Ameen Qudir

Published:
2019-07-09 20:51:34 BdST

স্নেহাধিক্য ও মেদাধিক্য বহনকারী নারী ও পুরুষের জন্য প্রেসক্রিপশন


 


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

________________________________

চাদ্দিকে ১২ - ১৩ বছর থেকেই আরম্ভ করে চল্লিশোত্তর, পঞ্চাশোত্তর অবধি কেন এত স্নেহাধিক্য? বহু মানুষ, পুরুষ, নারী নির্বিশেষে প্রত্যেকেই অন্তত ১০- ২০ -২৫ কেজি মেদ বহন করে চলেছেন। আধুনিক কেতার পোষাকে আরো স্পষ্ট হচ্ছে তাদের মেদাধিক্য।

ক্রমশ: বিশাল গতিতে বাড়ছে এই স্থূলতা।

পরিশ্রমের অভাব কারণ নয় কিন্তু।

আমার পরিচিত একটি বরফের ব্যবসা করে যুবক, প্রচুর পরিশ্রম করে প্রতিদিন, সকলের চোখের সামনে।
বরফের চাংড় টেনে নামায় ভ্যান থেকে, একটা লোহার হুকে বরফ টিকে বিঁধে। কাঠের গুঁড়ো মোড়া, যাতে সহজে না গলে।
তারপরে মাছের দোকানে, মাংসের দোকানে সরবরাহ করা। হালকা নয় বরফ মোটেই।
কিন্তু মুখ, পেট সর্বত্র চর্বিতে সম্পৃক্ত। জিজ্ঞেস করলুম বয়েস, বললে ২৮। যে কেউ দেখলে ৪০ বলবে।
আগে ওর পিতা এই একই কাজ করতো। সে ও এমনি স্বাস্থ্যকর ছিলো বটে।
হটাৎ একদিন মাথার শিরা ছিঁড়ে সে চিরতরে চলে গেল নেহাত অসময়ে।
বিহারি হলেও বাবা, ছেলে দুজনেই সন্ধ্যের পরে বাংলা ভালোবাসে।
সে হোক তবুও এত পরিশ্রম করেও এত মেদ,
সর্বাঙ্গে?? কেন?

আসলে পরিশ্রম করলেই প্রবল খিদে পায়, আর, এদের প্রিয় খাদ্য কচৌরি আর ডাল।
এই টিফিন ধরা যাক দিনে ৪-৫ বার।

আর দুপুরে ভাত, চওখা, মাংস বা ডিম।

রাতে তো এরা রাজপুত্তুর, চাঁট আর মাংস রুটি তো থাকবেই।
রোজগার কম নয় নেহাত, কম হলো আয়ু। চল্লিশ পের হলেই একদিন হটাৎ নেবে ছুটি হয় বরাবরের জন্যে না হয় অশক্ত হয়ে পড়ে রইবে বিছানায়।

এদের না হয় শিক্ষার আলোক পড়ে নি, কিন্তু যারা শিক্ষায় আলোকিত, তাদের এই পরিশ্রম নেই সত্যি, নেই এই জীবনযাপন, তবুও মেদাধিক্য যে আজ ঘরে ঘরে , বহুল মাত্রায়।

এদেরি অনেকে জিম এ গিয়ে ব্যায়াম করে, বাতানুকূল পরিবেশে সুদেহ বা সুদেহিনী হওয়ার অলীক স্বপ্ন দেখেন।

আহা, জিম তৈরী করতে কতো খরচ বলুন তো। এটা তো ব্যবসা। ওরা লাভ করবেন না নাকি? মেনটেনেনস ই বা কম কি?

ওদের লাভ হলো। কিন্তু যারা ঘাম ঝরালেন, অর্থ ব্যয় করলেন, তাদের?

যেদিন আর যাওয়া হয়ে উঠবেনা, পুনর্মুষিকো ভব:।
নিয়ে ফিরবেন একাধিক অসুখ যাদের বলা হয় মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়বেটিস, PCOD, গাউট, স্থূলতা, অস্টিও আর্থরাইটিস, থাইরয়েড ডিসফাংশান, ডিসলিপিডিমিয়া, হার্টের অসুখ ( অকালে) ,
আরো বয়েস বাড়লে সম্ভাবনা বাড়ে কয়েক রকম ক্যানসার ও আরো পরে আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়া।

জানেন কি মেয়েদের ৮০% PCOD তে ভোগেন, কিন্তু জানতে পারবেন তাদের মাত্র ২০%। ১৫ বছর বয়সের কিশোর কিশোরীদের মধ্যে টাইপ টু ডায়বেটিস প্রচুর।

তবে আশার কথা, ভরসার কথা,
চিকিৎসা সম্ভব। একটু দীর্ঘকালীন। কিন্তু চিকিৎসা সম্ভব।

নাহ, আমি উপসর্গ গুলির চিকিৎসা র কথা বলিনি, বলছি এই সব অসুখের মূল কারণের চিকিৎসা র কথা ।
সৌভাগ্যক্রমে এই সব অসুখের মূল কারণ একই। এটি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এর কারণ রক্তে ইনসুলিনের অধিক মাত্রা, প্রায় সারাক্ষণ ই।

খাদ্যাভাসে র পরিবর্তন এবং কিছু ওষুধের প্রয়োগে এই গুলির অনেককটিরই Reverse করা সম্ভব।
হ্যাঁ, কিছু নিয়ম ও মেনে চলতে হবে বৈকি।।


__________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়