Ameen Qudir

Published:
2018-07-25 17:51:36 BdST

হুমায়ুন আহমেদ আমাদের জন্য একটা বড় কাজ করে গেছেন



ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
________________________________

হুমায়ুন আহমেদ আমাদের জন্য একটা বড় কাজ করে গেছেন। কথা সাহিত্যকে একধরণের মুক্তি দিয়েছেন। জটিল ও যৌগিক বাক্যের হাত থেকে মুক্তি। গভীর জীবনবোধকে সরল বাক্যচয়নে উপস্থাপন করেছেন। তিনি গদ্য লিখেছেন কথা বলার মত সরল স্বাদু ভংগিতে৷ মানুষের কথার ভংগিতে যে সারল্য থাকে তাকেই তুলে এনেছেন লেখায়।
কথ্য ভাষার প্রচুর আটপৌরে শব্দ ও বাক্য তিনি সাহিত্যে নিয়ে এসছেন৷ যেটা পাঠককে একধরণের আরাম দিয়েছে।

হুমায়ুনের রসবোধের সাথে তুলনা করা যায় এরকম লেখক বাংলা সাহিত্যে হাতে গোনা৷ শিবরাম, পরশুরাম, ত্রৈলোক্যনাথ, সৈয়দ মুজতবা আলী এইতো। আর নাম খুঁজে পাবেননা। উপরের সবাই হিউমার ক্রিয়েট করতেন দশটা বাক্যে৷ হুমায়ুন একটি বা দুটি বাক্যে।

হুমায়ুন আহমেদ প্রচুর আঞ্চলিক শব্দ ও বাক্যকে অবলীলায় উপন্যাসে চালিয়ে দিয়েছেন। এতে পাঠক রস ও জীবন ঘনিষ্টতা উপভোগ করেছে। তার গল্পের বিষয়বস্তুকে হালকা বলা যায়না। আবার লেখার ভাষা ও ভংগিকে খুব উঁচুমাপের সাহিত্যও বলা যায়না। তার উপর দোষ হলো তিনি জনপ্রিয়। ফলে তার সাহিত্যের মূল্যায়ন করা বিপদ তো বটেই।

তো আমরা যদি বিশ্বাস করি সাহিত্যের সুনির্দিষ্ট সংগা হয়না তাহলে বলতে হবে এই সহজ ভংগিটাই বিরাট এক আবিষ্কার হুমায়ুনের জন্য৷ তার চরিত্র নির্মাণ চমকপ্রদ। চরিত্রগুলো ইতিবাচক আর আনন্দমুখর।

তবে তিনি খুব বেশি এক্সপেরিমেন্টাল ছিলেননা। এটাতো তার দুর্বলতাই। একই বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছেন।

নাটক নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি রুচিহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বিশেষ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য যেগুলো বানিয়েছেন। অর্থবিত্ত, স্বাচ্ছন্দর প্রতি তার মোহ ছিল সেটা বোঝা যায়। ফলে কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন না। এই মোহই অধিকাংশ প্রতিভাকে তার লক্ষে পৌছুতে দেয়না। হুমায়ুনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বাংলাদেশের তরল বিনোদন পিয়াসী বিরাট পাঠকগোষ্ঠীর জনপ্রিয়তায় ভর করে তিনি একের পর এক অখাদ্য পুস্তকও লিখে গেছেন অবলীলায়।
নিজেকে ভাঙার প্রয়োজন বোধ করেননি।

চলচ্চিত্র নির্মাণের নামে তিনি একধরণের ছেলেখেলা করেছেন। ব্যতিক্রম একমাত্র 'শ্রাবণ মেঘের দিন'। থামতে হবে এটা বিশ্বাস করেননি। লেখক হয়েও রাজা বাদশার স্থুল বিলাসী জীবন যাপন করেছেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে যে অসামান্য উচ্চতায় নিতে পারতেন তা তিনি করেননি। রুচির অবনমন তাকে ভয়াবহভাবে নিচে নামিয়েছে। শুরুর দিকে তার বন্ধু সুহৃদ ছিলেন আহমদ ছফা। শেষের দিকে একদল পুস্তক ব্যবসায়ী আর তৃতীয় শ্রেনীর অভিনেতা।

এইদেশের পাঠকদের বই পড়া শিখিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ এটা বললে আসলে একটু অতিকথন হয়ে যায়। বাংলা ভাষার প্রথম ব্যবসা সফল লেখক কাজী নজরুল ইসলাম এবং এরপর শরচ্চন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাংলা সাহিত্যেরই নির্মাতা। আর সাহিত্য সৃষ্টির মূল ক্রেডিট যদি ধরা হয় বিপণন তাহলে বলব মানদন্ডটি ঠিক নেই। এতে আপনার পাঠক রুচি ও হুমায়ুন আহমেদের লেখক সত্ত্বা দুটোই ছোট হয়। দস্যু বনহুরের রোমেনা আফাজ বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যাবসা সফল লেখকদের একজন। মাসুদ রানার কাজি আনোয়ার হোসেন। এদের আর পঞ্চাশ বছর পর কেউ মনে রাখবে বলে মনে হয়না। আর কাশেম বিন আবু বকর তো নাকি হুমায়ুন চেয়েও বেশি বিক্রিত।

তারপরও হুমায়ুন হুমায়ুনই। তিনি কি হয়ে উঠতে পারতেন সেই চিন্তা বাদ দিলেও তিনি যা হয়েছেন তা দিয়েই আমরা তাকে একটা বিশিষ্ট স্থান দিতে পারি।

বাংগালির সর্বাধিক ভালবাসা পাওয়া লেখক। একান্ত আপনজন সেই কথা বলাই যায়। আমজনতার প্রেম পাওয়া তো চাট্টিখানি কথাও নয়। তিনি ক্লাসিক নাইবা হলেন।

হুমায়ুন যে প্রচুর অযোগ্য লোককে বন্ধু বানিয়েছিলেন সেটা তার মৃত্যুর পর ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে। ব্যবসাবান্ধব হুমায়ুন প্রচুর ব্যাবসার যোগান দিলেও তার শেষ ইচ্ছাপূরণের কোন আলামত দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা।

উনার সেন্ট মার্টিনের একচালাঘর রিসোর্ট হয়ে গেছে। নুহাশপল্লী এখন ব্যাবসায়িক ভাবে সফল অবকাশ যাপন কেন্দ্র হয়েছে। অনেকেই পিকনিক টিকনিক করে। কিন্তু তিনি যে ক্যান্সার হাসপাতাল বানাবেন বলেছিলেন তার কোন উদ্যোগ নেই।

____________________________

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল। নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী। লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়