Ameen Qudir

Published:
2016-11-23 19:23:59 BdST

বুড়ো বয়সে বিয়ে ভিমরতি


      

 

 

ডা. অঞ্জলি
___________________

বুড়ো বয়েসে বিয়ে । কখনও স্বজন সন্ধানের মানবিক চাহিদা। কখনও হাস্যকর ভিমরতি।
একজন প্রবীণ যখন জীবনের একাকীত্ব মেটাতে খুঁজে নেন আরেক প্রবীণাকে। তখন তা জীবনযাপনের সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।
আবার কোন বুড়ো যখন নিতান্তই অক্ষম যৌনচাহিদার রেশ মেটাতে বিয়ে পাগলা হন; বিয়ে করেন কোন নাবালিকাকে--তখন তা সমাজের পঙ্কিল দিককেই তুলে ধরে।

প্রবীণদের মধ্যে বাড়ছে বিয়ের প্রবণতা দেশে দেশে। সেটা নিসঙ্গতার দিনকে অপনজনের সৌরভে ভরিয়ে তোলার জন্য।
আবার বুড়োদের বিয়ের ভিমরতি তো শত শত বছর ধরেই চালু।

 

 

 

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রাম। ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ আবু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ১৩ বছরের শিশু সালমার।

আবু মিয়া ৪ সন্তানের জনক। তার রয়েছে অর্ধডজনেরও অধিক নাতি নাতনি। আবু মিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি করতেন। ৪৫ বছর চাকরি করার পর ২০০৫ সালের জুন মাসে তিনি অবসরে আসেন। তার প্রথম স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় অসুস্থ হয়ে মারা যান। কিছুদিন পরই আবু মিয়ার নজর পড়ে একই গ্রামের দিনমজুর রফিকুলের শিশুকন্যা সালমার (১৩) উপর।

বছরখানেক আগে সালমার বাল্যবিবাহ হয়েছিল নরসিংদীর এক ছেলের সঙ্গে। ছেলেটি মাদকাসক্ত । বিয়ের ৩ দিন পরই সালমা বাবার বাড়িতে চলে আসে। ১ মাস আগে ওই ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে সালমা। এরপর থেকেই সালমাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগে বৃদ্ধ আবু মিয়া। সফলও হয়।

 

    
 

 

আবার বিশ্বের প্রবীনতম কাপল করমচাঁদ ও কারতারি কথা বলি। দুজনার বয়স যোগফল ২১১ বছর। ১৯২৫ সালে বিয়ে করেন তারা । তার পর সৌভাগ্যের দীর্ঘ জীবন। দাম্পত্য। ৯১ বছর একসঙ্গে। ভাবা যায়।

 

 

                            


দীর্ঘ জীবন যারা পান, অনেকেরই ঘটে পত্নী বিয়োগ বা স্বামী বিয়োগ। সন্তান সবসময় ঠিক জীবনসঙ্গীর সঙ্গ দিতে পারে না। তাই অনেকে কাছাকাছি বয়সী সঙ্গী বেছে নেন । সেটা সমাজেও পায় গ্রহনযোগ্যতা।
সেরকম কয়েকটি মুখ।

 

            

আর অসম ভিমরতি বিয়ে সমাজের স্বীকৃত মানসিক ক্যান্সার। তার ছবি যখন আমরা দেখি , শিউরে উঠি ঘৃনায়।

 


অভিশপ্ত এসব বিয়ে ও যৌনতা যে সমাজে পায় স্বীকৃতি; সে সমাজ আলোকিত নয় । হবেও না।

 


কিছু ইতিবাচক খবরও পাই।
ভালবাসার ক্ষেত্রে বয়স কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আর সেই বিশ্বাসে ভরসা রেখেই প্রবীণ নাগরিকরা আবার খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের ভালবাসার সঙ্গী। সম্প্রতি অনুবন্দনা ফাউন্ডেশনের ম্যাচ মেকিং ইভেন্টে অবাক করলেন তাঁরাই।

ওই ফাউন্ডেশনের সদস্য ভারতীভাই পটেল বলেন, ‘‘ম্যাচ মেকিং ইভেন্টে ২৫০ জন প্রবীণ নাগরিক এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে ১৫০ জন পুরুষ ও ১০০ জন মহিলা ছিলেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বাধিক বয়সের ছিলেন ৭৮ বছরের এক ব্যক্তি। মহিলাদের মধ্যে ছিলেন ৫৫ বছরের এক জন।’’

এঁরা সকলেই স্বীকার করে নেন বয়স বাড়লে সঙ্গীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সন্তানেরা দূরে থাকলে সেই একাকীত্ব আরও বাড়তে থাকে। তাঁদের জন্যই ভারতের বেশ কিছু শহরে এই ধরনের ম্যাচ মেকিং ইভেন্টের আয়োজন করছে এই সংস্থা। ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১০ জন অনুষ্ঠানেই এনগেজড হন। ১২ জন আবার দেখা করে বিয়ের সময় ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়াও আরও অনেকে নিজেদের নাম রেজিস্টার করেন পছন্দসই জীবনসঙ্গী খোঁজার জন্য।

ভারতীভাই পটেল বলেন, ‘‘নিউক্লিয়ার পরিবার, কেরিয়ারের খিদে, পরিবর্তিত জীবনযাত্রার কারণে প্রবীণ নাগরিকেরা একা হয়ে পড়ছেন। হয়তো তাঁদের সন্তানরাও দূরে থাকে। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে। কিন্তু সঙ্গীর অভাব, কথা বলার লোক না থাকা তাঁদের জীবনকে অপূর্ণ করে রেখেছে। তাই অর্থের থেকেও বেশি তাঁদের প্রয়োজন ভালবাসা, বন্ধুত্ব, সান্নিধ্য, পাশে থাকার মানুষ।’’
__________________________

লেখক ডা অঞ্জলি । চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়