SAHA ANTAR

Published:
2022-09-19 20:06:51 BdST

ভুবনবিখ্যাত খাদ্য ফোয়া গ্রা : হাঁস-কে পাইপ দিয়ে খাইয়ে অনেকদিন ধরে প্রস্তুত করা হয় যেভাবে


 


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়,
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট
___________________________

সুস্বাদু মেটে এবং ভুবনবিখ্যাত ফোয়া গ্রা। (Foie gras) এর ইংরেজি হল Liver fatty.
এটি একটি অতীব সুস্বাদু খাদ্য। সারাবিশ্বে। ফ্রঁসের খ্যাতি এই খাদ্য প্রস্তুতিতে।
কি ও কিভাবে প্রস্তুত হয় --?
এক বা একাধিক হাঁস কে অনেকদিন ধরে প্রস্তুত করতে হয় এই জন্যে।
এই হাঁস দের গলা দিয়ে পাকস্থলী অবধি একটি পাইপ ( হ্যাঁ, একেই মানুষের ক্ষেত্রে রাইলস টিউব বলা হয়) পৌঁছে দেওয়া হয়, এবং এই টিউব পথে তাদের ক্রমাগত খাওয়ানো হয় কোন শস্যদানা, গুঁড়ো করে অবশ্যই, যাতে তারা এ বিনা অন্য কিছুই আর না খেতে পারে।
এমনি করে এই নিপীড়ন চলে বেশ কয়েক মাস। ( পানীয়জল ও দেওয়া হয় এই পথেই) । কি দেখা যায় -- না হাঁসের লিভার বা যকৃৎ টি বিশাল হয়ে উঠেছে এবং তার পরতে পরতে চর্বির আধিক্য হয়েছে।
এরপরে এই হাঁস টিকে হত্যা করে তার লিভার টি রান্না করে পরিবেশিত হয়। এটি একটি ভারি উপাদেয় খাদ্য।


সুনীল গঙ্গোর লেখায় এই ফোয়া গ্রার উল্লেখ আছে, তবে এটি অতি মহার্ঘ খাদ্য।
কি দেখা গেল এতদ্বারা? হাঁস কে প্রচুর পরিমাণে শস্যদানা র গুঁড়ো বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়ালে তার লিভার বা যকৃৎ টি চর্বিতে পরিপূর্ণ এবং বৃহদাকার হয়ে ওঠে।
লক্ষ্য করবেন হাঁস টিকে ( হাঁস Omnivore হলেও, আমরা জানি হাঁস গেঁড়ি, গুগলি ইত্যাদি জলজ কীটও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, স্বাভাবিকভাবেই) তাকে কিন্তু লিভারে চর্বি জমানোর জন্য অনেক মাংস বা চর্বি দেওয়া হল না, দেওয়া হলো কার্বোহাইড্রেট।
অনেক চিকিৎসক এর না জানা থাকলেও হাঁসের পালক রা এই ঘটনা সম্যক জানে।
আজকাল মানব লিভারে চর্বির আস্তরণ পড়া খুবই দেখা যায়, বিশেষ করে যাদের ডায়বেটিস টাইপ টু হয়েছে বা যারা খুব স্থূল বা উভয়েরই। দেখা গেছে স্থূলতা ই পরে ডায়বেটিস এর সাথী হয়।
এটি বুঝতে উলত্রাসনোগ্রাফী করতে হয়। আরো স্পষ্ট বুঝতে MRI করা ই প্রশস্ত। এখন জানা গেছে এই চর্বি বা ফ্যাটের পরত ই ইনসুলিন রেজিস্টান্স ( Insulin resistance) এর কারণ, যা আবার মেদাধিক্য / স্থূলতা এবং টাইপ টু ডায়বেটিস সমেত আরো অনেক অসুখের কারণ।
মানুষের ক্ষেত্রেও কার্যকারণ যোগাযোগ একই। অভিযোজন অনুযায়ী যোগ্য নয় এমন খাদ্য ( এক্ষেত্রে ও কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ ই নিরন্তর, আজীবন বহুল পরিমাণে খাওয়ার ফল ই এই) ।
এর চিকিৎসা--
মানবশরীরে স্টোরেজ হরমোন একটি মাত্র, তার নাম ইনসুলিন।
( যে হতভাগ্য দের টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস থাকে তাদের ইনসুলিন শরীরে একটু ও বা অতিসামান্য তৈরী হয়, বহু কারণের ফলে, যাদের অটো ইমিউন বলা হয়,তাদের ইঞ্জেকশন ইনসুলিনের আবিষ্কারের পূর্বে বাঁচানো ই সম্ভব ছিল না, শরীরের সব প্রোটিন ও ফ্যাট গলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে তাদের অপুষ্টিতে অথবা কিটোঅ্যাসিডোসিসে মৃত্যু হতো সাধারণত !)
ইনসুলিন একটি অ্যানাবলিক বা পোষণকারী হরমোন। এর অভাবে যেমন শরীরের চর্বি গলে বেরিয়ে যাবে, আবার অনবরত এর ক্ষরণ উত্তুঙ্গ হলে মানবশরীর ফ্যাটে পরিপূর্ণ হবে।
কার্বোহাইড্রেট খেলেই ইনসুলিনের ক্ষরণ হয় সবচেয়ে বেশি, প্রোটিনে এর ক্ষরণ মাঝামাঝি আর ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাদ্যেই এর ক্ষরণ ন্যূনতম।
হ্যাঁ, উপবাসে থাকলেও ইনসুলিনের ক্ষরণ অনেক কম হয়। ( জল ও লবণ ক্যালরিহীন তাই যে কোন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা সাময়িক উপবাসে এটি গ্রহণ করলে বাধা নেই কিছু) ।।
প্রমাণিত ও পরীক্ষিত যে স্বাভাবিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা Natural Saturated Fat মানবশরীরে ক্ষতিকর তো নয় ই বরং ভীষণ উপকারী।

___________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের একজন শীর্ষ
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট ;তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এমডি করেছেন। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
তিনি বাংলা, ফরাসী , ইংরাজী সহ বহুভাষায় পারদর্শী।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়