Ameen Qudir
Published:2019-11-06 21:23:14 BdST
মহোনার জন্য বিএসএমএমইউ'র চিকিৎসকগন যেভাবে পাশে দাঁড়ালেন
ডা. রুবাইয়াত রহমান
______________________________
মহোনা – র বয়স ১৪ বছর। আজ থেকে ৪ বছর আগে তার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার বাসা বাঁধে। যাদের পরিবারে এই ব্যাধি হয়েছে শুধু মাত্র তারাই বুঝতে পারে কি যন্ত্রণা আর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তাদের সময় অতিবাহিত হয়। তার চাচা আমার সামনে দাঁড়ানো । রেফারেল নিয়ে আমাদের কাছে এসছে। বিস্তারিত বর্ননা পড়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের এখানে কেন এসেছেন । চাচার স্বাভাবিক উত্তর ছিল , “আমরা জানি , আমাদের মেয়ে আর বাচবে না। ৪ বছর যাবত ও যুদ্ধ করছে আর ক্যান্সারটা আবার ফেরত এসেছে , তবে আমরা আশাবাদি “।
আমার প্রশ্ন হল ,এই আশা কিসের আশা । নিরাময়ের, না সান্ত্বনার ???
মহোনা-র চাচা শুনেছেন এখন যে চিকিৎসা ব্যাবস্থা আছে, তা প্রচন্ড ব্যয় বহুল এবং বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সেন্টারেও এর সাফল্যের সম্ভাবনা ১০-১৫%। এমতাবস্থায় রোগের ব্যপ্তির কারনে হয়ত মহোনা এই চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চাপ নাও সহ্য করতে পারে।
তাহলে যে ই পরিবারটি গত ৪ বছরে আর্থিকভাবে নিঃস্ব প্রায়, তার জন্য এই চিকিথসা ব্যাবস্থা চালিয়ে নেয়া কতটুকু যুক্তি সংগত ?
বাচ্চা মেয়ে দেখলে মনের অজান্তেই নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়। মেয়ে বাবা বলে কথা । মহোনাদের যন্ত্রনা নিজের মেয়ের যন্ত্রনা থেকে কোন অংশে কম মনে হয় না। মহোনাদের ভাগ্য খুব ই খারাপ। এই বয়সে যখন কিনা তার ছুটে বেড়াবার কথা ,সে কিনা এখন তীব্র যন্ত্রনায় মৃত্যুর দিন গুনছে , কারন ডাক্তারেরা শেষ কথা জানিয়ে দিয়েছেন –এই রোগকে আর নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে গ্রাস করছে পুরো শরীর।
রোগকে নিয়ন্ত্রন বা ভালো না করা গেলেও , মহোনাদের কষ্ট কিন্তু কমানো সম্ভব। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪০ হাজার শিশু নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করে। নিরাপদ জন্মের জন্য আমাদের অর্জন বিশ্বনন্দিত , কিন্তু আমরা ক’জন নিরাপদ মৃত্যু নিয়ে ভাবি।
২০১৮ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রধান উদ্যক্তা ও ততকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিজামঊদ্দিন আহমদ এই বাচ্চাদের জন্য কিছু একটা করবার প্রয়াস নিয়ে নিজের ঘর ও ষ্টোররুমকে এক করে ৩ বেডের শিশুদের জন্য একটি প্যালিয়াটিভ কেয়ার ইউনিট স্থাপন করেন। এবং ১৫ই মার্চ ততকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান এই শিশু প্যালিয়াটিভ কেয়ার ইউনিটের শুভ উদ্ভোদন করেন। বাংলাদেশে সরকারী ভাবে এটি ই প্রথম উদ্যোগ। এই প্রচেষ্টার প্রধান উদ্দেশ্য হল , “ আর কোন শিশুকে যেন কষ্ট নিয়ে চলে যেতে না হয় “। সন্তানের ব্যাথা কেবল মাত্র বাবা- মা – বুঝতে পারে। অনেকেই ভাবেন প্যালিয়েটিভ কেয়ার কেবল মাত্র একটি আবেগের জায়গা, কিন্তু তাই যদি হত বিশ্বের ১৬৫টি দেশে এটি এক্ টি বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যাবস্থা হত না।
এই সেবা পাবার জন্য, আপনার শিশু অথবা পরিচিত যে কোন বাবা-মা কে আমাদের কাছে শিশুদের কষ্ট কমানোর জন্য নিয়ে আসতে পারেন – মেডিসিন বহিবিভাগ ৫১১ নং রুম । আমাদের এখানে ভর্তি করে চিকিৎসা করা ছাড়া ও একটি প্রশিক্ষিত দল বাসায় গিয়ে ও সেবা দিয়ে আসে।
“মেয়েটার কষ্ট আর দেখতে পারছি না – ও’র জন্য একটু শান্তির ব্যাবস্থা করে দেন “- আমরা কি পারব , মহোনার মায়ের শেষ ইচ্ছা আমরা পূরন করতে ? হ্যাঁ , পালিয়েটিভ কেয়ার পারবে এবং তা বিজ্ঞান সম্মত।
একটি জন সচেতনা মুলক ভাবনা। আমি ,আপনি পরিবর্তন হলে ই সমাজ পরিবর্তিত হবে।
_____________________________
Dr.Rubayat Rahman
Medical officer,
Palliative Medicine,
Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University,
shahbagh, Dhaka.
আপনার মতামত দিন: