DR. AMINUL ISLAM
Published:2024-12-22 12:53:39 BdST
বিএসএমএমইউতে এক মায়ের চার অপরিণত নবজাতকের জন্মদান, সকলেই সুস্থ
বিএসএমএমইউ বিজ্ঞপ্তি
_________________________
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়:বিএসএমএমইউতে একসাথে চার অপরিণত নবজাতকের সফলভাবে জন্ম দিয়েছেন এক গর্ভধারিণী মা। চার নবজাতকই এখন সুস্থ আছে। তবে তাঁদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য চিকিৎসকদের নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। চার নবজাতকের মা বাবা দুশ্চিন্তার পরিবর্তে এখন তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে হাসি আর আনন্দে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বিএসএমএমইউর নিওনেটোলজি (নবজাতক) ও ফিটোম্যার্টারনাল মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডাক্তার, রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসাসেবা ও নার্সদের নিবিড় নার্সিংসেবাসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। সেই সফল প্রচেষ্টার আনন্দের প্রতিফলনে বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখ শীতের সকাল কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিএসএমএমইউর উপাচারর কার্যালয় উদ্ভাসিত হয়েছিল।
এসময় এক নবজাতকে কোলে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, একসাথে চারজন বাচ্চার জন্মদান অবশ্যই ব্যতিক্রম। চার নবজাতকই কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, ফলে তাদেরকে সুস্থ রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সফল সিজারের মাধ্যমে নবজাতাকদের সুস্থভাবে জন্মদান নিশ্চিত করাটাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে নিওনেটোলজি ও ফিটোম্যার্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা যথাযথ ও গুণগতমানের ওটিসহ চিকিৎসেবা প্রদান করায় মহান আল্লাহর রহমতে এক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছেন। চার নবজাতকই সুস্থ আছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার অভিনন্দন। আগামী দিনে এ ধরণের ব্যতিক্রমী বিষয়ে চিকিৎসাসেবায় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএসএমএমইউ দেশ ও পৃথিবীর বুকে রোল মডেলে পরিণত হবে।
নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে এই চার নবজাতককে বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। তারপরেও আল্লাহর রহমতে তাদেরকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুস্থ রাখা সম্ভব হয়েছে। নবজাতকদের চিকিৎসাসেবা ও যথাযথ কেয়ারিং এর ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিষয় হলো ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি), হ্যান্ড ওয়াসিং, আরলি ব্রেস্ট ফিডিং বা যথ দ্রুত সম্ভব মায়ের কাছে নবজাতককে শিফট করে মায়ের বুকের দুধ পান করানো নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজন হলে নবজাতকের শ্বাস কষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিপাপ নামক ডিভাইসের সেবা নিশ্চিত করা। সাধারণত একজন গর্ভধারিণী মা ৪০ সপ্তাহে সন্তান প্রসব করে থাকেন, কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় এই চার নবজাতকের বয়স যখন ৩১ সপ্তাহ তখন তাঁর মায়ের সিজার করতে হয়েছিল। নবজাতকের জন্মের সাথে সাথে মায়ের ত্বকের সাথে অপরিণত নবজাতকের ত্বক লাগিয়ে সেবা প্রদান ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চার নবজাতকের চিকিৎসাসেবায় এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ফিটোম্যাটানাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন বলেন, একসাথে চার সন্তানের গর্ভধারিণী জননীর সফলভাবে ওটি সম্পন্ন করা সার্জনদের জন্য একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। এক্ষেত্রে আমরা সফল হলেও এসকল শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
ডা. নুজহাত নূয়েরি জুঁই ও ডা. মায়মুনা জানান, কম ওজনের অপরিণত নবজাতকদের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের সংক্রমণের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি থাকে। জন্মের পর এই চার নবজাতকের প্রত্যেককে কমপক্ষে পাঁচ দিন ইনকিউভিটরে রাখা হয়েছিল। কম ওজনের শিশুদের অপরিণত খাদ্যনালীর কারণে হজমশক্তির অভাব, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা, অপরিণত ফুসফুসের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, ব্রেইনে রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে। কম ওজনের অপরিণত নবজাতকদের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে বিবেচনা নিয়েই চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়।
চার নবজাতকের বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, তার স্ত্রী রেহেনা আক্তার ফিটোমেটানাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন এর অধীনের চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৯ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখে উক্ত বিভাগে তার স্ত্রীকে ভর্তি করান এবং ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় উক্ত বিভাগের চিকিৎসকরা সফলভাবে সিজার সম্পন্ন করেন। গোলাম মোস্তফা ও রেহেনা আক্তারের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় চার নবজাতক। বর্তমানে তাদের বয়স ১ মাস ৬ দিন। ইতিমধ্যে চার নবজাতকের নামও রাখা হয়েছে। ছেলে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আবরার হাসনাত, তিন কন্যা শিশুর নাম রাখা হয়েছে নাজিফা তানজুম, নাফিসা তাবাসুম, নুসাইফা ইসলাম। তিনি জানান একটি সুস্থ নবজাতকের ওজন আড়াই থেকে চার কেজি পর্যন্ত হলেও জন্মের সময় তার সন্তানদের ওজন ছিল ১ কেজির সামান্য বেশি। এত কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করার পরেও তার সন্তানেরা সুস্থ থাকায় তিনি বিএসএমএমইউর নিওনেটোলজি বিভাগের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো জানান, এই চার সন্তান ছাড়াও তাঁর একজন ১০ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান জন্মদানের পর তাঁর স্ত্রী সন্তান ধারণে বিলম্বজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন, ফলে ওভুলেশন বাড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার স্ত্রীকে ওষুধ সেবন করতে হয়েছে।
হাসি খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছিল বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম সহ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ রুহুল আমিন, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ, ফিটোম্যাটানাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন, নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান, নিওনেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান সবুজ, সহকারী অধ্যাপক ডা. রুম্পা মনি চৌধুরী, ডা. সর্বরী সাহা, ডা. দেবাশীষ সাহা, উপাচার্যর একান্ত সচিব ডা. মোঃ রহুল কুদ্দুস বিপ্লব, উক্ত বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. নুজহাত নূয়েরি জুঁই, ডা. মায়মুনা, চার নবজাতকের বাবা ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী গোলাম মোস্তফা, ২৮ বছর বয়সী মা রেহেনা আক্তার ও তাঁদের স্বজনসহ উপস্থিত সকলের মুখে।
আপনার মতামত দিন: