রাতুল সেন

Published:
2020-06-01 21:03:26 BdST

প্রিয় গ্রামবাসী, আমার কবরটি যেন পারিবারিক গোরস্থানে হয় : চিকিৎসকের মর্মস্পর্শী আবেদন


 

ডেস্ক
__________________________

বাংলাদেশের করোনা রোগীদের অক্লান্ত সেবী কর্মবীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের
এনেসথেশিওলজি ও আইসিইউ বিভাগীয় প্রধান ডা: শাহজাদ হোসেন এক মর্মস্পর্শী আবেদন রেখেছেন তাঁর জন্মস্থান যে গ্রামে , সেই গ্রামভিত্তিক ফেসবুক পেজে। তাতে তিনি সবিনয়ে নিবেদন রাখেন গ্রামবাসীর কাছে : আমার দায়িত্বের কারনে আমি যদি মৃত্যু বরণ করি আমার কোন আফসোস নেই, আমি ধরে নিব আল্লাহ আমার জন্য এটাই নির্ধারিত রেখেছেন। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমার দাফন আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে করার কথা।
কিন্তু আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যদি এটা ঘটেই তবে গ্রামবাসী যেন আমার কবরটি আমার পারিবারিক গোরস্থানে করার অনুমতি দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। দেশের জন্য আমার কর্তব্যের বিনিময়ে আমি আপনাদের কাছে এইটুকু চাই। আমার পরিবার করোনা ছড়াবে না এরকম নিরাপদভাবে এই ব্যাবস্থা করতে সক্ষম হবেন।

এ বিষয়ে ডা: শাহজাদ হোসেন পরে নিজ ফেসবুক ওয়ালে লেখেন,
আমার পৈতৃক বাস্তুভিটা মৌলভীবাজার জেলার ছোট্ট সবুজ একটি গ্রামে। এই গ্রামের একটি ফেইসবুক পেইজ আছে। সেখানে আমি আমার একটি ইচ্ছার কথা জানিয়ে দুটি কথা লিখি। সেটি শুধুই আমার গ্রামের মানুষের কাছে জানানো আবেদন। কিন্তু কোনভাবে লেখাটি সেই পেইজ পার হয়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে গেছে।

এই বিষয়ে আমার দুটি কথা বলার। এক, আমি এখন পর্যন্ত সুস্থ্য আছি। আলহামদুলিল্লাহ। এবং আমি কোনভাবেই ভীত নই। বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মত ধৈর্য্য ও স্থিরতা আমার রয়েছে। যারা এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন সম্ভবত তারা আমার পুরোটা লেখা পাননি। আংশিক পেয়েছেন। আমি জানি আপনারা আমাকে ভালোবেসেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। কিন্তু আমি দোয়াটুকুই চাই, উদ্বেগ নয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখুন।


এর আগে তিনি এক লেখা বলেছিলেন, আমি এখানে একটা পোষ্ট দিতে চাই। আমার আত্মীয়রা ছাড়া কেউ আমাকে চিনবেন না। কারন বাবার চাকরীর জন্য জন্ম থেকেই আমি সিলেটের বাইরে ছিলাম। মাঝে বছর দশেক আমি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে কাজ করেছি, এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে। ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। তখন কেউ কেউ আমার সাথে পরিচিত হয়েছেন। আমি ২০১৩ সন থেকে ঢাকায় সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি।
মার্চ মাসের শুরুতে এই হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। তখন থেকে আমি এই হাসপাতালের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি। আমার নেতৃত্বে এই আই সি ইউ তে চল্লিশজন চিকিৎসক ও পয়তাল্লিশজন নার্স কোভিড রোগিদের নিবিড় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সময়কালে আমি সকল ভয়ভীতি ত্যাগ করে রোগিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি জানি যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারি এবং বয়স ও শারীরিক কারনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারি। তবু কখনোই আমি আমার কর্তব্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি।
আমি এই গ্রামের সন্তান। আমার বাবার নাম সুরুজ মিয়া। যাঁকে অনেকেই দারোগা সাহেব বলে জানেন। এই গ্রামে আমাদের পৈতৃক ভিটা। বাড়ীর সামনে দীঘির পারে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে আমার মা, চাচা, চাচী চিরনিদ্রায় শায়িত। আমার দায়িত্বের কারনে আমি যদি মৃত্যু বরন করি আমার কোন আফসোস নেই, আমি ধরে নিব আল্লাহ আমার জন্য এটাই নির্ধারিত রেখেছেন। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমার দাফন আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে করার কথা।
কিন্তু আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যদি এটা ঘটেই তবে গ্রামবাসী যেন আমার কবরটি আমার পারিবারিক গোরস্থানে করার অনুমতি দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। দেশের জন্য আমার কর্তব্যের বিনিময়ে আমি আপনাদের কাছে এইটুকু চাই। আমার পরিবার করোনা ছড়াবে না এরকম নিরাপদভাবে এই ব্যাবস্থা করতে সক্ষম হবেন। আশা করি আমার লেখাটি এডমিন এখানে পোষ্ট করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আপনাদের গর্বিত করতে পারি। সকলের মঙ্গল কামনা করি।

ডা: শাহজাদ হোসেন
বিভাগীয় প্রধান
এনেসথেশিয়লজি ও আইসিইউ বিভাগ
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
এয়ারপোর্ট রোড, ঢাকা।

______________________

AD...

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়