Ameen Qudir

Published:
2019-09-17 21:03:10 BdST

ছোট গল্পনানা রঙের মানুষ


ডা. নাহিদ ফারজানা
সুলেখক

_______________________________

"মেয়েটার ঘটে ঘিলু বলে কোন জিনিস নেই। এখনো সময় আছে,সামলাও মেয়েকে।দুই দিন পরপর কেলেংকারী। "
" মেয়েদেরকে মা সামলায়,বাপ না। নিজের দায়টা স্বীকার কর। কোনটা ভালো,কোনটা মন্দ, মেয়েকে তুমি শিখাতে পারোনি। ব্যর্থতা তোমার।"

 

আমাকে নিয়ে আলোচনাটা হচ্ছে। অালোচক আমার বাবা-মা।

 

অামি দোলন। মাঝেমধ্যেই আমাকে নিয়ে সংসারে অশান্তি, ঝগড়াঝাটি হয়। কেন হয়,তা অামার প্রায় বোধগম্য হয়না।

 

অাজকের বিষয়টা ধরুন। আমাদের বাসায় বড় অাপার শ্বশুরকুলের দাওয়াত। পঁচিশ জন মেহমান। বাবা-মা এলাহি অায়োজন করেছেন। উপলক্ষ হলো,অাপা-দুলাভাই -অাপার শ্বশুর -শাশুড়ী ওমরাহ করতে যাবেন। চারজনই হাজি। পার্থক্য, আপা এই প্রথম ওমরাহ করবে,অাপার শাশুড়ী তৃতীয় বার,দুলাভাই অার তাঁর বাবা চতুর্থবার।খেতে বসে খালুজান মানে অাপার শ্বশুর বললেন, "সংসার ধর্ম তো অনেক করলেন বেয়াই সাহেব, এবারে অাল্লাহর খেদমত করেন।"কথার সুরটা অামার ভাল লাগলো না।
"বাবা-মা দুজনেইতো হজ্জ করেছেন খালুজান।""তাতে কি! একবার করেই হয়ে গেল?এবারে আমাদের সাথে ওমরাহ করতে গেলে কি হত?""খালুজান,সামর্থ্য থাকলে হজ্জ একবার করলেই যথেষ্ট না?"
"দুই বার করলে ক্ষতি আছে?"অামি বুঝতে পারছি, বাবা-মা-ভাইয়া-অাপাদের চোখগুলো দিয়ে অাগুন বেরোচ্ছে। অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না,কিন্তু অামি অাগুনের তাপে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।"না মানে অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার তো! ঐ টাকাটা যদি অন্য কোন ভালো কাজে ব্যয় করা যেত,যেমন"-" যেমন" বলার পরে অামি অার কোন কথা বলার সুযোগ পেলাম না। একসাথে অনেকগুলো কথার তীরে ধরাশায়ী হয়ে গেলাম।" এই, বেশি বকবক করিস না তো। খাওয়ার সময় এতো কথা কেন? বাচাল একটা।যা এখান থেকে, পায়েসটা নাড়তে থাক।""ধর্ম নিয়ে লেকচার দিতে গেলে এ ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হয়।অাছে সেটা? কোরান-হাদিস পড়?"" ওমরাহ না করে ঐ টাকা দিয়ে কি করতে হবে?টাকা উড়াতে হবে?নতুন মডেলের অাইপ্যাড কিনতে হবে?"অবস্থা বেগতিক দেখে রান্নাঘরে অাশ্রয় নিলাম অার বড় কাঠের চামচ দিয়ে পায়েস নাড়তে লাগলাম।
কিন্তু খাওয়ার ঘর তখন উত্তপ্ত।"বেয়ান সাহেবা, মেয়েকে একটু অাদব কায়দা শেখান।কথা খুব বেশি বলে। অাপনার বড় কন্যাটি ছোট বোনের চেয়ে ভাল বটে, কিন্তু তারও কিছু জিনিস অামার পছন্দ হয়না।যেমন মুখে নেকাব দেয় না। অনেক বলেছি,শুনেনা।"

 

"খুব গরম লাগে অাম্মা।" বড় অাপার অপরাধী গলা শোনা গেল।" প্রথম প্রথম গরম লাগবে, তারপর অভ্যাস হয়ে যাবে।
বেয়াই-বেয়ানের কথার অবাধ্য হও,এতো ভারী লজ্জার কথা।" অাব্বার গলা কিছুটা কঠিন।অাপার শ্বশুর বললেন, "অামাদের রুবাইয়া অাগে কি ছিল?গরমে মাথায় কাপড়টাও রাখতে পারতো না।এখন এই মেয়ে ঘুমানোর সময়েও মনে হয় নেকাব খুলেনা।ছেলেমেয়ে মানুষ করতে হয় শক্ত হাতে,বুঝলেন বেয়ান সাহেবা?"রুবাইয়া অাপা মানে অাপার ছোট ননদের নাম। সারাজীবন শুনে এসেছি শিউলি। বছর চার ধরে শুনছি
রুবাইয়া। গত পাঁচ বছরেই দুলাভাইদের পরিবারে অভাবনীয় পরিবর্তন। দোতলা বাড়ি হয়ে গেল চারতলা, বাড়ি ছাড়াও শ্যামলীতে পাঁচ কাঠা জমি ছিল অাপার বিয়ের সময়,এখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মোট পঁচিশ কাঠা জমি। দুলাভাই এর বাবা একটা জাহাজও কিনেছেন নাকি। যা কিছু হচ্ছে সবই নাকি অাল্লাহ পাকের ইচ্ছা অার এক শক্তিধর পীরের দোয়া। পীর সাহেবের অাশীর্বাদের ফলে অাজকের এই রমরমা অবস্থা।অার্থিক অবস্থার সাথে সাথে বেশভূষা, নামধাম,অাচার-ব্যবহারেও অাকাশ-পাতাল পরিবর্তন।
বাড়ির সব মহিলারা কঠিন পর্দা করেন,বোরখা-নেকাব-চোখে জালি-হাত মোজা-পা মোজা। ঐ সময়ও অামি একটা কথা বলে ফেলে সবার বিরাগভাজন হয়েছিলাম। বিশ্বাস করেন,একদম সাদা মনে অামি বলেছিলাম কথাটা।
"কোরান শরীফে বলা অাছে, মুখমন্ডল অার হাত-পায়ের পাতা না ঢাকলেও চলে।"অাপার শাশুড়ি চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিলেন, "সব ঢাকা থাকলে, বেগানা পুরুষ না দেখলে শরীরে জ্বালাপোড়া করে বুঝি?"ছিঃ ছিঃ! কি বিশ্রী কথা। ভেবেছিলাম মহিলার মুখই অার দেখবো না,কিন্তু দেখতে হলো,দেখতে হয়,অাপন বোনের শাশুড়ী বলে কথা, অাবার একই এলাকায় থাকি।অাপার শাপলা নাম পাল্টে হলো রুকাইয়া, ননদ শিউলি হয়ে গেল রুবাইয়া, অারেক ননদ শিমুল হল সুমাইয়া।এইযে এত পরিবর্তন -অার্থিক পরিবর্তন তো গভীর রহস্যময়, অামার নিজের বাবা-মার কোন চিন্তা ভাবনা নেই। তাঁদের বড় মেয়েটা অাসলে কেমন অাছে, নিজের নাম-স্বকীয়তা-স্বাধীনতা সব হারিয়ে কিভাবে তার দিনগুলো কাটছে, তা নিয়ে জন্মদাতা ও দাত্রী নির্বিকার। সারা শরীর পর্দায় ঢাকা,কিন্তু প্রাচুর্য তো ঢেকে রাখতে ভাল লাগেনা সবার। তাই ওরা বোরখার উপরেই অনেক গয়না পরে, মোটা চূড়, গাছি গাছি চুড়ি, সীতাহার, মফচেন, হাতমোজার উপর দিয়ে গাবদা গাবদা অাংটি। অাপার গা ভরা গহনা দেখে বাবা-মায়ের খুশি অার ধরেনা।অাগের কথায় ফিরে অাসি। বড় অাপার বাহিনী দাওয়াত খেয়ে ও বাক্স ভরে নিয়ে বিদায় হওয়ার পরে অনেক বকা খেলাম। তারপরে বাবা-মায়ের মধ্যের ওই বাদানুবাদ যা অাগেই বলেছি।অাজ অাঠারোটা পদ রান্না হয়েছিল। মিষ্টি অাইটেম ছাড়াই। অামরা গলা পর্যন্ত খেলাম,ঐ বাড়িতে পাঠালাম, তাও ডাঁই মারা খাবার। মা কে খুব নরম গলায় বললাম,"একটু বেশি করে খাবার বস্তিটাতে বুড়ো দারোয়ান ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দিই মা? অাপা ওমরাহ করতে যাচ্ছে, ওদের দোয়া অাপার কাজে লাগবে।""দান-দেহাজ নিজের সংসারে কোর,এখানে মাতব্বরি কোরোনা, ডীপে থাকলো, বেশ কয়েকদিন ভাল থাকবে, নিয়ে থুয়ে খেও।""দারোয়ান ভাইকে একটু খাবার দাও না,মা।"
"কেন,দারোয়ান অামার কোন কুটুম্ব? "মনটাই খারাপ হয়ে গেল। দারোয়ান ভাই বুড়ো মা,বৌ,তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাশের বস্তিতেই থাকে।কি হয় ওদের একটু ভাল-মন্দ খাবার দিলে?মিষ্টি এ বাড়ির কেউ খায়না। কিন্তু বড় দুলাভাইরা এই মিষ্টিই সাথে করে নিয়ে অাসেন। সকালে মা দরাজ হাতে দারোয়ান চাচা অার দুই ছুটা বুয়াকে সব মিষ্টি দিয়ে দিলেন।মায়ের মুখে দানের অানন্দ।ছোট ভাইয়া অার অামি জমজ। ও রাতে খেতে বসে
খুবই মশলাদার একটা নিউজ দিল। ওর বন্ধু শিশির ভাই নাকি একটা পার্টিতে শিউলিকে দেখেছে। সে ওখানে বন্ধুদের সাথে নাচানাচি করছিল। শিশিরের পরিচিত নাইম নাকি শিউলির বয়ফ্রেন্ড। অার অতি অাশ্চর্যের কথা,ঘটনাটা অাপার শ্বশুরকুলের সবাই জানে, তারা খুশিও। নাইমের বাবা অাপার শ্বশুরের থেকেও মেলা বড়লোক। ওরা অাবার পর্দানশীন মেয়ে পছন্দ করেনা। তাই শিউলি সবসময় সালোয়ার-কামিজ, টপস-স্কার্ট পরে, তবে অাত্মীয়-স্বজনের চোখ এড়িয়ে। বিয়েটা পাকা হোক, তখন সে ইচ্ছা মতো ড্রেসঅাপ করতে পারবে, ঘুরতে পারবে,ফিরতে পারবে,চাই কি পছন্দ মতো পানীয়ও খেতে পারবে,কারণ স্বামী যা চাইবে শিউলিকেতো তাই করতে হবে,তাই না?অাত্মীয়-বন্ধুদের বলার কিছু থাকবে না।খাওয়ার টেবিলে সবাই কলকল করছে।কত সমালোচনা, কত ব্যাঙ্গাত্মক কথা। অাপার শ্বশুর বাড়ির কারোর সামনে এসব নিয়ে এরা কোন কথা বলবে?কখনো না।পিছনে তাহলে এতো কথা কেন ভাই?রাত দুপুরে কে অাসলো? অবশ্য বেশি রাতও হয়নি,এগারোটা বাজে।দরজা খুললাম। এই হাউজিং সোসাইটির চারজন চাচা। কমিটির মেম্বার। অামাদের হাউজিং কমপ্লেক্সে মসজিদের নতুন করে কাজ হচ্ছে। মসজিদের অাগের থেকেই ভালো অবস্থা ছিল। অনেক বড় হলরুম, চারটা এসি, অনেকগুলো ফ্যান,দামী কার্পেট। তাও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মন ভরলো না।
মসজিদ অারও সুন্দর করা হবে। তাই পুরো মেঝেতে মার্বেল পাথরের কাজ চলছে, দেওয়ালে বাজারের সবচেয়ে দামী টাইলস। বাবা পঞ্চাশ হাজার চাঁদা দিলেন। চাচারা মারহাবা বলে প্রশংসা করলেন।কিছুদিন অাগে এই সোসাইটির একজন গার্ডের হার্ট অ্যাটাক হয়। বহু পুরানো গার্ড। বড় অপারেশন লাগবে।বড় অ্যামাউন্টের টাকা লাগবে। সবাই মিলে পঞ্চাশ হাজার দিল। এর বেশি দেওয়া সম্ভব না। অামি বাবাকে কত অনুরোধ করেছিলাম,"বাবা, তুমি অার চাচারা মিলে অারও পঞ্চাশ হাজার দাও।" উনারা দেন নি। একজনের জন্য এতো বেশি করা ঠিক না। যেহেতু
তিনি অার ভাল সার্ভিস দিতে পারবেন না, তাই তাঁর দেনাপাওনা মিটিয়ে চাকরি থেকে ছাঁটাইও করা হলো। অামি লুকিয়ে অামার গলার দুই ভরি হার,একভরির একজোড়া সোনার দুল, বড় অাপা তার বিয়েতে পাওয়া উপহার থেকে অামাকে দিয়েছিল, বিক্রি করে অাশি হাজার টাকা গার্ড চাচার হাতে দিই। তাঁকে দিয়ে কসম কাটাই,তিনি যেন অপারেশনটা করান অার অামার কথা ভুলেও কাউকে না বলেন।তাহলে বাবা-মা অামাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।ভার্সিটিতে অামার এক ভালো বন্ধু অাছে,সাব্বির। অন্য কিছু ভাববেন না যেন। অামি তখন অামার জমা টাকা
ভাঙিয়ে ভার্সিটির এক অায়ার ছেলের পড়ার খরচ চালাচ্ছিলাম। যে সে পড়া না, ছেলে খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করে বুয়েটে চান্স পেয়েছে।স্কুল জীবন থেকে টিউশনি,দিনমজুরের কাজ, মাটি কাটার কাজ,হোটেলে কাস্টমার সামলানোর কাজ করে সে অাজ এই অবস্হানে এসেছে। একে সাহায্য না করে পারা যায়? সাব্বিরের কাছেও কিছু টাকা চাইলাম।ও দিলোনা। সাব্বির জানালো, ও প্রতি মাসে মানুষের জন্য অনেক ব্যয় করে।ওর অাম্মার নির্দেশ মতো ও সাধ্য অনুযায়ী মসজিদ অার মাদ্রাসায় সাহায্য করে। এতে সোয়াব হবে। ছাত্র মানুষ, এর বেশি টাকা তার কোথায়?বড় অাপারা ওমরাহ সেরে ফিরে এসেছে।
মা জিজ্ঞেস করলেন,"এবারে সোনাদানা কিছু কিনেছিস মা?""অন্যদের কথা জানি না মা, তোমার জামাই অামাকে একটা নেকলেস, ৬ টা সলিড চুড়ি কিনে দিয়েছে।""সোনা কত পড়লো?"
"বেশি না মা,২১ ভরি। "
মায়ের মুখ ঝলমল করতে থাকলো।রাতে খাওয়া দাওয়া করে অাপা-দুলাভাই চলে গেল।অাপা মায়ের জন্য চেইন,অামাদের দুই বোনের জন্য ঝুমকা, বাবা অার ভাইদের জন্য অাতর,ঘড়ি, ভাবীর জন্য একটা শাড়ি নিয়ে এসেছে। অামি অাপাকে বললাম,"এতো ভারী সোনার ঝুমকা পড়লে অামার কান ছিঁড়ে যাবে অাপা, অামার ছোট মুখের সাথে মানাবেও না,এটা বরং ভাবীকে দিয়ে অামি শাড়িটা নিই।"মা হিংস্র গলায় বললেন, "এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিব।"

 

বোনরা বললো,"তোর এতো লোক দেখানো স্বভাব কেন রে, দোলন?"অাপা বললো,"মা,তুমি অার বাবা ওমরাহ করে অাসো,যাও। ""যাবো রে মা, অাল্লাহ পাকের ঘরে কার না যেতে ইচ্ছা করে?"
"সামনের বছরই যাও।টাকাপয়সা নিয়ে ভেবো না।"বড় ভাবী অামার ভারী লক্ষ্মী মেয়ে। দেখতেও পরীর মতো। সে খুব হৈ-হুল্লোড় করে তার উপহারটা নিল।রাত দুইটা বাজে। সবাই ঘুম। বড় বারান্দায় যেয়ে দেখি, ভাবী বেতের চেয়ারে ক্লান্ত ভংগীতে বসে অাছে। অারও কাছে যেয়ে দেখি, চোখের পানিতে তার দুই গাল ভেজা।হবে না কেন?সবার জন্য দামী দামী উপহার,সেখানে ভাবীর জন্য নাম কা ওয়াস্তে একটা উপহার। অপমানতো লাগবেই। তার উপরে বাবা-মা-বড় ভাইয়া সবাই যেই খারাপ ব্যবহার করে!"কি হয়েছে ভাবী,অামাকে বলো। প্লিজ। "হাতে পায়ে ধরার পরে যা জানা গেল,অামি অাকাশ থেকে পড়লাম।বড় দুলাভাই নির্জন জায়গা পেয়ে ভাবীর শরীরে হাত দিয়েছে।
"কেন চিৎকার করলে না তুমি?কেন লোকটাকে কষে এক থাপ্পড় লাগালে না?""কেউ অামাকে বিশ্বাস করতো না দোলন। মনে মনে বিশ্বাস হলেও উপরে প্রকাশ করতো না। তোমার ভাই তো না ই। ""পড়ে অাছো কেন এখানে? এই নরক থেকে পালিয়ে যাও।""তাই হয়তো যাবো দোলন, অারেকটু সাহস যোগাড় করে নিই।"ভাবী তাও থেকে যায়, তার একটা ছেলেও হয়, বড় অাপার শ্বশুর কেমন করে যেন এম.পি হন, পায়জামা-পাঞ্জাবির বদলে গরম কালে স্যুট-টাই ও পরে থাকেন, তাঁর স্ত্রী গরম বলে অার বোরখা,নেকাব পরতে পারেন না, তাঁর শাড়ি-গয়না-অাউটফিটের প্রশংসা পরিচিতদের মুখে মুখে, সমাজসেবার জন্য পাঁচখানা পদক পেলেন এই বছর, অাপা-শিউলি
সবাই ঝলমলে পোশাক অার গয়না পরে থাকে,দুলাভাইকে মুম্বাইয়ের নায়কদের মতো দেখায়, ফলো অাপ অার চিকিৎসার অভাবে গার্ড ভাইটা মারা যায়, দারোয়ান চাচার বৌএর ক্যান্সার হয়,অার চিকিৎসার অভাবে সেও ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করে অশেষ যন্ত্রণার পর, মা বড় অাপার শ্বশুরের দয়ায় পুলিশের হাত থেকে বেঁচে যায়, অামাদের ছুটা বুয়া মিলিকে মা অাদর করে সাতদিনের পুরানো পোলাও,মাংস বাক্স ভরে বের করে দিয়েছিল ফ্রিজ থেকে, সেটা খেয়ে মিলির বাড়ির সবার ভেদবমি শুরু হয়,অার পাঁচ বছরের মেয়েটা মরেই যায়,সাব্বির অার তার পরিবার সওয়াবের জন্য প্রতিবেশীর মসজিদের পাশে বিশাল একটা মসজিদ তৈরি করে, গ্রামের বাড়িতে অারেকটা মসজিদ ও মাদ্রাসা বানায়, কিন্তু গ্রামবাসীদের অাবদারের ও প্রয়োজনের মুখে কোন টিউবওয়েল বসিয়ে দেয়না। ভয়ংকর ঝড়ে ঘরদুয়ার সব হারিয়ে গ্রামের কেউ কেউ যখন কাতর হয়ে সাব্বিরের মা -ভাইদের পায়ের উপরে পড়ে, তখন অাফিয়া বেগম ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠেন,"কি ভাবো অামাদের? জমিদার? "অার অামি অাছি অাগের মতোই। ঘটে ঘিলু নেই, কাকে কি বলতে হবে, কাকে কেমন ভাবে অাপ্যায়ন করতে হবে সেসব বিষয়ে অর্বাচীন এক মানবী। নির্বোধ, নিতান্তই নির্বোধ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়