Dr.Liakat Ali

Published:
2022-10-02 23:19:38 BdST

"টাকা আনি আর টাকা ঢালি" বনাম ২০ হাজার টাকার রেসিডেন্ট ও তাঁর বাবা-মা স্ত্রী সন্তান সংসার


লেখক ডা. রাজিব দে সরকার

 


ডা. রাজিব দে সরকার
________________

"আমি ডক্টর, আমি টাকা আনি আর টাকা ঢালি"
এই ধরণের অযাচিত মন্তব্য করে সমালোচনা থেকে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আপনি ভুলে গেছেন, আপনি কোন দেশে আছেন। আপনি ভুলে গেছেন, আপনার দেশের চিকিৎসকেরা অর্থনৈতিক ভাবে কেমন আছেন।

আপনি যখন চিকিৎসক পরিচয়ে কথা বলবেন, তখন সাধারণ মানুষ ভেবে নিবে আপনি চিকিৎসকদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলছেন। তারা ভাববে, এদেশের চিকিৎসকদের ইনকাম বোধ হয় এমনই। কিন্তু আদতে আপনার বক্তব্য এদেশের ১% চিকিৎসকদের অবস্থাও রিফ্লেক্ট করে না।

প্রকৃত অর্থে দেশের অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো চিকিৎসকেরাও এদেশে লাইফ স্ট্রাগল করে বেঁচে থাকেন। জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েই একেকটি ৫০০ টাকার নোট কামাই করতে হয়।

কতো টাকা ভাতা পায় আমাদের ইন্টার্নী চিকিৎসকেরা? আর বিনিময়ে কতো ঘন্টা সার্ভিস তাদের দিতে হয়?

একজন রেসিডেন্ট পান ২০,০০০ টাকা ভাতা। ঢাকা শহরে এই ২০,০০০ টাকা দিয়ে সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা'র মুখে মাসে কতোদিন ভাত-ডাল তুলে দেওয়া যায়? আর আপনি বলছেন, বাইরে খাবার কথা, সুলতানস ডাইন এ খাবার কথা!

পাশ করে বের হওয়া ডেন্টাল সার্জনরা এখনো মাসিক ৫০০০-৭০০০ টাকার বিনিময়ে সিনিয়র ডেন্টাল সার্জনদের চেম্বারে কাজ করেন। এমবিবিএস পাশ করে ক্লিনিকে চাকরি নিলে একজন চিকিৎসক বেতন পান ১৮,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা।

তাই আপনার "আমি ডক্টর, আমি টাকা আনি আর টালা ঢালি" এই ধরণের সার্বজনীন স্টেটমেন্ট আমি মেনে নিতে পারলাম না।

প্যানডেমিক এর উত্তাল সময়ে লিস্টের পরে লিস্ট হলো। অথচ আমার জানা মতে, কোন মেডিকেল কলেজের কোন ইন্টার্নী চিকিৎসক করোনা ওয়ার্ডে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার জন্য আজ পর্যন্ত কোন অর্থনৈতিক সুবিধা পান নি। প্রায় ১০ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করা একজন ইন্টার্নী চিকিৎসক আজ আপনার বক্তব্য শেয়ার দিচ্ছে স্রেফ একটা বিনোদনের কনটেন্ট হিসেবে।

আমি কারো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি না। কাউকে গালমন্দও করছি না। ফেসবুক পেইজ/গ্রুপ গুলোর কমেন্ট বন্যার মতো কাউকে 'বিকৃত মস্তিষ্কের চিকিৎসক', 'দুর্নীতিবাজ চিকিৎসক', 'কমিশনখোর চিকিৎসক', 'লেডি কসাই' এসব কিছুই বলছি না।

হিরো আলমের দেশে, শাকিব খানের দেশে কারো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কিন্তু আমার আপত্তির অংশটি আমার 'পেশা' নিয়ে।

আমি বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক। আমি জানি কতোখানি সংগ্রাম করে এই দেশে একজন চিকিৎসক তৈরী হন। আমি জানি, চিকিৎসক হবার পরের জীবনটাও আরো কতোখানি সংগ্রামের। আমি জানি এবং এগুলো আমি ভুলে যাইনি।

পেশাকে উদ্বৃত করে পাবলিক অপিনিয়ন দেবার সময় আপনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন নি। আজ আপনার জন্য চিকিৎসকদের নিয়ে পাবলিক ট্রলিং হচ্ছে যা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর না। পুরো কমিউনিটিকে আপনি হাসির পাত্র বানিয়েছেন অথবা পুরো কমিউনিটি সম্পর্কে ভুল মেসেজ দিয়েছেন।

একজন জুনিয়র চিকিৎসক একটা জায়গায় মন্তব্য করেছেন,
"ইনি একজন চিকিৎসক! Shame on me!"

ব্যস, আমার আর কিচ্ছু বলার নাই।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়