Ameen Qudir
Published:2020-03-12 16:51:25 BdST
'হুমায়ুনের অসুখের খবর শুনে কনকদা ৫০০০০ টাকার চেক দিয়ে বললেন, ওকে দিও'
অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন
_______________________
আশির দশকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুবাদে বিএমএ এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের সবাইকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তার মধ্যে একজন হলেন ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তখন তিনি এফসিপিএস করছেন, বৌদিকে নিয়ে চাংখারপুলের সে সময়ের ওল্ড পিজি হোস্টেলে থাকতেন। সব সময়ে সামনের সারিতে দেখা না গেলেও রাজনীতির নেপথ্যে থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণেই তাকে দেখতাম। সত্তর দশকে বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল গুলিবিদ্ধ হলে কনক দা তাকে রক্ত দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সত্তর দশকের উত্তাল সময়েও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
পেশাজীবী নেতা হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি মানুষ হিসেবে কনক দা অসাধারণ। তার এই মানবিক দিকটার প্রমান আমি অসংখ্যবার পেয়েছি। সেবার বন্ধু ডা. হুমায়ুন খুব অসুস্থ হল। আমি দেশে গিয়েছি, বিএমএ গেস্ট হাউজে হুমায়ুন দেখা করতে এসেছে। হুমায়ুন, ঢাকা মেডিক্যালে আমার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক সময়ের সার্বক্ষণিক সহযোদ্ধা। আমার সামনে মন খারাপ করে বসে আছে। ওর লিভার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। মুম্বাইয়ের টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে যাবে, অনেক টাকা দরকার। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে কয়েকজনের কাছে হাত পাতলাম। মোদাচ্ছের আলী স্যার তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা। স্যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে আমাকে ৫০০০০ টাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। হুমায়ুনের অসুখের খবর শুনে কনক দা আমাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ডাকলেন। দেখা হতেই আমার হাতে ৫০০০০ টাকার একটা চেক দিয়ে বললেন, হুমায়ুনকে দিও। সে সময়ে ৫০০০০ টাকা অনেক টাকা। তার চেয়ে বেশী মূল্যবান ছিল তার আন্তরিকতাটুকু। আমি চেকটা হাতে নিয়ে দ্রুত চলে এসেছিলাম, আকস্মিক চোখে জল চলে এসেছিল বলে। হুমায়ুন বেশীদিন বাঁচেনি, কিন্তু মৃত্যুর আগে ও জেনে গেছে, ওর চিকিৎসার জন্য টাকা কোন সমস্যা ছিল না। স্বজনের বিপদে দেখেছি কনক দা সবসময় হাজির।
সম্প্রতি কনক দার একটা সাফল্যের সংবাদ শুনে খুব আনন্দিত হলাম। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ও মানবসেবায় অনন্য অবদান রাখায় বিশ্ব সম্মান বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের দুই খ্যাতনামা অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং ডা. মো. নজরুল ইসলাম। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অব লন্ডন তাদের সম্মানসূচক ফেলোশিপ দিয়ে সম্মানিত করলেন। চিকিৎসাসেবা, গবেষণা ও শিক্ষকতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৯ সালে এই কলেজ সারা বিশ্বের মধ্যে ছয়জন বিশিষ্ট চিকিৎসককে এই সম্মাননা জানায়। কনক দাকে অভিনন্দন।
অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। যোগদানের পর তিনি বেশ কিছু ভাল কাজ করেছেন। তার মধ্যে দুইশো মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ, স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ফিস কমানো অন্যতম। অথচ এ কাজের জন্য তাকে আমরা অভিনন্দন জানানোর ব্যাপারে যথেষ্ট কার্পন্য দেখিয়েছি। বরং আমার কাছে মনে হয়েছে, বর্তমান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি অনেক বেশী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, অযৌক্তিক সমালোচনার মুখোমুখি ও হচ্ছেন। অথচ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, কনক দার সাথে আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল সমস্যারও সহজ সমাধান করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন, পারস্পরিক আস্থা বজায় রেখে যে কোন বিষয়ে কনক দার সাথে আলোচনা করা। যে কোন প্রশাসন চালানো আসলে একটা টিমওয়ার্ক, কারো একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না।
বর্তমান বাস্তবতায় আমি নিজেও হয়তো কনকদার কোন কোন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করি। তারপরেও অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার জন্য শুভ কামনা রইল। মারেন, বকেন আর যাই করেন, ব্যক্তিগত স্নেহের জায়গা থেকে কনকদা আমাদের নিশ্চয়ই দূরে সরিয়ে দেবেন না।
জয়তু কনক দা। চিয়ার্স!
_________________________
অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন
আপনার মতামত দিন: