Desk

Published:
2022-09-14 20:48:03 BdST

ভাইরাল ইউটিউব ডাক্তারের পাল্লায় পড়ে বিশিষ্ট চিকিৎসকের পিতার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা


২০২০/ ২১ এ ছিলেন যেমন; এখন ভাইরাল ইউটিউব ডাক্তারের পাল্লায় পড়ার পর যেমন আছেন

 

 

ডেস্ক
______________________

ইউটিউব ডাক্তার হিসেবে বাংলাদেশে প্রবল জনপ্রিয় কথিত ওজন থেরাপিস্ট চিকিৎসকের পাল্লায় পড়ে ভয়ঙ্কর শ্বাসকষ্টে ভুগছেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের পিতা। পাঁচ মাইল হেঁটে ফেরা পরিমিত জীবন যাপনকারী বাবা রাতারাতি বিছানা থেকে বাথরুমে যেতে ভয়ানক শ্বাসকষ্টে ভোগেন।


এ বিষয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্ট ডা. ফাতেমা দোজা। তিনি জানান,
নামকরা একজন চিকিৎসক এর খামখেয়ালিপনার কঠিন মূল্য দিতে হয় আমার বাবাকে।
IPF এ আক্রান্ত বাবা পাঁচ মাইল হেঁটে এসে হাতমুখ ধুয়ে, সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে নাস্তা খেতে বসে সবার খবর নিতেন। মাত্র ৬-৮% ফুসফুস আক্রান্ত ছিলো তার। নিয়মিত পাঁচ রকম ওষুধ খেয়ে, হালকা ব্যায়াম কিংবা হেঁটে ছিলেন দারুণ ফিট। লোকমুখে শুনে, সেই হুজুগে শ্মশ্রু মণ্ডিত চিকিৎসকের পাল্লায় পড়ে আমাদের না জানিয়ে তার কথানুযায়ী পেলেন ওজোন থেরাপি। যেখানে চিকিৎসক নন এমন জনেরাও জানেন , ওজোন ফুসফুসের ক্ষতি করে, ফাইব্রোসিস বাড়ায় সেখানে সেই জ্ঞানপাপী আমার বাবার ফুসফুস ৭০% ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলেন।
থেরাপির পর পরেই ভাইটাল ক্যাপাসিটি (ফুসফুসের ক্ষমতা) ৬০% কমে গেলো, ফাইব্রোসিস রাতারাতি বেড়ে গেল।
পাঁচ মাইল হেঁটে ফেরা পরিমিত জীবন যাপনকারী আমার বাবা রাতারাতি বিছানা থেকে বাথরুমে যেতে ভয়ানক শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
এ পৃথিবীতে এতো বাতাস! অথচ ফুসফুসে টেনে নেয়া যায়না! প্রচণ্ড বুকে ব্যথা নিয়ে নির্বাক হয়ে আমার বাবা বলে, "আমি কি আর কখনওই ভালো হবোনা? সিঁড়ি ভেঙে বাইরে যেতে পারবোনা? হাঁটতে পারবোনা? কাজ করতে পারবোনা?"
গভীর দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ফেলি। কিছু করার ক্ষমতা নেই, মনে মনে অভিসম্পাত করি জ্ঞানপাপী খামখেয়ালি নামজাদা ফুসফুস বিদকে, কখনোবা ভাগ্যকে।
একটু একটু করে জীবনের সব চাইতে প্রিয় মানুষটির খারাপ হতে থাকা - চেয়ে দেখা যায়না, সহ্য করা যায়না। দশ মিনিট অক্সিজেন ছাড়া থাকলেই লাফ দিয়ে স্যাচুরেশন নেমে আসে সত্তর, পঁচাত্তর। ঘাড় উঁচু করে জীবনকে সিংহের মতো দাপিয়ে বেড়ানো মানুষটি ভারী এক অক্সিজেন মেশিনের আর তারের হাতে বন্দী।ক্রমাগত ওজন কমে যাচ্ছে, ফিকে হয়ে আসছে প্রাণশক্তি, স্মৃতি।
আব্বার পাশে রাত জেগে থাকি। আতংকের সাথে খেয়াল করি বুকের খাঁচার ওঠানামা।বহুদিন পর দেখি রাত কখন গভীর হতে থাকে, দ্বিপ্রহর গড়িয়ে তিনপ্রহর কতোটা নিস্তব্ধ আর এক সময় ফিকে হয়ে আসে আকাশ, ফোটে আলো আর একাকী মাথা দোলায় বাসার সামনের ঝাঁকড়া বকুল গাছটা... "হে সৃষ্টিকর্তা, তুমি আমার জীবনের সবচাইতে প্রিয় মানুষটির, আমার জীবনের ছায়া, আমার দাঁড়ানোর শক্ত মাটি, আমার সকল ভালোর কারিগর -মানুষটিকে ভালো রাখো, দীর্ঘ জীবন দাও।"
( কষ্ট, বেদনা, এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাওয়া বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করা চলেনা। মানুষ কেবল আনন্দকেই ভাগ করে নিতে জানে, কষ্ট ভাগ করবার মতো বিষয়ই নয়..)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়