Ameen Qudir

Published:
2019-06-13 01:37:37 BdST

পাঁচ টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সঙ্গে ওষুধ ফ্রি বাংলাদেশেই




সংবাদদাতা
__________________________

ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে ২ টাকা , ৫ টাকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেবার খবর ডাক্তার প্রতিদিনে দেখে হাজারো পাঠক হা হুতাশ করেন , এমন ডাক্তার কবে পাবে বাংলাদেশ।
অথচ বাংলাদেশেই আছে নামমাত্র মূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেবার অনন্য উদযোগ। বাংলাদেশী মিডিয়ার কৃপণতার কারণে সে সব খবর আসে না জনগনের সামনে।
উত্তর জনপদের নওগাঁ সদর হাসপাতাল । এই হাসপাতালে মাত্র পাঁচ টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সেবা, সেই সঙ্গে ফ্রি দেয়া হচ্ছে ওষুধ।

হাসপাতালটিকে বদলে দেয়ার জন্য যার নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. রওশন আরা খানম। তিনি ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে যোগ দেন। এরপর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করা অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও ডাক্তাররা।

তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর নোংরা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলায় হাসপাতালে আর আগের মতো দুর্গন্ধ নেই। এছাড়া তিনি যোগ দেয়ার আগে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগীদের মেঝেতে থাকতে হতো। বর্তমানে হাসপাতাল ওয়ার্ডের বারান্দার করিডোরে ৭৫টি শয্যা বানানো এবং শয্যার সঙ্গে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধুমাত্র পরিবেশগত পরিবর্তনই নয় রোগীদের সেবার মানও বৃদ্ধি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। সময়ে অসময়ে ডাক্তারদের চেম্বারে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে অবাধ চলাচল প্রতিরোধ করেছেন।

তিনি নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে হেল্প ডেস্ক বা অনুসন্ধান সেবা চালু করেছেন। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার ফলে বহির্বিভাগে সময় মেনে ডাক্তাররা রোগী দেখছেন। অপারেশন থিয়েটারে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মেজর ও মাইনর অপারেশন চলছে। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা একজন মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ও অন্যান্য কর্মচারীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। ফলে একদিকে যেমন রোগীরা দালাল দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে না অন্যদিকে রোগীদের পকেটের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে না। এতে সাধারণ রোগীরা স্বল্প খরচে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন।

এছাড়া হাসপাতালে আসা অনুদানের মাধ্যমেও সম্পদ বৃদ্ধি করে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি মেরামতসহ নতুন মেশিন যুক্ত করছেন। ফলে দিনদিন এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার এমন প্রচেষ্টায় হাসপাতালের রাজস্ব আয়ের পরিমান প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে হাসপাতাল থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হতো বর্তমানে সেখানে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো আয় হচ্ছে।

হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের রবিউল ইসলাম জানান, মহিলা রোগীদের এতোটাই ভিড় যে টিকিট দিতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় সাতশ’ থেকে আট শতাধিক রোগী হয়।

জেলার রাণীনগর উপজেলার পারইল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শাহিনা বেগম জানান, পাঁচ টাকার বিনিময়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পাচ্ছি। এছাড়া হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধও পাওয়া যায়। তাই কিছু হলেই জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসি।

হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. দিলরাজ বানু জানান, অন্যান্য রোগীর চেয়ে মহিলা রোগীর সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীদের ভাল সেবা দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রওশন আরা খানম বলেন, সবার সার্বিক সহযোগিতায় হাসপাতালের মানোন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামী দিনে সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে নওগাঁবাসীকে একটি সুন্দর ও আধুনিক হাসাপাতাল উপহার দিতে চাই। পুরনো হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ১০০টি। এছাড়া নতুন ৮তলা ভবনের ১৫০ বেড বিশিষ্ট হাসপাতাল আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন তিনি।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়