Ameen Qudir

Published:
2019-08-09 08:21:57 BdST

পরিবারের অমতে বিয়ে,বাংলাদেশবন্ধু সুষমার বর্ণময় জীবনের উত্থানের কাহিনি



ডেস্ক/ সংবাদ সংস্থা
_______________________


ভারতীয় রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন! তিন ঘণ্টা আগেও টুইটারে ‘অ্যাক্টিভ’ ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধে ঠিক ৭.২৩ মিনিটে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, “এই দিনটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।” অপেক্ষা মিটতেই যেন বিদায় নিলেন তিনি। জীবনের শেষ টুইটটি করার পর। হঠাৎই বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছোটা এবং চিকিৎসকের আপ্রাণ চেষ্টাকে বিফল করে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়া। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব শেষ। টিভির স্ক্রোল থেকে শুরু করে মোবাইলের আপডেট। বিগ ব্রেকিং–প্রয়াত সুষমা স্বরাজ।

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী। তিনবারের বিধায়ক। ন’বারের সাংসদ। দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। ৬৭ বছরের সুষমা স্বরাজের গোটা কেরিয়ারটাই যেন একটা বর্ণময় কাহিনি। প্রতি অধ্যায়ে চমক। উত্থান এবং শুধুই উত্থানের অবিশ্বাস্য নজির। বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর জুড়িদার মেলা ভার। সংসদের অলিন্দই হোক বা আন্তর্জাতিক মঞ্চ-সুষমার মিষ্টি হাসি, সুব্যবহার, আন্তরিক এবং অমায়িক কথন, তাঁকে বরাবরই অন্যদের থেকে ব্যতিক্রমী করে রেখেছিল। বিজেপির ডাকসাইটে নেত্রী হলেও শাসক থেকে বিরোধী শিবির, সকলের কাছেই প্রিয় পাত্রী ছিলেন। আর এই ক্যারিশমা মৃত্যুর পরও জিইয়ে রাখতে ১০০ শতাংশ সফল সুষমা।

১৯৫৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে জন্ম সুষমার। সংস্কৃত এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর সুষমা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। হরিয়ানা থেকে পরপর তিনবার সেরা বক্তা (হিন্দি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকী, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও এক বছর সেরা বক্তার সম্মান অর্জন করেছিলেন। তখনই আভাস মিলেছিল তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতার, যা পরে রাজনীতিতে সুষমার ট্রেডমার্ক স্টাইল হয়ে দাঁড়ায়। সুষমা তিন বছর আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের এসডি কলেজে এনসিসির সেরা ক্যাডেটের সম্মান পেয়েছিলেন। সেরা শিক্ষার্থীর পুরস্কার এবং স্বর্ণপদকও জিতেছিলেন।

১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে প্র‌্যাকটিস শুরু করেন সুষমা। তবে তারই আগে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য হিসাবে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সুষমা। দেশে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পর যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। অল্প দিনেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিক হিসাবে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ন’বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন সুষমা স্বরাজ। ১৯৭৭ সালে হরিয়ানার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন।

সুষমা স্বরাজই ছিলেন দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ২০০৩ সাল থেকে দেড় বছর তিনি ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। তারও আগে ২০০০ সাল থেকে তিন বছরের জন্য সুষমা ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুষমার চওড়া কাঁধেই ন্যস্ত হয়েছিল বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব। যা তাঁকে ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে।

ইন্দিরা গান্ধীর পর সুষমাই দেশের দ্বিতীয় মহিলা বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু যা তাঁকে আর সবার থেকে আলাদা করেছে, তা হল মন্ত্রিত্বের পিছনে তাঁর সহানুভূতিশীল চরিত্র। বিদেশ-বিভুঁইয়ে কেউ বিপদে পড়লেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কাছে সাহায্য চাইতেন সাধারণ মানুষ। আর দ্রুত তাতে সাড়া দিয়ে, তাঁদের মন জিতে নিতেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। ২০১৯ লোকসভা ভোটে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি সুষমা।

পরিবারের অমতে বিয়ে

ভাল বন্ধু-সহকর্মী এরপর ঘরনি, চুয়াল্লিশ বছরের সম্পর্কে ছেদ৷ স্বামী-পরিজনদের রেখে অমৃতলোকের পথে সুষমা স্বরাজ৷ প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে বড্ড একা স্বামী স্বরাজ কৌশল৷ একসঙ্গে কাটানো মুহূর্ত আজ শুধু স্মৃতিই৷ আর বুদ্ধিদীপ্তভাবে তাঁর টুইটের জবাব দেবেন না, একথা ভেবেই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন তিনি৷

[আরও পড়ুন: ছোট্ট শহর থেকে দিল্লির অলিন্দে, জেনে নিন সুষমার বর্ণময় জীবনের উত্থানের কাহিনি]
ছোট থেকে পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ ছিল সুষমার৷ সংস্কৃত এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন তিনি৷ এরপর ভাবেন আইন নিয়ে পড়বেন৷ তিনি ভরতি হন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই সহপাঠী হিসাবে পান স্বরাজ কৌশলকে৷ ভাল বন্ধু হয়ে যান দু’জনে৷ একসঙ্গে পড়াশোনা করার সুবাদে বই-খাতা আদানপ্রদান লেগেই থাকত৷ কিন্তু বই-খাতা আদানপ্রদানেই আটকে থাকলেন না দু’জনে৷ হয়ে গেল মন দেওয়া-নেওয়াও৷ কলেজ জীবন থেকেই একে অপরের সঙ্গে পথচলার অঙ্গীকার করে ফেলেন সুষমা-কৌশল৷ কিন্তু পরিবার মেনে নেয়নি তাঁদের সম্পর্ক৷ তবে যাই হোক না কেন, দু’জনে হাত ছেড়ে হাঁটার কথা ভুলেও ভাবেননি কেউ৷ তাই তো প্রায় পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই ১৯৭৫ সালের ১৩ জুলাই পরিণতি পায় সুষমার প্রেম৷ স্বরাজ কৌশলের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুষমা৷
সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে কাজের চাপ৷ আইনজীবী থেকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন সুষমা৷ হয়ে উঠেছেন প্রকৃত অর্থে জননেত্রী৷ কর্মসূত্রে বহু বছর ভিন শহরে দিন কাটিয়েছেন ব্যস্ত দম্পতি৷ তবে সম্পর্কের উষ্ণতা ছিল একইরকম৷ প্রতি মুহূর্তে নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করেছেন সুষমা-স্বরাজ কৌশল৷ বারবার প্রেমে পড়েছেন একে অপরের৷ তাঁদের মিষ্টি মধুর সম্পর্কের সাক্ষী নেটিজেনরাও৷ দু’জনের টুইটে মিলত গভীর ভালবাসার প্রকাশ৷ বেশ কয়েক বছর আগে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় সুষমার৷ তাই সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেননি বিজেপির দুঁদে নেত্রী৷ এই ইস্যুতে টুইটে স্ত্রীকে পরামর্শ দেন স্বরাজ কৌশল৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমার মনে পড়ছে মিলখা সিং একদিন দৌড় থেকে ছুটি নিয়েছিলেন৷ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ৷’’

গত ১৩ জুলাই ছিল সুষমার বিবাহবার্ষিকী৷ ৪৪তম বিবাহবার্ষিকীও পালন করেছিলেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী৷ বহু বছর হাতে হাত রেখে কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন সুষমা-কৌশল৷ তবে এভাবে ছন্দপতন মেনে নিতে পারছেন না স্বরাজ কৌশল৷ প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তিনি৷

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়