ডেস্ক

Published:
2021-06-12 20:20:38 BdST

পাকিস্তানে টিকা না নিলে মোবাইল সিম বন্ধ : গুজব অপপ্রচার বিশ্বাসীদের রুখতে কঠোর কর্মসূচি


 

ডেস্ক
___________________

গুজব, গজব,ধর্মীয় কুসংস্কারের রাষ্ট্র পাকিস্তানে করোনার টিকা নিয়ে অপপ্রচারের শেষ নেই।
সেখানের করোনা ও টিকা নিয়ে ধর্মীয় মোল্লাদের কুৎসিত প্রচার খোদ চিকিৎসক, হেকমতিয়ার, শিক্ষকসহ সমাজের অগ্রসর মানুষের অনেকে বিশ্বাস করে।
টিকায় মুসলমানদের জন্ম দান ক্ষমতা নষ্ট হবে। নারী গর্ভবতী হবে না। টিকারা মধ্যে বিল গেটসের চিপস বসানো রয়েছে, এমন অস্বাভাবিক সব মিথ্যা সেখানে বিশ্বাস করা হয়।

তাই টিকাদান নিয়ে মহা চ্যালেঞ্জে পাকিস্তান।
এর মধ্যে পাঞ্জাব অগ্রসর পদক্ষেপ নিয়েছে। টিকা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করতে সরকার দৃঢ় সংকল্পব দ্ধ।

পাকিস্তানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করেছে দেশটির সরকার। তবে টিকা নিতে আগ্রহী নন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশ কর্তৃপক্ষ টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানানো ব্যক্তিদের শাস্তি হিসেবে তাঁদের মুঠোফোনের সিম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানানো ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের ঘোষণা এটিই প্রথম নয়। এর আগে সিন্ধু প্রদেশের সরকার জানায়, সরকারি কর্মকর্তারা টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে জুলাই থেকে তাঁরা বেতন পাবেন না। করোনার তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার নড়েচড়ে বসেছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ এটি। কিন্তু সেখানে টিকা নেওয়ার হার খুবই কম।

মুঠোফোন বন্ধের হুমকি নিয়ে পাঞ্জাব সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র হামাদ রেজা আজ শুক্রবার বলেছেন, প্রথমে এটি শুধু একটি প্রস্তাব ছিল। কিন্তু মানুষ টিকা নিতে ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রীয় টেলিকম সংস্থা।
পাকিস্তানে কয়েক সপ্তাহ আগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ২২ কোটি মানুষের এই দেশে এ পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এসব টিকার বেশির ভাগ এসেছে চীন থেকে।

করোনাভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের শেষ নেই। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বন্ধ্যত্ব বা দুই বছরের মধ্যে মৃত্যু হবে, এমন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় দেশটিতে টিকা গ্রহণে মানুষের অনীহা বেড়ে যায়।
পাকিস্তানের ইয়াং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সালমান হাসিব এএফপিকে বলেন, পাকিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম। টিকার বিষয়ে মানুষ গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। ফলে সরকারের নেওয়া সচেতনতামূলক কর্মসূচি এ বিষয়ে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না। প্রত্যেককে টিকাদান নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনে আইন করতে হবে।

টিকা না নিলে মুঠোফোন বন্ধ হবে, এমন সিদ্ধান্তে অনেক পাকিস্তানির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লাহোরের বাসিন্দা গৃহকর্মী সাইমা বিবি বলেছেন, ‘আমি যদি মুঠোফোন ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে আমার জন্য কষ্ট হবে। কিন্তু আমি টিকার ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত।’


টিকা নেওয়া রাওয়ালপিন্ডির এক শিক্ষক ফারওয়া হুসেইন বলেছেন, ‘টিকা নিতে আপনি কাউকে বাধ্য করতে পারেন না।’

টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পাকিস্তানে কিছু নতুন পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের সিনেমা হল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আর যেসব জেলায় ২০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন, সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। গ্রামাঞ্চলের মানুষদের টিকা দিতে ধর্মীয় স্থানগুলোর বাইরে টিকাদানের ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র৶ও খোলা হবে।
পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাড়ে ২১ হাজারের বেশি মানুষ। তবে দেশটিতে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়