Dr. Aminul Islam

Published:
2021-01-11 16:49:24 BdST

ধর্ষণ নয়, এটা দুর্ঘটনা : দিহানের মা: অন্যদিকে ময়নাতদন্তে বিভৎস বর্বরতার প্রমাণ মিললো


 

 

ডা.শিবলী সোহায়েল আব্দুল্লাহ

__________________

রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত দিহানের মা ঘটনা সম্পর্কে একটি জাতীয় দৈনিকে তার নিজের বক্তব্যে বলেন, "তার সন্তান ধর্ষণ করতে চায় নি।  এ ঘটনা নিতান্তই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে । "

অন্যদিকে ব্রুটাল রেপের শিকার কিশোরীর শরীরে নজিরবিহীন বিকৃত বর্বরতার প্রমাণ মিলেছে। দিল্লির নির্ভয়াকান্ডের মত বর্বরতা হয়েছে বলে অভিযোগ। 

এদিকে দিহানের ব্রুটাল বিকৃত যৌনাচার নিয়ে নেটিজেনদের একটি সংঘবদ্ধ অংশ দিহানের পক্ষ নিয়ে নানা বয়ান দিয়ে চলেছে।  তারা দোষ চাপাচ্ছে নিহত কিশোরীর ওপর। কিশোরী শিক্ষা, পরিবার নিয়ে নানা বিকৃত মিথ্যাচার করছে। এই অংশটি নারীশিক্ষা বিরোধী বলে ওয়াকিবহালরা জানান।

মাস্টার মাইন্ড স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ নেটিজেনদের ওই  সব অপপ্রচার ও গুজবের তীব্র নিন্দা দিহানের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে মানববন্ধনে। 

দিহানের পক্ষ সংশ্লিষ্টদের দাবি, সে ভালো ছেলে ছিল। ইংরাজি স্কুলের লিবার্টিতে এটা সে করেছে। দিহান ও তার পরিবার  ধার্মিক ছিল। দিহান নামাজ রোজা পালন করতো।যা তার ফেসবুক পেইজেই প্রমাণ রয়েছে। নিয়মিত সে ভালো ভালো ধর্মীয় বানী প্রচার করতো।সংঘদোষের সে শিকার। এটা নিতান্তই দুর্ঘটনা মাত্র।

অন্যদিকে ব্রুটাল রূপের শিকার কিশোরীর শরীরে নজিরবিহীন বিকৃত বর্বরতার প্রমাণ মিলেছে।  বড় আকৃতির কিছু একটা ভিক্টিমের রেক্টামে পুশ করানোর ফলে তার যৌনাঙ্গ ও রেক্টাম ফেটে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং সে মারা যায় বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুশকার ময়নাতদন্ত হয়। সেখানকার ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বাভাবিক পেনিস দ্বারা রেক্টাম ও যৌনাঙ্গ ব্যবহার করলে এতটা ভয়াবহ পরিণতি হওয়ার কথা নয়। শরীরের নিম্নাঙ্গে ‘কোন ফরেন বডি সাইজ’ কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সেখানে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার পোস্টমর্টেম জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, পেনিস (পুরুষাঙ্গ) দ্বারা এই ইনজুরি মোটেও সম্ভব না। ওটা পেনিসের বাইরে অন্য কিছু ছিল।

যোনিপথ ও পায়ুপথ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ভুক্তভোগীর মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা এই চিকিৎসকের। 

দিহানের মায়ের বক্তব্য 

 

একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ও প্রেরিত ইমেইল  বার্তায় দিহানের মা লিখেছেন, গত ৭ জানুয়ারি আমার বাসায় আমার ছেলে দিহান ও ওর বান্ধবী অরনা আমিন-এর ঘটনায় আমি হতবাক। একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। এরপর গত দু’দিন আমি কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলিনি। কারণ, আমি পুরো ঘটনাটিকে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করেছি। দিহানের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমার ছেলের ধর্ষক এবং হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা মা হিসেবে জানার চেষ্টা করেছি। কারণ, একজন নারী হিসেবে কোনো কিশোরীর অসম্মান হোক বা ধর্ষিত হোক সেটা কখনো চাই না।

৭ জানুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আমি আমার অসুস্থ পিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য দিহানকে বাসায় একা রেখে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হই। আমার অন্য ছেলে নিজের কর্মস্থলে ছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি মডার্ন হাসপাতালে দিহানের বান্ধবী মারা গেছে, সে কারণে দিহানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দ্রুত ঢাকায় এসে দেখি পুলিশ আমার বাসায়। জানলাম মেয়েটি আমার বাসায় দিহানের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধর্ষিত হয়েছে এবং মারা গেছে।

মা হিসেবে আরও আগে থেকেই একটু আন্দাজ করতে পেরেছি, আমার ছেলে কোনো একটি সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু কোন মেয়ের সঙ্গে, তা জানা ছিল না। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মেয়েটির "Aurna Amin" নামের ফেসবুক আইডিতে দিহানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি, দিহানকে নিয়ে কবিতা লিখা ইত্যাদি দেখে মনে হলো এই মেয়েটির সঙ্গেই দিহান সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি ধারণা করছি, আমি বাসা থেকে বের হওয়ার পর দিহান মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটি আমার বাসায় আসে। দিহানের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক ছিল বিধায় মেয়েটি আমার বাসায় এসেছিল।


আমি মনে করি, ধর্ষণ বা হত্যার উদ্দেশ্যে দিহান মেয়েটিকে বাসায় ডাকেনি। একজন আরেকজনকে ভালোবাসে, সেই হিসেবে একান্তভাবে সময় কাটানোর জন্যই হয়তো ডেকেছিল। উভয়ের বয়স কম, একজন নাবালিকা এবং আমার ছেলেরও বয়স ১৮ বছর ৭ মাস অর্থাৎ কিশোর। আবেগের বসে উভয়েই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হয়েছে তা নিতান্তই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। আমার ছেলে ধর্ষক বা হত্যাকারী হলে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করত কিন্তু সে তা করেনি। সে নিজে গাড়ি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মেয়েটির মাকে ফোন করেছে, পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেছে।

আমার ছেলে যদি মেয়েটির সঙ্গে অন্যায় করে তাহলে একজন নারী হিসেবে আমিও আমার ছেলের যথাযথ বিচার হোক সেটা চাই। কিন্তু মেয়েটির ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা এবং একমাত্র শারীরিক সম্পর্কের কারণেই রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এবং বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। বিচারের আগে আমার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়