Ameen Qudir
Published:2019-05-01 22:23:15 BdST
আজ মে দিবসে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের জীবনের কাহিনি বলি শোনো
লেখকের অনুরোধে মডেল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। লেখক ছবি প্রকাশে অনিচ্ছুক।
ডা. ইশতিয়াক হোসেন দীলু
_________________________
আজ মে দিবসে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের জীবনের কাহিনি বলি শোনো ।
আমিই সেই এমবিবিএস ডাক্তার। আমার কথাই বলব। বলার আমি মহান মে দিবসকেই বেছে নিয়েছি। কারণ আমি জানি , এই দিনটি শ্রমজীবি , কর্মজীবি , পরিশ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস। এজন্য এই মহান দিনে শিকাগোতে হে মার্কেটে রক্ত ঝরেছিল।
রক্ত ঝরে চলেছে আমারও। আমার মত এমবিবিএস ডাক্তারদেরও।
কিন্তু কার কাছে সেই কষ্টের কথা বলব। আজ সকালে দেখলাম , লাল র্যালি করছে দেশের লড়াকু শ্রমিক সমাজ।
তারা বলছে, সঠিক মজুরি দিতে হবে। তারা বলছে, ৮ ঘন্টার বেশী পরিশ্রম করানো যাবে না।
কিন্তু আমরা ডাক্তাররা কার কাছে সঠিক মজুরির দাবি করব।
কার কাছে সুস্থ কর্ম পরিবেশ দাবি করব। কার কাছে আমার নিরাপত্তা চাইবো।
প্রথমে আমি আমার কর্ম পরিচয় বলি। ঢাকার প্রধানতম হাসপাতালে আমি অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছি। পাশ করার পর যে কয়েকটা বিসিএস পেলাম দিয়েছি। হয় নাই। রহস্যজনক কারণে। অনেকে বলে, আমি আল্লাহওয়লা মানুষ, তাবলিগের লোক বলে কোথাও সুবিধা করতে পারছি না। তারপরও আল্লাহর রহমত আমার ওপর কম বর্ষণ হয় নাই। ছাত্র জীবনে আব্বা আম্মার ইচ্ছায় সংসার করার হক আদায় শুরু করেছি।
আমি সকাল বেলা উঠি। ফজরের নামাজ পড়ি। আল্লাহর দয়ায় আমার ৪টি সন্তান হয়েছে। এই সন্তানদের ভরণ পোষন , স্ত্রী পরিবার পালন আমার নৈতিক দায়িত্ব।
সে দায়িত্ব আমাকে অবশ্যই পালন করতে হবে।
ফজরের নামাজ পড়ে আমার স্ত্রী সন্তানদের মাদ্রাসার জন্য তৈরী করে দেয়। একটি সন্তান কোলে। তাই তার পক্ষে সন্তানদের মাদ্রাসায় নেয়া আসা সম্ভব হয় না। বাজার সওদা আমাকেই করতে হয়। সকাল সকাল সন্তানদের মাদ্রাসায় দিয়ে আমি দৌড়ের ওপর থাকি। বাজারে ঢু মেরে কিছু কেনা কাটা করে বাসায় পৌছে দেই। দৌড়ের ওপর হাসপাতালে পৌছাই। সেখানে দেরী হলেই মেডাম, স্যরদের রক্তচক্ষু। তাই দেরী করি না। সেখানে থেকে আবার সন্তানদের বাসায় পৌছানোর জন্য টেনশনে থাকতে হয়। ফাকে সে কাজ করি। আবার দৌড়ে হাসপাতালে আসি।
অনারারী হিসাবে যে অনারিয়াম পাই তাতে ঢাকা শহরে হাসপাতালের কাছে থাকা সম্ভব না। দুই রুমের বাসা অনেক কষ্টে পেয়েছি। সেটার ভাড়া গুনতেই টাকা শেষ। কেননা, সবদিক সামলাতে আমাকে হাসপাতালের কাছে থাকতেই হবে।
তাই আমাকে একটা ক্লিনিকে কাজ করতেই হয়। ৭/৮ ঘন্টা ডিউটি করি। কোন ফাকি নাই। হালাল রুজি। আলহাম দুলিল্লাহ। আমার দিন গুজরান হচ্ছে।
আমার সেজন্য প্রতিদিন ১৬-১৭ ঘন্টা কাজ করতে হয়। তারপর পড়াশোনা। পরীক্ষা যা দেই টাকা পয়সা যোগানোর চাপে পাশ হচ্ছে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। আশা করি হবে।
আমার বউ মুসল্লি। সে মাঝে মধ্যেই চাপ দেয়, ডাক্তারি ছাড়তে। অথচ তার বাবা আমাকে ডাক্তার দেখেই মেয়ে দেন। বউ বলে, রসুলুল্লাহ স: এর দামাং ধরো। ছোট খাট ব্যবসা বানিজ্য করো। মুদি দোকান দাও। তাতেই ডাক্তারির চেয়ে বেশি হালাল রুজি হবে।
আমারও মাঝে মধ্যে আফসোস হয়। ডাক্তারি লাইনে কেন আসলাম। আব্বার ব্যবসার লাইনে থাকলে অনেক বেশী হালাল রুজি হত।
কিন্তু শ্বশুর আব্বা , নিজের বাপ মা , আত্মীয় স্বজনদের চাপে ডাক্তারি লাইনে আছি।
আলামদোলিল্লাহই আছি। মাশাল্লাহ। মনে কোন কষ্ট খেদ নাঈ।
আজ সকাল বেলা মে দিবসের রেলী দেখলাম। তাই কথাগুলো বললাম। আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করো। যেসব লোকজন ডাক্তারদের গালি গালাজ করেন, তাদেরও মাফ করো।
_____________________
ডা. ইশতিয়াক হোসেন দীলু । ঢাকার একটি বৃহৎ সরকারি হাসপাতালে অনারারী ও বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার।
আপনার মতামত দিন: