভদ্রলোক সকাল বেলায় ডাক্তার রায়ের কাছে এসে কাকুতি মিনুতি করে হাতে পায়ে ধরে বললো তার বাড়িতে যেতে , কারণ তার ছেলের tuberculoses হয়েছে ! তখন বিধান রায়ের টিবি চিকিৎসাতে ভারত জোড়া হাতযশ ছিলো ! তিনি রোগীর বাড়ি গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠছেন আর শুনতে পাচ্ছেন একটি বাচ্ছা ছেলের কাশির শব্দ, হঠাৎ তিনি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করলেন ! ছেলেটির বাবা তো অবাক, তাকে দেখে ডাক্তার রায় বললেন তাঁর ছেলেকে দেখে কিছু লাভ নেই, চারিদিকে থমথমে ভাব দেখে তিনি মৃদু হেসে বললেন ছেলেটি যে গরুর দুধ খায়, সেই গরুর টিবি আছে সম্ভবত, ছেলেটির কাশি সাধারণ ঠান্ডা লেগে , তিনি ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, কিনে এনে খাওয়ালেই ঠিক হয়ে যাবে ! সত্যি দিন তিনেক পরে ছেলেটি সুস্থ হয়ে ওঠে !

 

উনি মুখ‍্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার বাসভবনে প্রতি রবিবার বিনা পয়সায় রুগী দেখতেন ।অসাধারণ intuition ছিলো ওনার মধ্যে।একবার গাড়ি তে কলকাতায় ফিরছেন ,হঠাৎ লক্ষ্য করলেন সামনের বাস থেকে এক যাত্রী নামতে গিয়ে পড়ে গেছে ,মাথার পিছন দিকে লেগেছে।তিনি সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার কে গাড়ী থামাবার নির্দেশ দিলেন ।এই বার সেই যাত্রী তো ধুলো ঝেড়ে হাটা শুরু করে দিয়েছে ,ডা: রায় তাকে অবিলম্বে হাসপাতাল যাবার পরামর্শ দিলেন এবং স্থানীয় একজন কে বললেন সব খবর যেন পরের দিন তাকে দ‍্যান।কিন্তু সেই যাত্রী যাকে এত পরামর্শ দান ,তিনি কোনো পাত্তাই দিলো না এবং যথারীতি হাসপাতালের চৌহদ্দী মাড়ালেন না যার ফলে ২৪ ঘন্টার মধ‍্যে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।ডা:রায় লক্ষ্য করেছিলেন কি ভাবে লোকটি পড়েছিলেন ,এবং তিনি যে সন্দেহ টা করেছিলেন সেটাই ঘটেছে,internal hemorrhage.

ডাক্তার রায়ের ক্ষুরধার কৌতুক রস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসাধারণ পান্ডিত্যর সমন্বয়ে বারে বারে আরো অনেক জায়গাতে প্রকাশিত এবং প্রতিফলিত হয়েছে ! ডাক্তার রায় বলতেন কঠিনতম অসুখেও রোগীর মনকে হালকা করতে হাস্য রসের dose রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক গুন বাড়িয়ে তোলে কারণ বেশির ভাগ অসুখই 70% শারীরিক আর 30% মানসিক !

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়