Ameen Qudir

Published:
2019-10-23 20:17:14 BdST

যেভাবে যাদের হাতে খুন হলেন গরিবের ডাক্তার শাহ আলম: খুনীর যে পরিনতি হল



ডেস্ক
____________________


সীতাকুন্ডের কুমিরার গরিবের ডাক্তার খ্যাত চিকিৎসক শাহ আলম হত্যা রহস্যের সুরাহা হয়েছে।
সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালের বিশাল বেতনের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসে কুমিরায় হাসপাতাল করে রোগীদের সেবা দিতেন। তিনি বলতেন, দেশের মানুষর সেবা না করতে পারলে ডাক্তার হলাম কেন!
কিন্তু কতলবাজরা তাকে বাঁচতে দিল না। কিভাবে তিনি কাদের হতে কেন খুন হন তা জানা গেছে। কতলবাজদের মধ্যে একজন করুণ পরিনতির শিকার হয়েছে।


যেভাবে যাদের হাতে খুন হন ডা. আলম

লেগুনায় থাকা যাত্রীবেশী ছিনতইকারীরা চিকিৎসক শাহ আলমকে হত্যার পর সীতাকুণ্ডে মহাসড়কের পাশে ফেলে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
ঘটনার দিন রাতে শাহ আলম যে লেগুনায় করে বাসায় ফেরার পথে খুন হন, সেই গাড়ির চালককে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব কর্মকর্তারা এ দাবি করেছেন।

২২ অক্টোবর ২০১৯ ভোরে নগরীর স্টেশন রোড এলাকা থেকে লেগুনাচালক মো. ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকা থেকে লেগুনাটি জব্দ করা হয়।

বিকালে চালক ফারুক চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে’র আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানান র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার তারেক আজিজ।

গ্রেপ্তার লেগুনা চালক ফারুকগ্রেপ্তার লেগুনা চালক ফারুকগত শুক্রবার সকালে কুমিরা ঘাট ঘর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে উদ্ধার করা লাশটি শাহ আলম (৫৫) নামে এক চিকিৎসকের।
কুমিরায় নিজের চেম্বার থেকে রাতে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফেরার পথে তাকে খুন করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে দেয় গাড়িতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা।
ডা.শাহ আলম দীর্ঘ ৩০ বছর সৌদি আরবের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নিজের গ্রামের গরীব-অসহায় মানুষের চিকিৎসা দেবার মনোবাসনা নিয়ে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি সীতাকুণ্ডে নিজ গ্রামে শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার’ নামে মানসম্পন্ন একটি ক্লিনিক চালু করেন। কিন্তু তার মনোবাসনা বেশিদিন স্থায়ী হতে দেয়নি ঘাতকরা। নিহত ডা. শাহ আলম সীতাকুণ্ড কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরার মরহুম মাস্টার আজিজুল হকের ছেলে।


র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক আজিজ বলেন, “লাশ উদ্ধারের পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। মঙ্গলবার ভোরে স্টেশন রোড এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার ও তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়বকুণ্ড থেকে লেগুনাটি জব্দ করা হয়।”

তিনি বলেন, চিকিৎসক শাহ আলম কুমিরায় ‘গরিবের ডাক্তার’ নামে পরিচিত ছিলেন। সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি দেশে এসে কুমিরায় হাসপাতাল করে রোগীদের সেবা দিতেন।

বৃহস্পতিবারও তিনি চেম্বার সেরে ‘বিন মনসুর পরিবহন’ নামের লেগুনায় উঠেছিলেন চান্দগাঁওতে তার বাসায় ফেরার জন্য।

এই গাড়িতেই বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় ফিরছিলেন চিকিৎসক শাহ আলমএই গাড়িতেই বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় ফিরছিলেন চিকিৎসক শাহ আলমফারুকের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তারেক আজিজ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক শাহ আলম ওই লেগুনায় উঠার সময় চালক ছাড়া আর দুইজন যাত্রী ছিলেন। কে-বাই এলাকায় পৌঁছার পর আরও দুইজন উঠেন লেগুনাটিতে। রয়েল গেইট এলাকায় আসার পর গাড়িতে থাকা চারজন শাহ আলমের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
“ছিনতাইকারীদের সাথে চিকিৎসক শাহ আলমের ধস্তাধস্তি হয়। এসময় তারা শাহ আলমকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে ঘাট ঘর এলাকায় লাশ ফেলে দেয়।”

র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক আরও বলেন, শাহ আলমকে মারার আগে লেগুনাটিতে আরও কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছিল।

ওইদিন তারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করেছিল। শাহ আলমকে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার পর লেগুনাটি বাড়বকুণ্ডের দিকে চলে যায় এবং সাগর পাড়ে গিয়ে লেগুনাটি ধুয়ে ফেলে। খুনের পর মরদেহের পরিচয় যাতে শনাক্ত করা না যায় সেজন্য ডা. শাহ আলমের মুখ বিকৃত করে দেন ছিনতাইকারীরা। পরে কুুুমিরাস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মরদেহটি ফেলে পালিয়ে যান তারা।

 

হত্যাকারীর পরিনতি


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকায় র‍্যাব ৭ এর টহল দলের সাথে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ে চাঞ্চল্যকর ডা, শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ডাকাত দলের প্রধান নজির আহমেদ সুমন প্রকাশ কালু (২৬) নিহত হয়েছেন।

২৩ অক্টোবর ভোরে সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে এ বন্দুকযুদ্ধে ঘটনা ঘটেছে।

র‍্যাব ৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন পাঠক ডট নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল সহ দুটি অস্ত্র ও ২৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার উদ্ধার করে র‍্যাব ৭।

একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত ওমর ফারুকে দেয়া তথ্যের ভিক্তিতে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ডাকাত দলের মূল হোতা নজির আহমেদ সুমন প্রকাশ কালু আটকের জন্য সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে র‍্যাবের উপস্থিতি দেখে কালু ডাকাত তার সহযোগীরাদের নিয়ে
র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে ডাকাত দল পিছু হঠে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে কালু ডাকাতের গুলিবিদ্ধ লাশ এবং অস্ত্র পাওয়া যায়।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়