রাতুল সেন

Published:
2020-06-27 16:56:56 BdST

"এত টাকার ওষুধ আমার কৃষক কিনতে পারবে না, সুতরাং আমি এ ওষুধ নেব না"-ডা. জাফরুল্লাহ


 

ডেস্ক
____________

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা করোনাজয়ী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে তার চিকিৎসার সার্বক্ষণিক ডা. মামুন মোস্তাফী বলেছেন, ,

উনি মনে করেন- গ্রামের একজন মানুষ যে ওষুধ কিনতে পারবে না, যে পরীক্ষাটা করতে পারবে না, উনি সেটা করবেন না। সিটি স্ক্যান ছাড়া আজকাল কেউ করোনা ডায়গনোসিস করে না। কিন্ত উনাকে আমরা সিটিস্ক্যান করতে পারিনি। উনি বলেছেন, এটা কি গ্রামের কৃষক করাতে পারবে? কারখানার শ্রমিক করতে পারবে? উনাকে রেমডিসিভির দিতে পারিনি। কারণ, উনি বলেছেন, এত টাকার ওষুধ আমার কৃষক কিনতে পারবে না, সুতরাং আমি এ ওষুধ নেব না ।
২৫ জুন ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গেরিলা কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে ডা. জাফরুল্লাহর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসা ব্যয় এবং অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া অনুষ্ঠানে চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিষেশজ্ঞ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ, সর্বোপরি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

ডা. জাফরুল্লাহার করোনা চিকিৎসার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মামুন মোস্তাফী এবং অধ্যাপক ডা.নাজিব মোহাম্মদ। চিকিৎসা ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত হিসাব তুলে ধরেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের জুনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. সাইফুল হক।
ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর ও শুভকামনা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা জয়ে সহায়ক হয়েছে। এ কারণে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাগ্যবান করোনা রোগী মনে করছেন নিজেকে।’

চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরতে গিয়ে ডা. সাইফুল হক জানান, টানা এক মাসের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ টাকার প্রায় পুরোটাই আইসিইউ কেবিন ভাড়া। যে ভাড়ার সঙ্গে কনসালটেন্ট ফি, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ফি, সাধারণ ওষুধপত্র সংযুক্ত রয়েছে। অনুরূপ সুযোগ সুবিধাসম্বলিত আইসিইউ কেবিন বাংলাদেশের যেকোনো প্রাইভেট হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হতো। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে পুরো এক মাসে লেগেছে মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা। এটা বাংলাদেশের বেসরকারি চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন।

চিকিৎসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ডা. মামুন মোস্তাফী বলেন, ‘উনার (ডা. জাফরুল্লাহ) যে মানসিক শক্তি, করোনা বিজয়ে সেটাই বড় অ্যাসেট। মানসিক শক্তির জোরে উনি আজ এখানে বসে আছেন। উনার জন্য ঢাকা মেডিকেলে কেবিনের ব্যবস্থা করা হলো, উনি গেলেন না। উনি বললেন, সবার জন্য যেখানে কেবিন নেই, সেখানে আমি চিকিৎসা নিতে যাব না। মরতে হলে আমি এখানেই (গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল) মরব।’

ডা. মামুন মোস্তাফী বলেন, ‘মানুষের প্রতি কতটা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা থাকলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, ডা. জাফরুল্লাহ’র চিকিৎসায় আমি এখানে ছিলাম এবং তাকে চিকিৎসা দিতে পেরেছি। বাংলাদেশ থেকে চীন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে, তার সবগুলো আমাদের এখানে আছে। আমরা অসাধারণ একটা টিম এখানে কাজ করেছি। উনার অভিজ্ঞতা, আমাদের নলেজ— সবগুলো এক সাথে ক্লিক করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের চিকিৎসক জীবনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সব চেয়ে ডিফিক্যাল্ট পেশেন্ট। তাকে দেখলে মনে হয় বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও উনার মাথার মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞান কিলবিল করছে। উনার সমস্ত নলেজ আপডেটেড। আমি উনাকে ওষুধ দিতে গেলেই উনি বলেছেন, কেন দিবা, কি দিবা? এভরিথিং উনাকে বুঝিয়ে তারপর ওষুধ দিতে হয়েছে। সো উনাকে ম্যানেজ করা… যাই হোক উনার সঙ্গে তর্ক হয়েছে, রাগ করতে হয়েছে। কিন্তু এখন আমি উনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে, উনি আমাকে চিকিৎসা করার সুযোগ দিয়েছেন।’

ডা. নাজীব মোহম্মদ বলেন, ‘কথা বললে অনেক কথাই বলা যায়। একটা জিনিস আপনারা সবাই জানেন, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পুরো উল্টিয়ে দিয়েছে। এখন প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন জিনিস আসছে। আমার সৌভাগ্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে চিকিৎসা করার সুযোগ পেয়েছি। আমি হায়েস্ট লেভেল আইসিইউ, টপ টেকনোলজির আইসিইউ ইউনিটে কাজ করেছি। সেই তুলানায় গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের আইসিইউ অতটা অ্যাডভান্স না। কিন্তু আমাদের এক্সপার্টিজ বেশি ছিল। আমরা কখনও সাহস হারায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা হয়তো জানেন না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর একসঙ্গে দুইটা নিউমোনিয়া ছিল। একটা করোনা নিউমোনিয়া। আরেকটা ব্যাক্টেরিয়া নিউমোনিয়া। একটা উনি রিমুভ করেছেন। ব্যাক্টেরিয়ার সাথে এখনও আমরা লড়াই করছি।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মহত্বের কথা তুলে ধরে ডা. নাজীব মোহম্মদ বলেন, ‘এই জিনিসটা বাংলাদেশে কে দেখাল? তার (ডা. জফরুল্লাহ চৌধুরী) জন্য প্রধানমন্ত্রী ঢামেকে একটা কেবিন রিজার্ভ করে রেখেছিলেন। কিন্তু উনি যাননি। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের যেখানে চিকিৎসা হয় (গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল) ওখানে তিনি চিকিৎসা করাবেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু আসেনি। প্রতি মহূর্তে করোনা চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা চেঞ্জ হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কী আসছে, সেটা দেখার জন্য বাসায় গিয়ে রাত ২টা/৩টা পর্যন্ত নেট ঘেঁটেছি। কারণ, এমন একটা লোকের চিকিৎসা আমরা করছি, যার সব প্রিভিলেজ থাকার পরও সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এইখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। সবসময় বলছি-  এই মানুষটাকে বাঁচিয়ে রাখো। বাংলাদেশে এই লোকটাকে দরকার।’

____________INFORMATION______________

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়