Ameen Qudir

Published:
2019-02-10 21:04:13 BdST

বিশ্লেষণ উটের মূত্র পান ও গোমূত্র পান নিয়ে বিতর্ক : বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন


 

 


ডেস্ক, ঢাকা
_______________

উটের মূত্র পান করলে নাকি ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য রোগ সারে। গোমুত্র পান করলেও নাকি ক্যানসার সহ নানা রোগ সারে। এ নিয়ে সৌদী আরবসহ আরব বিশ্বে এবং ভারতবর্ষে ইতরবর্গে বিশ্বাস ও পানের নাকি হিড়িক পড়েছে। বোতলে করে বিক্রিও হচ্ছে উটমুত্র ও গো মুত্র। এসবের সপক্ষে ভিডিও চিত্র প্রকাশ হচ্ছে। ভয়ঙ্কর এই মুত্র পান । অশিক্ষিত ও স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকতার আওতার বাইরের ভারতীয় ও আরবদের মধ্যে এই মুত্র পান চালু অর্থনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় বিশ্বাস-কুসংস্কারের কারণেই। এ নিয়ে শিক্ষিত বর্গে ট্রলিং চলছে। আর চলছে সাম্প্রদায়িকদের পরস্পর বিরোধী অপপ্রচার। কিছু দিন পর পর এ নিয়ে গুজব প্রচারের ঝড় বইয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু চিকিৎসক এ নিয়ে কি বলছেন , আমরা সেটাই তুলে ধরছি। আমরা এলোপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম ও হোমিওপ্যাথি ইউনানী আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ফায়জুল হক-এর বক্তব্য সংগ্রহ করে তুলে ধরলাম।

বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম---------------------------

সম্প্রতি অনলাইন নিউজে ভারতে গো-মুত্র পানের হিড়িক পড়ার খবর বেশ প্রচার পাচ্ছে। যারা গ্লাসের পর গ্লাস ঢোক ঢোক করে হলুদাভ গো-মুত্র পান করে তৃপ্তির লম্বা ঝাঁঝালো ঢেকুর তুলছেন, তাদের ধারনা গো-মুত্র পানে- জ্বর, গ্যাস্ট্রিক আলসার, খিচুনী, লেপ্রসি, ক্যান্সারের মতো রোগ সেরে যায়। আর মনে প্রানে এটা বিশ্বাস করে লিটারে লিটার গো-মুত্র কিনে পান করার হিড়িক পড়ে গেছে ভারতের সর্বত্র।

কি আছে এই গো-মুত্রে?

আসলে গো-মুত্র আর মানব মুত্রের উপাদান প্রায় একই। শতকরা ৯৫% ভাগ পানি, কিছু মিনারেলস যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আর কিছু হরমোনাল মেটাবলাইটস। যে গো-মুত্র পানের হিড়িকে বাজারে মুত্রের দাম দুধের দামের তিন গুন সেটা সাধারণ গো-মুত্র নয় কিন্তু। এটা হলো 'গর্ভবতী গাভীর' মুত্র। গরু গর্ভবতী থাকায় তাতে নাকি এসব রোগের উপশমকারী উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। তাই দুধ রেখে দলে দলে গ্লাসে গ্লাসে গো-মুত্র পানের হিড়িক পড়েছে।

যদিও ভারতের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন এর কোন সায়েন্টিফিক ভিত্তি নেই তবুও "স্রেফ বিশ্বাস" বলে এই লংকা কান্ড ঘটে চলেছে ভারতে। কে শুনে কার কথা। কথায় আছেনা, "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর"।

অনেক আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ বলছেন ভিন্ন কথা। যেহেতু ধরনীতে সবুজ গাছ গাছালিতে সব রোগের উপাদান বিদ্যমান , আর গরুর প্রধান খাদ্য এই সবুজ ঘাস, তাই তাদের হাইপোথিসিস, গো-মুত্রে গাছ গাছালির ভেষজ গুনাগুন থাকাটাই স্বাভাবিক।

বিশ্বের কোথায় কোথায় গো-মুত্র পান হয়?

গো-মুত্র পান যে কেবল ভারতেই তা কিন্তু নয়। এই কর্মটিতে মুসলিম প্রধান দেশ নাইজেরিয়া এবং বৌদ্ধ প্রধান দেশ মায়ানমার ও অগ্রগামী। গো-মুত্রে ক্যান্সার, খিচুনি, লেপ্রসি, পেপটিক আলসার এর উপশম হয়েছে কিনা খবর টি নিশ্চিত করা না গেলেও, গো-মুত্র পানের বিষক্রিয়ায় অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশে গো-মুত্রের ভবিষ্যৎ

ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় গো-মুত্রে যদি সত্যিই এসব রোগের উপশমকারী কোন কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ডেইরি ফার্ম বাজার জাত শুরু করবে, 'গরুর খাঁটি মুত' অথবা 'খাঁটি গরুর মুত'। আর গো-মুত্র পান করে টিভি বিজ্ঞাপনে 'তৃপ্তির ঝাঁঝালো ঢেকুর' তুলে ৭'৫ রিখটার স্কেল মাত্রার 'চিংড়ি মাছের মতো' একটি লম্ফ দিয়ে ঈষৎ স্থুলাকার সুন্দরী মডেলগন বলে উঠবেন,
'টলার, শার্পার, স্ট্রংগার....।


ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
ডি এম সি, কে-৫২

সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

 

প্রসঙ্গ :উটমূত্র পান

হোমিওপ্যাথি ইউনানী আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ফায়জুল হক তার ব্লগে এক লেখায় বলেন,

ইন্ডিয়াতে গোমুত্রের অনেক চাহিদা , পঞ্চগব্য নামে আলাদা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি আছে ইন্ডিয়াতে । এ নিয়ে অনেক গবেষনা হচ্ছে , অনেক জার্নালে তাদের গবেষনা কর্ম প্রকাশিত হয়েছে যে গরুর প্রসাব ও উটের প্রসাব খাওয়া ঠিক কিনা।
.
পঞ্চগব্য বলতে গব্য বা গরুর ৫টি বা পঞ্চ উপাদান বোঝানো হয় । যেমন ১) দুধ ,২) ঘি ,৩) দধি , ৪) গোবর ও ৫) গো মূত্র বা গরুর প্রসাব ।
পঞ্চ গব্য সম্পর্কে হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে
‘ গাবম পবিত্রাম চ রসায়ণম চ পাথয়াম চ হৃদয়াম , বলম বুদ্ধি সয়াত আয়ুর্পুদম রক্তবিকারী হরি, ত্রিদোষম , হৃদগাম বিশ্বপাহাম সয়াত ।।‘
.
অর্থঃ পঞ্চগব্য গঙ্গাজলের মতো পবিত্র বিরাট অমৃত রহস্য, ইহা গ্রহনে হৃদয়রোগ দূর করে, মানসিক শান্তি – বুদ্ধি দেয়, জীবনের অভিমুখ উন্নততর হয়, দূষিত রক্তকে পরিশুদ্ধ করে , যা বিভিন্ন বিকারের কারন । ত্রিদোষ ভারসম্য করে , হৃদয়ের বিকারে দূর হয় আর বিষের প্রভাব কমায় ।
.
আমাদের কাছে যেমন তিব্বে নববি সাঃ বা প্রফেটিক মেডিসিন বা নবী সাঃ এর চিকিৎসা পদ্ধতি অতি শ্রদ্ধার , ভক্তির । আমরা পরম শ্রদ্ধার সাথে তা মান্য করি ( যেমন কালোজিরার তেল , মধু , সিনা পাতা , জয়তুনের তেল , জমজমের পানি ইত্যাদি ) , তেমনি হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় চিকিৎসা ( বেদের অংশ ) তেমন পরম শ্রদ্ধার সাথে , ভক্তির সাথে পালন করে থাকে । সেটা আমার ভালো না লাগলেও নো প্রবলেম , যার ভালো লাগবে তাঁর ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধের কারনে সে মানবে ।
.
পঞ্চগব্য অনেক রিসার্চপেপার পড়লাম , লেখা পড়লাম ( গুগোলে সার্চ দিলে আপনারা পাবেন ) । ভারতে এখন সরকারিভাবেও এর চিকিৎসাগত সুফল নিয়ে কাজ হচ্ছে ।


.
আমার কথা হচ্ছে যদি গরুর প্রসাব দিয়ে ওষুধ ( সরাসরি গো মূত্র না , এতাকে আরক করা হয় , আরকের নাম ওষুধ বললাম) রোগ ভালো করে , তাহলে হিন্দুরা যদি ব্যবহার করে তাহলে ভাই আপনার সমস্যা কি ?
.
রাসুল সাঃ এর একটা হাদিস দেই আগে তারপর অন্য কথাঃ
আনাস ( রাঃ) হতে বর্ণিত। কতকগুলো লোক মাদ্বীনায় তাদের প্রতিকূল আবহাওয়া অনুভব করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হুকুম দিলেন, তারা যেন তাঁর রাখাল অর্থাৎ তাঁর উটগুলোর নিকট গিয়ে থাকে এবং উটের দুগ্ধ ও প্রস্রাব পান করে। তারা রাখালের সাথে গিয়ে মিলিত হল এবং উটের দুধ ও পেশাব পান করতে লাগল। অবশেষে তাদের শরীর সুস্থ হলে তারা রাখালটিকে হত্যা করে ফেলে এবং উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠান। এরপর তাদের ধরে আনা হল। এরপর তিনি তাদের হাত পা কেটে দেন এবং তাদের চক্ষু ফুঁড়ে দেন।
.
مُوسٰى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ نَاسًا اجْتَوَوْا فِي الْمَدِينَةِ فَأَمَرَهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَلْحَقُوا بِرَاعِيهِ يَعْنِي الإِبِلَ فَيَشْرَبُوا مِنَ الْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا فَلَحِقُوا بِرَاعِيهِ فَشَرِبُوا مِنَ الْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا حَتّٰى صَلَحَتْ أَبْدَانُهُمْ فَقَتَلُوا الرَّاعِيَ وَسَاقُوا الإِبِلَ فَبَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَبَعَثَ فِي طَلَبِهِمْ فَجِيءَ بِهِمْ فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ وَسَمَرَ أَعْيُنَهُمْ قَالَ قَتَادَةُ فَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ سِيرِينَ أَنَّ ذ‘لِكَ كَانَ قَبْلَ أَنْ تَنْزِلَ الْحُدُودُ.
.
Narrated Anas: The climate of Medina did not suit some people, so the Prophet (ﷺ) ordered them to follow his shepherd, i.e. his camels, and drink their milk and urine (as a medicine). So they followed the shepherd that is the camels and drank their milk and urine till their bodies became healthy. Then they killed the shepherd and drove away the camels. When the news reached the Prophet (ﷺ) he sent some people in their pursuit. When they were brought, he cut their hands and feet and their eyes were branded with heated pieces of iron.
.
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ৭৬/ চিকিৎসা (كتاب الطب)
হাদিস নাম্বার: 5686
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
.
( এই হাদিসটি আধুনিক প্রকাশনীর প্রকাশিত বুখারী শরিফের নাম্বার- ৫২৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বুখারী শরিফের নাম্বার- ৫১৭১)

লেখক হোমিওপ্যাথি ইউনানী আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ফায়জুল হক ------------------------
.
উটের মুত্র নিয়ে সার্চ দিলাম গুগোলে , ইউটিউবে অনেকগুলো ভিডিও দেখলাম । যেমন হিন্দুরা সরাসরি গোমূত্র পান করে , একদম সদ্য গরম গরম তাজা প্রসাব তেমনি উটের ও সদ্য গরম গরম তাজা উটের প্রসাব ও দুধ পান করতে দেখলাম মুসলিমদের , এখন কথা হচ্ছে , যদি সত্যি ই এতে ঔষধি গুন থাকে , রোগ আরোগ্য করার মত ওষুধ তৈরি করা যায় , তাহলে প্রবলেম কি ? যার ভালো লাগবে খাবে যার লাগবে না খাবে না । তাইলেই ল্যাটা চুকে যাবে ।
.
যদিও এই বিষয়গুলর একটাও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সমর্থন করে না , যারা খায় তারা তাদের ধর্মীয় অনুভুতি দিয়ে খায় , তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ভালো হওয়ার কথাও বলে প্রচার করে । ইউটিউবে এমন অনেক ভিডিও দেখেছি , অনেক লেখাও পড়েছি এর সমর্থনে । পৃথিবীর অনেক বিষয় আছে যা বিজ্ঞান সমর্থন না করলেও তা ঠিকে আছে মানুষের আবেগ , ধর্মীয় অনুভুতির কারনে । থাকুকনা এইসব , যারা মেনে চলবে তাদের কাছে । আপনার যদি এসব ভালোনা লাগে আপনি কাউকে আপনি ভালোলাগা আপনার ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারেন না । আমাদের উচিৎ সকলের আবেগ আর অনুভুতিকে সমর্থ করা অথচ আমরা কি করি , মুসলিমরা হিন্দুদের গরুর প্রসাব খাওয়ার কথা বলে ছোটো করি আর হিন্দুরা মুসলিমদের উটের প্রসাব খাওয়া নিয়ে ছোটো করে , সেই রকম ক্যাচাল লাগে । আরে ভাই যার ভালো লাগে ড্রামে ড্রামে খাক না তা যদি সমাজের জন্য , রাস্ট্রের জন্য হুমকির না হয় তাতে আপনার আমার সমস্যা কি ?

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়