Desk

Published:
2022-10-11 05:42:50 BdST

প্রবন্ধদেশে মানসিক চিকিৎসকের চরম সঙ্কটের চেয়েও ভয়ঙ্কর হলো মানসিক রোগ এবং রোগীর প্রতি অসচেতনতা


লেখক ইসহাক আহমদ বেগ ত্রিশোনকু



ইসহাক আহমদ বেগ ত্রিশোনকু

________________________

মানসিক রোগ এবং সচেতনতা।

আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মানসিক অসুখে ভুগেছেন, অনেকেই ভোগেন নি।

যারা ভোগেন নি তারা কল্পনাতেও আনতে পারবেন না যে মানসিক অসুখে ভোগা কি ভয়াবহ।

তীব্র বিষন্নতা যে কোন শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে অনেক গুণ বেশী যন্ত্রণার, তীব্র কষ্টের।

প্রাণ মানুষের কাছে মহামূল্যবান। এই প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে মানুষ ডাস্টবিনে কুকুরের সাথে যুদ্ধ করে উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকে।

একবার ভেবে দেখবেন কি মানুষই আবার আত্মহত্যা করে কেন?

মূলত মানসিক বৈকল্যে মানুষ যে চরম কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায় সে কষ্টের ভারবহনে অক্ষম হয়েই মানুষ
আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

এককালে আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যাটি গ্রহণযোগ্য ছিল না। মানসিক রোগীদেরকে অচ্ছ্যুৎ হিসেবে, জ্বীন-ভুতে ধরা আজব কিছু ভাবা হতো। চিকিৎসা ও তেমন ছিলনা। ছিল জ্বীন-ভূত তাড়ানোর নামে হুজুর- পুরোহিতদের অকথ্য দৈহিক অত্যাচার।

শারীরিক অসুখের চিকিৎসা মানব সভ্যতার একদম প্রথম থেকেই ছিল। ছিল অষুধ। অথচ একশো বছর আগেও মানসিক রোগের উল্লেখযোগ্য কোন চিকিৎসা ছিল না। মানসিক রোগের ওষুধ এসেছে তারও বেশ পরে।

আমাদের দেশে মানসিক চিকিৎসক এবং মনোবিদের সংকট চরম।

তবে তার থেকেও যেটি ভয়ংকর তা হলো আমাদের সমাজে মানসিক রোগ এবং রোগীর প্রতি অসচেতনতা।

এখন সামাজিক ভাবে মানসিক রোগী গ্রহনযোগ্য হলেও এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব প্রকট।

আমাদের মিথস্ক্রিয়া যাদের যাদের সাথে, যেমন মা, বাবা, ভাই বোন, বন্ধু, সহকর্মী তাদের আচরণ একটু খেয়াল করলে আমরা সহজেই কারা মানসিকভাবে স্বাভাবিক নেই তা বুঝতে পারি।

মানসিক ভাবে যারা স্বাভাবিক নেই তাদেরকে একজন জন মনোবিদ বা মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ আমাদের, মানে সাধারণ মানুষদের বোঝার কোন উপায় নেই যে কার রোগ কতটুকু গুরুতর। কারণ একেক মানসিক রোগের এবং ভিন্ন ভিন্ন মানসিক রোগীর লক্ষণগুলো হয় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের পক্ষে সে সব লক্ষণ বোঝা সম্ভব নয়।

আমাদের কি করতে হবে?

আমাদের তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে একজন মনোবিদ বা মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তা সম্ভব না হলে তার পরিবারের সদস্যদের সচেতন করতে হবে।

মনে রাখবেন আমাদের সামান্য একটি উদ্যোগ একটি অমূল্য প্রাণকে বাঁচাতে পারে।

একটু চিন্তা করুন।

একজন অভুক্ত মানুষের সংস্পর্শে যখন আসেন, তখন আপনি অস্থির বোধ করা শুরু করেন। আপনি তার খাবারের ব্যবস্থা করে দেন, তড়িঘড়ি করে।

একজন দুস্থকেও আপনি সাহায্য করে থাকেন আপনার সামর্থ অনুযায়ী, এমন কি সাধ্যের বাইরেও।

দেখুন এই অভুক্তকে, এই দুস্থকে যদি আপনি সাহায্য না করেন তা হলে কিন্তু তারা মারা যাবে না, ক্ষুধার কষ্টে এবং চরম অভাবে দিন পার করবে।

মানসিকভাবে যারা অসুস্থ তাদেরও কিন্তু আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন এবং অভুক্ত, নিঃস্ব মানুষদের চেয়ে অনেক, অনেক বেশী প্রয়োজন।

কারণ, আমাদের সাহায্য না পেলে দু'দিন পর বা দু'মাস পর সে আত্মহত্যা করতে পারে।

আজ এই বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আমরা অংগিকার করি যে মানসিক রোগ সম্পর্কে আমরা আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবো।

-ইসহাক আহমদ বেগ ত্রিশোনকু।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়