Ameen Qudir
Published:2017-09-26 17:05:09 BdST
চলো যাই বাংলার কেরালা স্বরূপকাঠিতে
ডা. সুনীল সাহারায়
______________________________
পিরোজপুর জেলার অন্যতম পুরানো বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্বরূপকাঠি। এ যেন বাংলার কেরালা ।
সেই ব্যাক ওয়াটার। সেই নদী ও খালের সঙ্গম।
থাইল্যান্ডে যেমন ভাসমান বাজার, তেমনি মনো্রম নদী ও খালের বাজার রয়েছে এখানেও। ঘুরে আসতে পারেন অতি অল্প খরচে। তাহলে দেরী কেন ! স্বরূপকাঠির মানুষ হিসেবে জানাই সবাইকে আমন্ত্রণ।
এখানে আছে অসামান্য সুন্দর তিনটি ভাসমান বাজার।
আটঘরের ভাসমান বাজার
স্বরূপকাঠি সদর থেকে নৌপথে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ভাসমান একটি বাজার আটঘর। আটঘরের খালের ছোট্ট একটি মোহনায় বসে এ ভাসমান বাজার। ছোট ছোট নৌকায় নিজেদের উৎপাদিত সবজি, ফল-মূল নিয়ে এ বাজারে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন কৃষকরা।
পাইকাররা এসব কিনে পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এ সময়ে এ হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পেয়ারা, আমড়া আর শুপাড়ি। এই তিন কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। আটঘরের হাট সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে। খুব সকাল থেকে শুরু করে এ হাটের ব্যস্ততা থাকে দুপুর পর্যন্ত।
দুপুরের পর থেকে হাট ভাঙতে শুরু করে। স্বরূপকাঠি থেকে ইঞ্জিন নৌকায় এ বাজারে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট।
স্বরূপকাঠি থেকে সড়কপথেও এ বাজারে সহজেই আসা যায়। তবে বাজারের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আসতে হবে নৌপথে।
কুড়িয়ানার নৌকার হাট
আটঘর বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বসে শতবর্ষী পুরানো একটি নৌকার হাট। এ অঞ্চলে নদী ও খালের প্রাধান্য থাকায় চলাচলের প্রধান বাহন নৌকা। কুড়িয়ানার এ নৌকার হাট বসে শুক্রবার। খুব সকাল থেকে কারিগররা নৌকা নিয়ে আসলেও বাজার জমে উঠে দুপুরের পর থেকে।
উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকার কারিগররা এখানে আসেন তাদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করতে। বিশাল জায়গা জুড়ে এখানে শত শত নৌকায় পরিপূর্ণ হয় এ হাট। বড় একটি নৌকার উপরে ছোট ছোট অনেক নৌকা এনে এখানকার খালে ভাসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন বিক্রেতারা। আটঘর থেকে কুড়িয়ানার এ বাজারে ইঞ্জিন নৌকায় পৌঁছতে সময় লাগে বিশ মিনিট।
নদীর নাম সন্ধ্যা। এর তীর ঘেঁষা স্বরূপকাঠি শহর। বহু প্রাচীন এ শহরের নদীর পাড়েই দেশের সবচেয়ে বড় কাঠের মোকাম। সন্ধ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে স্বরূপকাঠী খালের মোহনায় বিশাল এলাকা জুড়ে চলে কাঠের এ বাণিজ্য।
সন্ধ্যার ওপারেও আরেকটি ছোট শহর ইন্দেরহাট। এখানেও চলে কাঠের জমজমাট ব্যবসা। নদীর মধ্যে বড় বড় নৌকা বোঝাই কাঠ আর কাঠ। কখনও কখনও নানান রকম গাছ পানিতে ভাসিয়েও রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঠ ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন কাঠ কিনতে। বড় বড় কার্গো জাহাজ বোঝাই করে সেসব কাঠ পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্বরূপকাঠি কিংবা ইন্দেরহাটে আরও দেখা যায় গোলপাতা বোঝাই নৌকা। সুন্দরবন থেকে বাওয়ালীরা বড় বড় নৌকা বোঝাই গোলপাতা নিয়ে বিক্রির জন্য সন্ধ্যার দুই তীরের এ বাজারে নোঙর ফেলেন।
ঘুরে আসুন মনোমুগ্ধকর শাপলার বিলে!
সাধারণ ছুটিতে ঘুরে আসুন বরিশালের মনোমুগ্ধকর শাপলার বিলে।
শাপলার বিলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস জুড়েই থাকবে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। প্রথম দেখাতে মনে হবে সবুজের মাঝে যেন লাল রঙের ছড়াছড়ি। আর পানিতে সূর্যের আলোর ঝলকানি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এর সৌন্দর্য।
বরিশালের উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলে (বিলে) প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলার বিল যেমন মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছে। তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আগস্টের শেষ থেকে মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার এ বিল দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে। লাল শাপলার পাশাপাশি এখানে দেখা মেলে সাদা শাপলারও।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বিলে তিন ধরনের শাপলা হয়ে থাকে। যার মধ্যে একটির রঙ লাল, একটির সাদা ও একটি বেগুনি রঙের। এরমধ্যে সবজি হিসেবে সাদা শাপলার কদর বেশি। আর লাল শাপলার কদর থাকলেও এটি রান্না করতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই এটি পর্যটকদের কাছেই বেশি কদর পেয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দিন যত যাচ্ছে বিলের পানির উচ্চতা কমে যাচ্ছে ও বিলের বিভিন্ন অংশ আটকে মাছের চাষ হওয়ার কারণে শাপলার পরিমাণ কমছে।
তবে, বছরের বেশিরভাগ সময় এই শাপলার বিলের ওপরই নির্ভরশীল থাকছে আশপাশের এলাকার কয়েক’শ পরিবার। এদের কারো জীবিকার মাধ্যম শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করা, আবার শাপলার বিলে মাছ শিকার করে তা বিক্রি করে। এ বিলে ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শৌল, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
দক্ষিণ বাগদা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানান, নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুতে বিভিন্ন জমির মালিক শাপলাগাছের গোড়া কেটে দেন। তবে, এতে বীজের কোনো ক্ষতি হয় না। আর গোড়া কেটে দিলে তার জমির ওপরে পানির সঙ্গে মিশে পঁচে মাটির উর্বরতার জন্য ভালো সারের কাজ করে। পানি কমতে শুরু করলে বাংলা অগ্রাহায়ণ থেকে মাঘ মাসের মধ্যে এক ফসলি এ জমিতেই বোরো ধানের আবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।
বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের কয়েক’শ হেক্টর জমি নিয়ে এ বিলের মূল অবস্থান। সড়ক পথে যেতে হয় এখানে।
বরিশাল থেকে সরাসরি সাতলার উদ্দেশে বাস ছাড়ে নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে, যেখানে জনপ্রতি যেতে ৯০ টাকা খরচ পরবে। এছাড়া মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও কিংবা মাহিন্দ্রা ভাড়া করেও যাওয়া যায়, এতে ৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মতো বাহনভেদে যাওয়া-আসায় খরচ পড়বে।
শাপলার বিলের খুব সকালেই যাওয়া শ্রেয়, এজন্য ভোররাতে রওয়ানা দেয়া যেতে পারে। তবে, আগের রাতে গিয়ে উজিরপুর উপজেলা সদরে থাকা যেতে পারেন। যদিও থাকার জন্য স্বল্প ব্যবস্থা রয়েছে উজিরপুরে।
এদিকে, এ বিলের পাশের সড়ক ধরে প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ডিঙি নৌকা, যা নিয়ে আপনি ঘুরতে পারবেন বিলে। এক্ষেত্রে অল্প টাকার বিনিময়ে একজন মাঝিও পেয়ে যেতে পারেন। তবে তার বসতবাড়ি বিলের পাশে হলে আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে।
সর্বোপরি বিলে ঘুরতে গেলে ভালোমানের একটি ক্যামেরা নিতে যেন ভুলে না যান এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন আলোকচিত্রী ও স্থানীয় পর্যটক আরিফুর রহমান। তিনি বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে সময় দিয়েছেন এই বিলে। তারমতে, দক্ষিণের এই জনপদে আবাসন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে শাপলার সময়ে প্রচুর পর্যটক এখানে আসবেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্বরূপকাঠি যাওয়ার সহজ উপায় নদীপথে। ঢাকার সড়রঘাট থেকে এমভি রাজদূত-৭ এবং অগ্রদূত প্লাস লঞ্চ চলে এ পথে।
ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় ছেড়ে খুব সকালে পৌঁছায় স্বরূপকাঠি। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
তিনজনের উপযোগী ভিআইপি কেবিন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। স্বরূপকাঠি থেকে সারাদিনের জন্য ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়।
কোথায় থাকবেন
স্বরূপকাঠিতে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। থাকতে হবে বরিশালে। সেখানে তিনতারকা মানের একাধিক হোটেল সহ চমৎকার আবাসন রয়েছে।
আপনার মতামত দিন: