ডা কামরুন লুনা

Published:
2022-10-27 21:06:43 BdST

'স্ট্রেস কিছুদিন পর্যন্ত চলে, তবে তার বেশি খারাপ এবং কাম্য নয়'


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়,
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট
_________________________


স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কিছুদিন পর্যন্ত বা কিছুদুর পর্যন্ত ভালো। তবে তার বেশি খারাপ, এবং কাম্য নয়।
অভিযোজন অনু্যায়ী, আমাদের পূর্বজ দের কাছে খাদ্য এত সহজলভ্য ছিল না। প্রতিদিন প্রায় তাঁদের খাদ্য অন্বেষণে যেতে হতো। তখন জীবন আরো বিপদসঙ্কুল ছিল, কয়েকশ রকমের বন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য আহরণে যেতে হতো, কারণ মানতেই হয় যে মানুষের শারীরিক সক্ষমতা খুব সীমাবদ্ধ, তার প্রখর দৃষ্টি বা ঘ্রাণ শক্তি নেই, খুব দ্রুত ছুটে পালানোর ও ক্ষমতা নেই, আছে শুধু মস্তিষ্কের শক্তি।
এই সময়ে, অভিযোজন ই মানুষের ( Homo Sapiens) এর শরীরে স্ট্রেস হরমোন নামে একটি হরমোনের ক্ষরণ এর ব্যবস্থা করে। এতে আমাদের অ্যাড্রেনাল গ্লান্ড থেকে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা আবার হার্টের গতি ( Beat) ও এবং সংকোচন ক্ষমতা বাড়ে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে কারণ অ্যাড্রেনালিন ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়ায়।
অর্থাৎ, মানুষের শারীরিক সক্ষমতা কে তুঙ্গে তুলে রাখে এই হরমোন, যাতে খাদ্য আহরণে সুবিধা হয়।
সময় বিস্তর পাল্টেছে, আমাদের খাদ্য সংগ্রহ করতে প্রতিদিন যেতে হয়না, কিন্তু অভিযোজন একটি অতি ধীর পদ্ধতি বলে এর আমুল পরিবর্তন এখনো হয়নি।
মনে পড়বে, আমাদের বাল্যে ও শৈশবে বাবা মা কাকা বলতেন, সকালে মুখস্থ করবি, সকালে ভালো মুখস্থ হয়। কার্যকারণ না জানলেও তাঁরা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছিলেন যে সকালবেলাই পড়াশুনো র আদর্শ সময়।
তবে এই একই কারণে সকাল ৫-৬টা থেকে সকাল ১০ টা অবধি স্ট্রেস হরমোন আজো ক্ষরিত হয়।
আমাদের বানরত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণ হয়েছে বহু যুগ, কিন্তু আমরা বিলক্ষণ জানি আমাদের লাঙ্গুলের চিহ্ন স্বরূপ অস্থি টি আজো বিদ্যমান।
যতই আমাদের অ্যাডাম -ঈভ বা আদম - হবার কাহিনী শোনানো হোক, আমরা স্বীকার করি বা নাই করি, মানি এবং জানি যে আমাদের অভিযোজন এর কারণ হিসাবেই লেজ টি খসে পড়েছে, কিন্তু একদা তার অস্তিত্ব ছিল প্রবল।
অধিক স্ট্রেস এবং ক্রনিক স্ট্রেস অ্যাড্রেনালিন এর ক্ষরণ করাবার জন্য ই, আজকের দিনে স্থূলতার ও অন্যতম কারণ।
যাঁদের রক্ত পরীক্ষা করার দরকার, তাঁদের সকাল দশ টা বা এগারোটা পার করে রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হয়,কারণ ততক্ষণে স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণের সময় টি পার হয়ে যায়, তাই রক্তে ইনসুলিনের বা গ্লুকোজের মাত্রা অকারণে বেশি দেখাবে না।
এমনিই যে থাইরয়েড এর পরীক্ষা করার আগে অন্তত বারো ঘন্টা খালিপেট থাকার নিয়ম, জলপানে মানা নেই কিছু। আজকাল রাত বারোটা র আগে ঘুমোতে যান খুব কম মানুষ, কাজেই আমার কাজটি বা পরামর্শ টি মানতেও তেমন কষ্ট
হয় না, এবং এগারোটা পার করতেও অসুবিধে হয় না সাধারণত কারোরই।।
---------------------------


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের একজন শীর্ষ
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট ;তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এমডি করেছেন। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
তিনি বাংলা, ফরাসী , ইংরাজী সহ বহুভাষায় পারদর্শী।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়