Ameen Qudir

Published:
2020-01-07 02:09:03 BdST

হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় হাত হারাল নিষ্পাপ স্কুল ছাত্র: এক হৃদয়বিদারক ঘটনা


 

সংবাদদাতা
____________________

হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় হাত হারাল নিষ্পাপ স্কুল ছাত্র। তাকে যখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হল তখন ডাক্তাররা সবাই বিষন্ন হয়ে পড়লেন। কিশোরটিকে পঙ্গু করে দিয়েছে কোয়াক বা কথিত নন এমবিবিএস চিকিৎসা। অথচ বাংলাদেশে এখন কোয়াকদেরই বড় দাপট। তারা আইন শাস্তি নিয়মের উর্ধে। তাদের ধরার কেউ নেই। হামিমের ব্যাপারে ডা. হাসিবুজ্জামান অসহায় বিষন্ন কষ্টের সঙ্গে বললেন, যখন ছেলেটা আমাদের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিভাগে এল তখন আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম ছেলেটার চোখের দিকে। তার চোখে কোনো অভিযোগ ছিল না। কিছুক্ষণ পরে তার ডান হাত, যে হাত দিয়ে মানুষ তার জীবনের সব স্বপ্নের বুনন করে, সে হাত কেটে ফেলা হবে জেনেও, তার মধ্যে কোনো ভয় ছিল না ... ছিল এক ধরনের ভয়াবহ নির্লিপ্ততা ...... কারণ সে এর মধ্যে বুঝে গেছে, তার কোনো অভিযোগ অনুযোগ দুঃখ কষ্টের এর কোনো দাম নেই ...।


পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে কবিরাজের ভুল চিকিৎসার কারণে পশ্চিম বালিপাড়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হামিম ফরাজির (১১) হাত কেটে ফেলা হয়েছে।
২১ দিন আগে উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের শ্রমিক আলমগীরের ছেলে হামিম ফরাজি ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পায়। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করেন কোয়াক কথিত ভুয়া ডাক্তার আলী আকাব্বর সরদার।

পরে হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের কাছে গেলে হামিম ফরাজির হাতের অবস্থা খারাপ দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামিমের বড় বোন রোকসানা রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে মিডিয়াকে জানান, আমার ভাই হামিম ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেলে স্থানীয় আলী আকাব্বর সরদার নামে এক ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। সে হাতে লতাপাতা দিয়ে ঝাঁপ বেঁধে দেন। এরপর ওই হাতে পচন ধরলে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়।

তিনি জানান, পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমার ভাইয়ের হাতের অবস্থা খারাপ দেখে শুক্রবার তার ডান হাত কেটে ফেলেন। হামিম এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

তবে হাঁড় ভাঙা চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রথমে আলী আকাব্বর সরদার চিকিৎসা করেছেন। আমার কাছে আসলে পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই।

এ ব্যাপারে বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতি জানান, আলী আকাব্বর নামে স্থানীয় এক গ্রাম্য ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় স্কুলছাত্র হামিমের হাতে পচন ধরায় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার ডান হাত কেটে ফেলেন।

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা যা বলছেন

পঙ্গু হাসপাতালে শিশু হামিমের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. হাসিবুজ্জামান খুবই আক্ষেপ করে বলেন, শিশু হামিমের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল না। শুধু জয়েন্ট থেকে হাড়টি সরে গিয়েছিল। এটা যদি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে যে কোনো চিকিৎসক হাড়টা সঠিক জায়গায় এনে প্লাস্টার করে দিতেন। আর এই প্লাস্টারের সময় আমরা চিকিৎসকরা আলতোভাবে বাঁধি, যাতে হাতে রক্ত চলাচল ব্যাহত না হয়। কিন্তু ওই কবিরাজ এমনভাবে আঁটসাঁটো বাঁধ দিয়েছে যে তার হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরিবারের লোকজনের বরাত দিয়ে ওই চিকিৎসক জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ওই বাঁধন থাকার পর অবস্থা গুরুতর হয়। পচন ধরে যায়। তখন কিছু করার থাকে না। গ্রাম্য কবিরাজ, সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় এই ঘটনা হল। পরে যখন পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন ওই হাতটি মরে গেছে। ওই হাতে এমনভাবে পচন ধরেছে যে তা রাখা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে পল্লী চিকিৎসক নামে, কবিরাজ নামে, ফার্মাসিওয়ালা নামে, নামের পাশে ডাক্তার ব্যবহার করে এরকম হাতুড়ে ব্যক্তিরা চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষদের অনেক ক্ষতি করছেন। কোনো যোগ্যতা এবং শিক্ষা ছাড়া সরকারের প্রতিটি আইন, স্বাস্থ্য নীতিমালা, বিএমডিসির নীতিমালা ভঙ্গ করে গ্রামের সব সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার নামে তিন বেলা এন্টিবায়োটিক এবং ২ বেলা ভিটামিন গিলাচ্ছে, তাদের স্পর্শ করার কারো সাহস নেই।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়