ডেস্ক

Published:
2022-09-26 02:18:49 BdST

ক্রাইম পেট্রল বাংলাদেশজীবিত রহিমা তাদের বাড়িতে রয়েছে, তা মেয়ে মরিয়ম ও ছেলে মিজানকে জানিয়েছিলেন কুদ্দুস মোল্লার ছেলে



সংবাদ সংস্থা
_______________


রহিমা জীবিত অবস্থায় তাদের বাড়িতে রয়েছে, তা মেয়ে মরিয়ম ও ছেলে মিজানকে জানিয়েছিলেন কুদ্দুস মোল্লার ছেলে আল আমিন। জানালেন

আশ্রয়দানকারী কুদ্দুস মোল্লার ভাগ্নে জয়নাল। তার এবং কুদ্দুস মোল্লার পুত্র ও জামাইয়ের উদ্যোগে
বহুল চর্চিত " রহিমা বেগমের রহস্যজনক আত্মগোপনে"র পর্দা ফাঁস হয়।
আলোচিত রহিমা বেগমকে
কুদ্দুস মোল্লা তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়য়েছিলেন।


জয়নাল জানান, ফেসবুকে ও অনলাইনে রহিমা বেগমের নিখোঁজের ঘটনা জানার পর কুদ্দুসের ছেলে আল আমিন ফেসবুকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে কমেন্ট করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করে তিনি রহিমা বেগমের ছেলে মিজানের নম্বর পেয়েছিলেন। সেই নম্বরে ফোন দেওয়ার পর ফোনটি এক নারী ধরেন। ওই নারী বলেন, ‘এই নম্বরে আর ফোন দেবেন না।’ এ কথা বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। এরপর রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি।

মিডিয়া কর্মীরা জানিয়েছেন,
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে এসে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন খুলনার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম (৫২)। ওই বাড়ির লোকজনকে রহিমা বলেছিলেন, ছেলে–মেয়েদের ওপর রাগ করে তিনি ঘর ছেড়েছেন। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চান না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথাও বলেছিলেন তিনি।

 

কুদ্দুস মোল্লা (৭০) কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন খুলনায় বসবাস করেছেন। তিনি খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। বছর দশেক আগে ওই পাটকল বন্ধ হওয়ার পর কুদ্দুস বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এই বাড়ি থেকেই গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগর পুলিশের একটি দল রহিমা বেগমকে উদ্ধার করেন।

 

নিখোঁজ মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নান

কে এই মরিয়ম-----------

মরিয়ম মান্নান সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র জানায়, তিনি বয়েসে নবীন হলেও বিভিন্ন অান্দোলন সংগ্রামের একজন নেতৃস্থানীয় একটিভিস্ট। বিশিষ্ট অধিকার সংগ্রামী ফরহাদ মাজহার ও ফরিদা আকতারের নারীপক্ষ সংগঠনে তিনি যুক্ত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বহুল আলোচিত কোটা বিরোধী আন্দোলনে তিনি সম্মুখ সারির ভুমিকা পালন করে সকলের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। ঐ কোটা পদ্ধতি বাতিল সংগ্রামে তিনি ভিপি নুরুল হক নুরুর সহযোদ্ধা ছিলেন।

উল্লেখ,
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছিলেন সন্তানেরা

ব্যাগ হাতে সৈয়দপুর গ্রামে আসেন রহিমা
শনিবার সকালে সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ির লোকজন ও আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটা বা সাড়ে চারটার দিকে একটি বাসে করে রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড নামেন। তখন তাঁর হাতে একটি ব্যাগ ছিল। তিনি এসে ওই বাজারের মুদিদোকানদার ইউনুস বিশ্বাসের কাছে মোতালেব মুসল্লির (কুদ্দুস মোল্লার বাবা) বাড়ি কোথায় জানতে চান। তখন ইউনুস বিশ্বাস রহিমার পরিচয় জানতে চান। রহিমা বেগম বলেন, তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরার চাচাতো বোন। তখন ইউনুস এক শিশুকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

কুদ্দুস মোল্লার জামাতা নূর মোহাম্মদ বলেন, রহিমা বেগম কেন এবং কী কারণে বাড়িতে এসেছেন, তা তিনি তাঁর শাশুড়ি হীরার কাছে জানতে চান। হীরা জানান, তাঁরা যখন খুলনা ছিলেন তখন রহিমার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তিনি বেড়াতে এসেছেন।


কুদ্দুসের মেয়ে সুমাইয়া বেগম বলেন, রহিমা বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই দিনগুলো কাটিয়েছেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। এ বাড়ির–ও বাড়িতে বেড়াতেও গিয়েছেন। তবে তাঁর চোখের সমস্যা ছিল, চোখ দিয়ে পানি পড়ত। এ জন্য বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে চিকিৎসক দেখানো হয়।
সুমাইয়া বলেন, রহিমা বেগম তাঁকে বলেছেন— জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁদের গন্ডগোল হয়েছে, ঝামেলা চলছে। এই ঝামেলার জন্য তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তাই তিনি বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। যদিও তাঁর শরীরে মারপিট করার কোনো আঘাত পাওয়া যায়নি। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন।


অনলাইনে ছবি দেখে রহিমাকে শনাক্ত
কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং বিভিন্ন অনলাইনে তিনি রহিমা বেগমের ছবি দেখতে পান। ওই ছবিটি দেখানো হলে রহিমা বেগম ছবিটা নিজের বলে শনাক্ত করেন। এরপর তিনি লোকজনকে বলেন, তাঁর ছেলে–মেয়ে তাঁকে কেউ পছন্দ করে না। তিনি বাড়িতে ফিরে যাবেন না। তিনি বাড়ি গেলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে বলেও জানান রহিমা বেগম।
মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, রহিমা তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি মৃত স্বামী মান্নানের কাছ থেকে দুই কাঠা জমি পেয়েছেন। তাঁর ছেলে–মেয়েরা এই জমি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ছেলে–মেয়েরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চান। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি রাগ করে চলে এসেছেন।


জয়নাল আরও জানান, এ ঘটনা জানার পর কুদ্দুসের ছেলে আল আমিন ফেসবুকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে কমেন্ট করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করে তিনি রহিমা বেগমের ছেলে মিজানের নম্বর পেয়েছিলেন। সেই নম্বরে ফোন দেওয়ার পর ফোনটি এক নারী ধরেন। ওই নারী বলেন, ‘এই নম্বরে আর ফোন দেবেন না।’ এ কথা বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। এরপর রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি।

যেভাবে সন্ধান পেল পুলিশ
গত শুক্রবার রহিমা বেগমের ছবি দেখার পর শনিবার সকালে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশারফ মোল্লাকে বিষয়টি জানান কুদ্দুসের ভাগনে জয়নাল ও জামাতা নূর মোহাম্মদ। মোশারফ মোল্লা খুলনা সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলের সহযোগিতায় বিষয়টি খুলনা পুলিশকে জানান। মোশারফ মোল্লার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয় রহিমা বেগম সৈয়দপুর গ্রামে আছেন। পুলিশ রহিমা বেগমকে নজরে রাখতে বলেন। পুলিশ জানায়, যেকোনো মুহূর্তে তারা সৈয়দপুর আসবে।

জয়নাল বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি সদস্য মোশারফ তাঁকে ফোন করে বলেন খুলনা থেকে লোকজন এসেছে। এরপর খুলনা মহানগর পুলিশের এডিসি আবদুর রহমানের সঙ্গে একজন নারী পুলিশ পুলিশ সদস্যসহ চার–পাঁচজন কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে প্রবেশ করেন। এডিসি আবদুর রহমান গিয়ে রহিমা বেগমের সামনে দাঁড়ান। আবদুর রহমান তাঁকে বলেন, ‘আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কি না, আমি আবদুর রহমান।’ এ সময় রহিমা বেগমকে আরও কিছু প্রশ্ন করেন তিনি। তবে কোনো প্রশ্নের উত্তরই রহিমা বেগম দেননি। পুলিশ আসার আগে রহিমা বেগম বাড়ির সবার সঙ্গে গল্প করছিলেন। পুলিশ দেখে তিনি চুপ হয়ে যান।



 

পরে রহিমা বেগমকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরা বেগম (৬০), ছেলে আল আমিন (২৫) ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী রাহেলা বেগমকেও (৪৫) নিয়ে যায় পুলিশ।

আজ সকালে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, একটি টিনের চৌচালা ঘরবিশিষ্ট এই বাড়িতে চারটি কক্ষ রয়েছে। যার একটি কক্ষে রহিমা বেগম থাকতেন। নূর মোহাম্মদ জানান, রহিমা বেগম প্রথম প্রথম একাই ওই কক্ষেই থাকতেন। তবে শুক্রবার রহিমা বেগমের বিষয়টি জানার পর হীরা বেগম তাঁর সঙ্গে থাকতেন।

ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন মোল্লা (৩৫) বলেন, কুদ্দুস মোল্লা সৈয়দপুরে ফিরে এসে স্থানীয় জনতা জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরিবারটি অত্যন্ত নিরীহ। শুক্রবার রাতে রহিমা বেগমের সঙ্গে কুদ্দুসের স্ত্রী–পুত্রসহ তিনজনকে নিয়ে গেছে পুলিশ। তাঁরা বর্তমানে খুলনায় পুলিশি হেফাজতে আছেন। তিনি এ ব্যাপারে খুলনা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। খুলনা পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং পরে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়