ডেস্ক

Published:
2021-08-02 05:26:20 BdST

ভূয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানী-গবেষক’ ইশরাত রফিকের নানা কাহিনি


 


ডেস্ক
______________
তিনি স্বয়ং শত পরিচয়ধারী।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি সংস্থার ভুয়া প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতেন । কখনো নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি স্নাতক, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন।
তার নাম ইশরাত রফিক ঈশিতা।

অবশেষে প্রতারণার অভিযোগে কথিত 'চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক' ড. ইশরাত রফিক ঈশিতাকে তার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আজ রোববার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, ঈশিতা নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি স্নাতক, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি র‌্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে ভিন্নধর্মী একটি প্রতারণা সম্পর্কে তথ্য উদঘাটিত হয়। যেখানে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের বা নিজেদের ভুয়া সাফল্য ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারে লিপ্ত আছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ জাতীয় মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।

তিনি আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে আজ সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন মিরপুর-১ থেকে কথিত তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক, বিশিষ্ট আলোচক, ডিপ্লোম্যাট, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা এবং তার সহযোগী মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে দিদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিছ ইয়াবা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ এবং মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গবেষক ইশরাত রফিক ঈশিতা ভুয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ভুয়া নথিপত্র তৈরি ও প্রচার প্রচারণা করে থাকেন। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস শেষ করেন। এরপর ২০১৪ সালের জুনের প্রথম দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। একই বছরে তিনি একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে চার মাস পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকুরিচ্যুত হন।


র‌্যাব জানিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে বাধা এড়াতে তার 'বস' হিসেবে সহযোগী মো. শহিদুল ইসলাম দিদার ভূমিকা রাখতেন। যিনি টেলিফোন/অনলাইনে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ইশিতার পরিচয়ে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করতেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনলাইনে বিভিন্ন মিটিং এ বস বা উপরস্থ কর্মকর্তার বর্ণিত ভূমিকা পালন করতেন।

গ্রেপ্তার শহীদুল ইসলাম দিদার ২০১২ সালে একটি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা (ইঞ্জিনিয়ার) শেষ করেন। পরবর্তীতে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমাও করেন। বর্তমানে একটি গার্মেন্টসে কমার্শিয়াল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।

র‌্যাব জানিয়েছে, তারা দু'জন যোগসাজশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভুয়া সদস্য, কর্ণধার বা দূত হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কে এই ঈশিতা


এই ঈশিতা কে নিয়ে নানা প্রচার রয়েছে অনলাইনে।
সেসব কিয়দংশ তুলে ধরা হল।

 ইশরাত রফিক ঈশিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও তার জন্ম ময়মনসিংহ জেলায়। তিনি ১৯৯৩ সালের ৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে ময়মনসিংহ জেলায়। বাবা খন্দকার রফিকুল ইসলাম সিনিয়র ফ্যাকাল্টি মেম্বার, বিকেবি এবং মা হেলেন রফিক, এমএমসি ঢাকা ইউনিভার্সিটি। একমাত্র বড় বোন এমআইটি বোস্টন আমেরিকাতে পিএইচডি করছেন। ডা. ঈশিতা ২০০৮ সালে বিদ্যাময়ী গভর্মেন্ট গার্লস হাই স্কুল ময়মনসিংহ থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১০ সালে মমিনুন্নেসা গভমেন্ট গার্লস কলেজ ময়মনসিংহ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হন তিনি। ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন ঈশিতা। ২০১৮ সালে তিনি এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার দাবি,

বর্তমানে তিনি আমেরিকান সেক্সুয়াল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অ্যাম্বাসেডর, ন্যাশনাল সার্ভিকাল ক্যান্সার কোয়ালিশন অ্যাম্বাসেডর এবং গ্লোবাল গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।

তার দাবি, 

গত জানুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্পাইরেশনাল ইউমেন অ্যাওয়ার্ডে (আইআইডব্লিউএ ২০২০) ‘সেরা নারী বিজ্ঞানী অনূর্ধ্ব-৩৫’ ক্যাটাগরিতে ভারত থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও ডা. ঈশিতা সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় রত্ন অ্যাওয়ার্ড ২০২০ এর জন্য নির্বাচিত হন, যার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইন্দোরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইশিতার দাবি, 

এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের পর চলতি মাসের ২২ তারিখ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে ‘বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গবেষকের’ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এছাড়াও গত বছরের ৩১ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড অ্যাকাডেমিক একসেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এর ‘বেস্ট রিসার্চ এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা লাভ করেন। এ পর্যন্ত তার ৮৩টি গবেষণাপত্র ইন্টারন্যাশনাল পিয়াররিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়