ডেস্ক

Published:
2022-04-19 07:45:02 BdST

হাসপাতালের মর্মস্পর্শী কাহিনি সৌদী মালিকের নিয়মিত 'মাথায় মারা'র শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো সোমা দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন


সৌদিতে নির্যাতিত এক নারী কর্মী।


ডেস্ক
__________

লেবানন, জর্ডানে কাজ করতে গিয়ে সোমা বেগমের বড় কোন সমস্যা হয় নি। সৌদি আরব গিয়ে হারিয়েছেন মানসিক ভারসাম্য।
১৬ হাজার টাকা বেতনে এবার গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন সোমা। দুবার মালিক পরিবর্তন হয়েছে। আগেও টেলিফোনে জানিয়েছিলেন, তাঁকে মারধর করা হয় আর বেশির ভাগ সময় মাথায় মারেন মালিক।
বিচিত্র শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো আরবফেরত শ্রমজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
প্রথম অালো পত্রিকায় মানসুরা হোসাইন লিখিত প্রতিবেদনে জানা যায়,

 

"

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য বলছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৮১৯ জন নারী শ্রমিক ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়। আর ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দেশে ফেরা নারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯। সৌদি আরবে বেশিসংখ্যক নারী শ্রমিক যাচ্ছেন বলে এ দেশটি থেকেই বেশিসংখ্যক ফেরত এসেছেন। তবে মোট কতজন নারী মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দেশে ফিরেছেন, সে বিষয়ে সরকারি কোনো তথ্য নেই।

নারী শ্রমিকদের সৌদি আরবে পাঠানো হয় দুই বছর চুক্তিতে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিক ফেরত এলে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই দেশের মালিককে আরেকজন নারী শ্রমিক পাঠাতে হয়। তা না হলে নারী শ্রমিক নেওয়ার জন্য মালিক যে টাকা দিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করতে হয়। ফলে নারী শ্রমিকেরা কোনো বিপদে পড়লে তখন আর রিক্রুটিং এজেন্সিকে পাশে পাওয়া যায় না। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের জন্য শেল্টার হোম বা তেমন কোনো পুনর্বাসন উদ্যোগ নেই।

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশে শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে করতে একসময় নারীরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। এসব নারী শ্রমিক ফেরত এলে তাঁর পরিবারে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

 

দেশে ফিরে আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। গত বছর প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৫ শতাংশ নারী শ্রমিক শারীরিকভাবে অসুস্থ, ২৯ শতাংশের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে, ৮৫ শতাংশ নারী শ্রমিক মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দিন পার করছেন। ৮৭ শতাংশ শ্রমিক মানসিক অসুস্থতার কোনো চিকিৎসা পাননি। এই নারীরা সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। চট্টগ্রাম, যশোর ও ফরিদপুরের ৩২৩ জন ফেরত আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়েছিল সংস্থাটি। জরিপ বলছে, ৬১ শতাংশ নারী বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগেছেন, ৭ শতাংশ যৌন এবং ৩৮ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এদিকে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা নারী শ্রমিককে দেখভালের দায়িয়ত্ব স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিতে চাইছেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা বা ভাইকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা, বাড়তি একজনের খাবারের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে। বিলসের জরিপেও এসেছে, বিদেশ থেকে ফিরে আসা ১৫ শতাংশ নারী তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন। ১১ শতাংশ নারী শ্রমিকের স্বামী তাঁদের ছেড়ে চলে গেছেন এবং ২৮ শতাংশ নারী শ্রমিক তাঁদের দাম্পত্য জীবনে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছেন।"

আপনার মতামত দিন:


কোথায় ডাক্তার এর জনপ্রিয়