Ameen Qudir

Published:
2019-03-11 21:00:12 BdST

চিকিৎসকদের পাশে পেয়ে ক্যান্সারকে জয় করলেন সোনালী: জানালেন মর্মস্পর্শী বয়ানে


 

 

ডেস্ক
___________________________

তিনিবলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রে । হার্টথ্রব ছিলেন । অভিনয় শিল্পীর চেয়েও তার বড় পরিচয় এখন ডাক্তারদের সহায়তায় তিনি ক্যান্সারকে জয় করেছেন।
সেই জীবনজয়ের কথাই বলেছেন নিজ মুখে। কলকাতার গনমাধ্যমে তার কথা জানা যায়।
তার জবানীতেই বিস্তারিত। মানুষ আমার কাছে আমার ক্যানসারজয়ের গল্প শুনতে চায়। কিন্তু আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইতাম না। অস্বস্তি লাগত। আমার সেই চুল আর নেই, ভ্রু আর নেই, কেমোর প্রভাবে চোখের পাপড়িও সব পড়ে গিয়েছিল। এখন অবশ্য আইভ্রু আর চোখের পাপড়ি ফিরে এসেছে। আমি আজ সুস্থ হয়ে অনেক অনেক মাস পর প্রথমবার চোখে মাসকারা দিয়েছি। ঠিক করেছি, আজ আমি একদম কাঁদব না। তাহলে এত শখের মাসকারা মুছে যাবে।

সোনালী মুম্বাই ছেড়ে যেতেই চান নি। তার কথা ছিল, মুম্বইতে সেরা ডাক্তার, চিকিকিৎসক আচেন; আমি কেন বিদেশে যাব। তার ভাষায় : she was not at all in favor of going to New York But one of them did not follow the decision of Hasbund Goldie Behl. According to him, he had been fighting with Goldie in the flight until he reached New York. Because they were not happy with their decision. She says, “I told Goldie why are you doing this? There are many very good doctors here (in Mumbai). Why are you taking me so far? My house, my life … only three days We packed the bag and walked. I do not even know what is happening? ” Sonali goes on to say, “I said that at least talk to doctors here, but they were silent and focused on the same thing.”

 

সোনালী জানান,

যখনই বাইরে মানুষের সামনে যাওয়ার কথা ভাবি, তখনই আমার চোখের সামনে একটা দরজার চৌকাঠ ভেসে ওঠে। ভয়ের চৌকাঠ। সেই ভয়ের চৌকাঠ পার হতে এখনো আমার অনেক সংগ্রাম করতে হয়। ভয় আমার পেটের ভেতর দলা পাকিয়ে আমাকে চৌকাঠের এ পাশেই আটকে রাখতে চায়। আমি তখন নানান অজুহাত দিয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতে চাই। কিন্তু নিজেকে বোঝাই, অজুহাত দিলে চলবে না। আমি বাইরে যাব, মানুষের মুখোমুখি হব। আমার মাথায় চুল নেই, তাতে কী? আমার শরীরের গড়ন এখন আগের মতো নেই, তাতেও কিছু যায় আসে না। আমি ভেতর থেকে নিজের সৌন্দর্য অনুভব করছি। এই ইতিবাচক চিন্তাগুলোকে আঁকড়ে ধরেই আমি সেই ভয়ের চৌকাঠ পার করে আসি প্রতিদিন। এখন আমি নির্ভীক। ক্যানসার আমাকে নির্ভীক করে গেছে।

চুল ছিল আমার সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। আমি প্রায় সব ধরনের চুল পরিচর্যাকারী পণ্যের প্রচার করেছি একসময়। গোছা গোছা চুল, মসৃণ ত্বক, ক্ষীণ শারীরিক গড়ন আর সৌন্দর্য ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু যখনই ক্যানসারে আক্রান্ত হলাম, তখনই জীবনের সবকিছু উল্টেপাল্টে গেল। আমার অস্তিত্বকেই একটা শূন্যস্থানে পরিণত করল। কারণ এটা শুধু আমার ব্যক্তিজীবন নয়, কর্মজীবনকেও বিলীন করার আতঙ্ক আমার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিল। যেদিন প্রথম জানলাম, আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। সেদিনই আমি আমার পুরো দলকে ডেকে আনি। তাঁদের বলি, ‘দেখো, আমার একটা কঠিন অসুখ হয়েছে। আমি স্বাস্থ্যসম্মত পণ্যের প্রচার করি, সৌন্দর্যচর্চার পণ্যের প্রচার করি। কিন্তু এই অসুখ আমাকে আর সুস্থ-সুন্দর থাকতে দেবে না। আমি এত দিন একটা ব্র্যান্ড ছিলাম। ব্র্যান্ড হিসেবে এখন আর আমার কোনো মূল্য নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।’ সেই সময়টায় আমি এমনই মনে করতাম, তাই তাঁদেরও এটাই বলেছিলাম। এত দিন জীবনটা যেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ দেখি পায়ের নিচে আর সেটা নেই।

অনেকে বলে, ‘তোমার জীবনযাপনের ধরন তো ভালো ছিল, কী এমন হলো তোমার যে ক্যানসার হয়ে গেল!’ আমিও এসব শুনে শুনে ভাবতে শুরু করেছিলাম যে সত্যিই তো, আমারই কেন ক্যানসার হলো? কী এমন করেছিলাম আমি? মোট কথা আমি নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেছিলাম। ভাবতে শুরু করেছিলাম যে আমার ভুলেই আমার হয় অসুখ হয়েছে। যখন ক্যানসারের পাশাপাশি অপরাধবোধেও ভুগতে শুরু করলাম, তখন আমি এক মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে যাই। জানতে চাই, ‘কেন এখন আমি অপরাধবোধে ভুগছি? আমি কি চিন্তা করে করে আমার অসুখকে আরও গুরুতর বানাচ্ছি?’ তখন সেই চিকিৎসক জবাবে যা বললেন, তা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কথা। তিনি বললেন, ‘সোনালি, ক্যানসার হয় জেনেটিক কারণে কিংবা ভাইরাসের কারণে। যদি মনের চিন্তাই ক্যানসার বাড়াত বা কমাত, তাহলে আমি হতাম পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কারণ আমি মানুষের মনের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জানি।’ এটা শোনার পর আমার কাঁধের বোঝা কমে যায়।

আমি আমার ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার গল্প লুকাতে চাইনি। নিজের গল্পের সূত্রধর নিজেই হতে চেয়েছিলাম। তাই শুরু থেকেই ক্যানসার চিকিৎসার প্রতিটি ধাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে জানিয়েছি। দুভাবে আমার সার্জারি করা যেত। একটা ছিল রোবটিক প্রক্রিয়ায়, কোনো বড় ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়া। আরেকটা হলো একদম পুরো বুক থেকে শরীরের নিম্নাঙ্গ পর্যন্ত কেটে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষ ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে। সার্জারির আগে চিকিৎসক জানান, আমার শরীরে ক্যানসার এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে কোনোভাবেই রোবটিক সার্জারি সম্ভব না। তাই দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আমার অস্ত্রোপচার হয়। আমার বুক থেকে পেট পর্যন্ত ২০ ইঞ্চি লম্বা ক্ষত এখনো আছে। শুরুতে আমি শরীরে সার্জারির সেই দাগ নিয়ে প্রচণ্ড আতঙ্কে ছিলাম। এরপর ভয় পেতে শুরু করলাম এই ভেবে যে আমি একবার অচেতন হয়ে পড়লে আর জ্ঞান ফিরে পাব কি না! একেক দিক থেকে একেকটা ভয় আমাকে অসহায় করে দিচ্ছিল।
অপারেশনের আগে আমার বোন রূপা আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওকে বললাম, ‘কোনো ড্রামা কোরো না তো। আমি ফিরে আসব। আমাদের আবার দেখা হবে।’ মুখে এটা বলছিলাম ঠিকই। কিন্তু মনে মনে আমি প্রচণ্ড নাজুক অবস্থায় ছিলাম। ওই নির্দিষ্ট সময়ের অসহায়ত্ব আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি হয়তো বেঁচে ফিরব না, আমার ছেলের বড় হওয়া দেখতে পারব না, আমি আর আমার পরিবারের কাছে আসতে পারব না—এসব চিন্তা আমাকে যে পরিমাণ যন্ত্রণা দিয়েছিল, এতটা যন্ত্রণা আমাকে কেমোথেরাপিও দিতে পারেনি।
ক্যানসার কিন্তু আমাকে একটা ভালো ব্যাপারও শিখিয়েছে। আমি এই যাত্রায় বুঝতে পেরেছি যে আমার ছেলে একটা সুন্দর পৃথিবীতে বেড়ে উঠছে। যখন নিউইয়র্কে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যাই, সেখানে কেউ আমাকে চেনে না। কিন্তু এরপরও পদে পদে আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সেই ভালোবাসা থেকেই আমি বুঝে গেছি, মানবতা সবচেয়ে সুন্দর। কেমোর আগে আমি যেখানে চুল কাটাতে গেছি, সেই হেয়ার স্টাইলিস্ট আমার কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক রাখেনি। আমাকে বলেছে, ‘তুমি যখন এর পরের বার লম্বা চুল নিয়ে আমার কাছে ছাঁটতে আসবে তখন দিয়ো।’ আমি নিয়মিত যেই দোকান থেকে সদাইপত্র কিনতাম, সেখানকার ব্রিটিশ বিক্রয়কর্মী তাঁর মায়ের হাতে বানানো স্যুপ আমার জন্য নিয়ে আসতেন বক্সে করে। আমি কোন দেশের, কী করি, কোন ধর্মের—এসব কিছু না ভেবেই অচেনা মানুষগুলো আমার বেঁচে থাকাকে উদ্যাপন করত। আমাকে অনুপ্রেরণা দিত। আমি যদি ক্যানসারের সার্জারি থেকে ফিরে না-ও আসতাম, তাহলে এই সুখ নিয়েই চলে যেতাম যে আমার সন্তান একটা সুন্দর পৃথিবীতে আছে। সেই পৃথিবীতে, যেখানে মানবতা এখনো আছে, ভালোবাসা তো আছেই।

আপনার মতামত দিন:


বিনোদন এর জনপ্রিয়