Dr. Aminul Islam

Published:
2021-01-20 22:24:23 BdST

অধ্যাপক ডা সাহেনা আক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ


ডেস্ক 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গাইনী এন্ড অবস বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার।

আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ডা সাহেনা সিএমসি ২৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। 

ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ডা সুলতানা  আলগিন এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন,  ডা সাহেনা আক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গৌরব। সাহেনা আপা খুব ভালো মানুষ। তাঁর সান্নিধ্য ধন্য হয়েছি আমরা।

তিনি অনন্য সাধারণ ব্যাক্তিত্ব। 

ডা সাহেনার সহপাঠী ডা রুপন রহমান শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, আমাদের সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাতে গোনা যে কয়েকজন মেয়ে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়ে ছাত্রলীগ করতেন, ডা সাহেনা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । তাই আজকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  অধ্যক্ষ পদোন্নতি পাওয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বীত বোধ করছি । অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো ।

 

ডা ফরিদা ইয়াসমিন সুমি এক লেখায় জানান, 

এই গল্প ফুরোবার নয়!

 অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। ইন্টার্নশিপের সময় থেকে উনাকে দেখছি। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেখা এবং কথা হলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্মৃতি হয়তো ছিল না।

খাওয়াতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন সাহেনা আপা। মানুষকে খাইয়ে উনার মুখে ফোটে তৃপ্তির হাসি। কখনও কোনো ব্যাপারে কার্পণ্য করতে দেখি নি আপাকে। মাঝেমাঝে মনে হতো আকাশের চেয়েও বিশাল আপার হৃদয়। এরকম উদারমনা মানুষের উদাহরণ আশেপাশে বিরল।

আপার আরেকটি দিক উন্মোচন না করলেই নয়!
সম্ভবত ২০০৬ বা ২০০৭ সালের ঘটনা। সরকারি চাকুরী থেকে মাতৃস্বাস্থ্য - উন্নয়ণ বিষয়ক একটি ট্রেনিং এ ডিজি হেলথ গিয়েছিলাম। ট্রেইনার ভদ্রলোক বাংলাদেশের ম্যাপ দেখালেন। সেখানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র'কে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে বললেন, 'কনসালটেন্ট ডা. সাহেনা আক্তার অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সৎ উদ্দেশ্য আর মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে যেকোনো জায়গায় যেকোনো ক্ষেত্রে দেশ ও জাতিকে যে অনেক কিছু দেবার সুযোগ থাকে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে একনিষ্ঠভাবে নাজিরহাটের মতো অজপাড়াগাঁয়ে তিনি জরুরী প্রসূতিসেবা দিয়ে আসছেন। তাঁর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুরো বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ ডেলিভারি সেবা দিয়ে। পুরস্কৃত হয়েছেন একাধিকবার। তিনি শতভাগ সফল একজন মানুষ। উনার নাম এখন হেলথ সেক্টরসহ সাধারণ জনগণের মুখেমুখে!'
আমরা সবাই মোহগ্রস্তের মতো আপার সম্পর্কে প্রশংসা শুনছিলাম। সেদিন থেকেই আমি উনার এবং উনার কর্ম গুণের প্রেমে পড়ে গেলাম!

কাকতালীয়ভাবে ২০০৯ এ আপার জায়গায় আমি কনসালট্যান্ট হয়ে ফটিকছড়ি গেলাম। গিয়েই টের পেলাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আনাচেকানাচে উনার মায়াময় স্পর্শ। গ্রামের প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড ভালোবাসেন আপাকে।
শুধু চিকিৎসক হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও উনার শক্তিমত্তার পরিচয় পেলাম। রোগীরা সবাই এসেই আপার কথা জিজ্ঞেস করতেন। আর আমি বিস্মিত হয়ে ভাবতাম, এতো ভালোবাসা পেলে আর কিছু লাগে নাকি জীবনে!
তবে হ্যাঁ, আপা কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ খুব রেগে যান। যদিও তা সঙ্গত কারণেই, তবু ওই মুহূর্তে আপাকে বেশ রাগী মনে হয়। আমরা যারা আপাকে চিনি, তারা জানি একটু পরেই রাগ একদম পানি হয়ে যাবে! আপা আবার আমাদের উনার রুমে ডাকবেন মজার মজার খাবার খেতে।
একটা কথা চুপিচুপি বলে রাখি, রেগে গেলে আপার ভেতরে লুকিয়ে থাকা শিশুমনটি আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। আপা সম্ভবত সেটা জানেন না। তবে আমরা জানি এবং খুব উপভোগ করি।

সামান্য কী সব লেখালেখি করি বলে অনেকের অনেক কটুকথা শুনেছি। একজন তো প্রায়ই বলতেন, 'এসব এক্সট্রাকারিকুলার একটিভিটিজ নিয়ে তোমার ডাক্তারি পড়ার কী দরকার ছিল? গাইনিতে আসাও উচিত হয় নি। মেডিকেল কলেজে পোস্টিং নেয়াও ভীষণরকম অন্যায় হয়েছে।'

হাতেগোনা কয়েকজন যাঁরা আমাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করেন তাঁদের মধ্যে সাহেনা আপা অন্যতম। কয়েকমাস আগে SAFOG এর কনফারেন্সে হঠাৎ করেই বললেন, 'ডাক্তারি তো আমরা সবাই করি এবং করবো, কিন্তু লিখতে পারে ক'জন? লেখালেখি চালিয়ে যেও।'
আমি সেদিন চোখের পানি আড়াল করেছিলাম। শ্রদ্ধাবনত হয়েছিলাম।

স্যালুট আপা! হ্যাটস অফ!
আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।

 

 

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়