Dr. Aminul Islam

Published:
2022-12-14 04:42:08 BdST

মেসি-রোনালদো সংলাপ ও নৈপুণ্যের সাতকাহন


 

অধ্যাপক ডা.মোহিত কামাল
প্রখ্যাত কথাশিল্পী

__________________

মেসি বলল, তোর জন্য খারাপ লাগছে, রোনালদো।
ধন্যবাদ, বন্ধু। খারাপ লাগলেও আমার খেলোয়াড়ি জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে কিছু শিখে নিতে পারিস,সময় থাকতে অবসরে চলে যাবি। বলল রোনালদো।
দলের অন্যদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও তোর তো ফর্ম আগের মতোই ছিল । তবু এমন ঘটনা ঘটল কেন?
কোচ ফার্নান্দো সান্তোস তোর ওপর এমন খ্যাপাটে ছিল কেন?
ফর্ম ভালো থাকলেও কোচের শ্যেনদৃষ্টি থেকে রেহাই পাবি না। বয়সটাকে তাঁরা সন্দেহের চোখে দেখে, পারফরমেন্স নয়। এমনটাই মনে হয়েছে আমার।
সারা বিশ্বের মানুষ তোর পারফরমেন্স দেখার জন্য টেলিভিশন সেটের সামনে বসেছিল আর তুই বসে আছিস সাইড লাইনে, বেঞ্চিতে। মানুষকে তোর নান্দনিক খেলা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কে দিয়েছে তোর কোচকে?
'কোচ' শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সুপ্ত অগ্নিগিরি। তাঁদের কথা না-শুনে চললে যেকোনো মুহূর্তে ফুস করে আগুন বেরিয়ে আসবে, নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে যেকোনো খেলোয়াড় । আমি তার একটা উদাহরণ হয়ে গেলাম । তবে বিশ্ববাসী হয়তো স্টেডিয়াম থেকে আমার কান্নাভেজা বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা মনে রাখতে পারে। আমি যে অবিচারের মুখোমুখি হয়েছি সেটা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, মনে করি আমি।
আর কিছু কি মনে রাখতে পারেন? আর কিছু কি বুঝে নিতে পারেন তাঁরা?
মেসির প্রশ্নের জবাবে চোখ তুলে তাকাল রোনালদো। প্রশ্নের গভীরতা বুঝে বলল, কোচের কথাও মনে রাখতে পারে তাঁরা। কোচ হয়তো বলবে, 'রোনালদো অহংকারী ,অভদ্র ; কোচের সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে গ্রহণ করে না।' শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগেও আমাকে বেয়াদব হিসেবে তুলে ধরতে পারে কোচসহ আমার বিরুদ্ধপক্ষ।
আসলে কি তুই অহংকারী ? আসলে কি তুই বেয়াদব ? আসলেই কি কোচের কথা অমান্য করেছিস কখনও?
মনে পড়ে না। তবে যখন দেখলাম বিশ্বকাপের এমন হাইভোল্টেজ খেলায় আমি সাইডলাইনে বসে আছি, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছি । প্রচণ্ড হতাশা তৈরি হয়েছে মনে। তীব্র ঘূর্ণি উঠে গেল করোটির ভেতর। সেই ঘূর্ণির নিম্নচাপে আমার মাথা ধরে যায়। মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে আমি বিড়বিড় করে যেন কী বলেছি। সেটাকেও তিনি বেয়াদবি হিসেবে নিতে পারেন।
বিশ্বের এমন সুপারস্টারকে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখলে তো এমন ঘূর্ণি আসতেই পারে । আরও ভয়ংকর কিছু হতে পারত।
তা পারত।
তেমন কিছু কি করিছিস?
চিৎকার করে উঠেছি। কেঁদেছি। তার শার্ট ধরে খামচি মেরে টানাটানিও করেছি মনে হয়। কী করেছি, ঠিক মনে নেই। তবে ওই মুহূর্তে আমি রোনালদো আমার মধ্যে ছিলাম না । ওই মুহূর্তে আমার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল ক্ষুব্ধ আর এক আমি। সেই আমিকে আমি চিনি না।
কোচের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা তো বিশ্ববাসীর মতো তোর দেশবাসীও বুঝেছেন। তোকে খেলার মাঠে যথাযথ ব্যবহার না-করায় দল হেরে গেছে ভেবেও তো তোর কিছুটা স্বস্তি পাওয়া উচিত।
না, স্বস্তি নেই। দল হেরেছে। দেশ হেরেছে । দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এটাই আমার কষ্ট।
কষ্ট নিয়েই আমাকে বিশ্বকাপের ইতি টানতে হলো, ইতিহাসে আমি আড়ালেই চলে যাব। আমার পূর্বের সব রেকর্ড মুছে যেতে থাকবে।
আমার তা মনে হয় না , রোনালদো। ওয়েভ আর্কাইভে সব থেকে যাবে। বার বার তা প্রচার হবে।
শিল্পের নৈপুণ্য ভুলতে পারে না মানুষ। এটা হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা । মানুষ নয় , মানুষের শিল্পকর্মটাকে মনে রাখে মানুষ।তোর বিরুদ্ধপক্ষ হয়েও আমি তোর পক্ষের একজন ভক্ত। তুই অমর থাকবি ফুটবল-জগতে, নিশ্চিত বিশ্বাস আমার । আশ্বস্ত করল মেসি।
হঠাৎ দুজনই চমকে তাকাল আকাশপানে ।
কে যেন কিছু বলতে চাচ্ছে দূর আকাশ থেকে ।
কে ?
'মেসি ঠিক বলেছে ,রোনালদো। ক্রীড়ানৈপুণ্যে তুমিও ইতিহাসের অনন্য ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে থাকবে। ইতিহাস কখনও তোমাকে মুছে দেবে না।
দিতে পারে না?'
কে, কে কথা বলছেন ? দুজনে প্রায় একসঙ্গে চিৎকার করে প্রশ্ন করল।
উত্তর এল না।
দুজনে দেখল আকাশের নীলে ভেসে উঠেছে দিয়াগো ম্যারাডোনার মুখ । ধীরে ধীরে সেই মুখ মিলিয়ে যাচ্ছে নীলিমায় , দূর নীলিমায়।

@@@@@@

লেখক এর ছবি 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়