Ameen Qudir

Published:
2017-09-21 17:10:37 BdST

কখনও রোম , কখনও বার্লিন , কখনও ইস্তাম্বুল : এই পৃথিবীর ধূলিকণায়


 

 

 


মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

________________________________


রোম থেকে বলছি ,পৃথিবীর ধূলিকণায় (১)

_____________________________

 

 

১।'রোম ওয়াজ নট বিল্ট ইন এ ডে'। ছোটবেলায় পড়া এই প্রবাদে বুঝে ছিলাম রোম সভ্যতা কত বিশাল,শক্তিধর। এই নগরী দেখবার সাধ তখন থেকেই। ওয়েস্টার্ন সাহারায় জাতি সংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করবার সময় ছুটি মিলে গেলো। ইউরোপ দেখবার অবকাশে ১৯ শে অক্টোবর ২০১৬ তে রোমে এলাম।
২।নগরীর প্রতি ইঞ্চি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। মাইকেল এঞ্জেলো ,লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নগরী যে! প্রাচীন রোম সভ্যতার স্থাপত্যের সাথে হালনাগাদ স্থাপত্যকলার অপরুপ মিশেল রোমকে তিলোত্তমা করে তুলেছে। নগরীর উপকণ্ঠে ভ্যাটিকান সিটি। একসময় পোপ শুধু ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরুই ছিলেন না, পর্দার নেপথ্য থেকে রাষ্ট্রীয় রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করতেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ - এ ইতালীর বেনিটো মুসোলিনী সারা দুনিয়ায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। মিত্রবাহিনী বোমা মেরে এই নগরীকে প্রায় ধুলায় মিশিয়ে দিলেও পরিশ্রমী ইতালীয়রা সেটিকে প্রায় সাবেক রুপে ফিরেয়ে নিয়ে আনেন।
৩।রোম উপকথার জুপিটার,এপেলো, প্রেমের দেবী ভেনাসসহ নানা দেবদেবীর আবক্ষ মূর্তি নগরীর নান্দনিক শোভা বাড়িয়েছে। ডলসি ভিটা আইসক্রিম আর ঐতিহ্যবাহী পিতজা দিয়ে রসনা বিলাস করতে ভুল হল না। রোমান হলিডে দেখবার সময় গ্রেগরী পেক আর অড্রে হেপ বার্নের সাথে ছায়াচিত্রে যে নগরী মনে দাগ কেটেছিল সেই রোমের ধূলায় হাঁটবার সময় সেই স্বপ্ন যেন পূরণ হল।


৪।অজানা সুন্দরকে কাছের থেকে দেখবার একরাশ মুগ্ধতা আর আনন্দ নিয়ে ক্যাসেল ডি এঞ্জেলোর সামনে পড়ন্ত সন্ধ্যায় আমি ক্যামরা বন্দী হই ।রাতের খাবারের জন্য 'টারমিনি' এলাকায় গেলে হোটেলের সামনে বিস্ময় নিয়ে বিশুদ্ধ বাংলায় শুনতে পেলাম ' আসেন আসেন ,খেয়ে যান ,রাতের মেনু ইলিশ মাছ' ।অনেক বাঙ্গালীর আশে -পাশে দেখে বুঝলাম এটি বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকা ।বাঙ্গালীর রোম বিজয়ের আনন্দে গর্বিত হয়ে যখন হোটেল 'একুইডট্ট 'এ ঘুমানোর আয়োজন করছিলাম তখন ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ছুঁয়ে গেছে ।

 

 

 

বার্লিন থেকে বলছি, পৃথিবীর ধূলিকণায়(২)
---------------------
১।জার্মানির নাম শুনলেই হিটলারের কথা প্রথমেই সবার মনে পরে যায়। নাৎসি বাহিনী তাবৎ দুনিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রাজধানী বার্লিনসহ জার্মানির বিরাট অংশকেই মিত্র বাহিনীর সৈনিকেরা বোমার হামলায় ধুলায় মিশিয়ে দেয়। পরে পরিশ্রমী জার্মানরা সেটিকে প্রায় আগের আদলে ফিরিয়ে আনে। সমাজতন্ত্রের ছোঁয়া লাগে জার্মানের পূর্ব অংশে । দেয়াল তুলে বার্লিনকে দুইভাগ করা হয়। স্নায়ু যুদ্ধ শেষে ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীরটি ভেঙে দেয়া হয়। দুই জার্মান আবার এক হয়।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লেখেন 'ইতিহাসের স্বপ্ন ভংগ'।
২।ব্র‍্যান্ডেনবার্গ গেট আঠারো শতকে তৈরী হলেও আজো সেটি জার্মানির অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপনা। নিওক্লাসিক্যাল এই মনুমেন্ট প্রুশিয়ার রাজার নির্দেশে বানানো হয়।গতবছর এইসময় বার্লিনে ছুটি কাটানোর অবকাশে ব্র‍্যান্ডেনবার্গ গেটের সামনে আমি ক্যামেরা বন্দী হই।
৩। জার্মানির সংসদ রেখিস্ট্যাগ বিল্ডিং আরেক বিস্ময়কর স্থাপনার নাম।তিলোত্তমা এই নগরীর কেন্দ্রস্থলে আলেকজান্ডার প্লাটজ স্কয়ারে দৃষ্টিনন্দন শপিং মল ,সিনেমা হল, নানা রেস্টুরেন্ট পর্যটকদের বারবার আকর্ষণ করেছে । প্রায় ৩৬৫ ফুটের টিভি টাওয়ার নান্দনিক শোভায় স্নিগ্ধ ।অনেক আর্ট গ্যালারি বার্লিনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে ।
৪।'ওয়ানসি' লেক দেখবার লোভ সামলানো গেল না। আমুদে বার্লিনবাসী নৌকাবাইচে মেতে উঠেছিল। নৌবিহারের মজা নিতে আমার একটুও ভুল হয় নি।
৫।রাতে বার্লিনের রাস্থায় রাস্তায় অনেককেই আলপনা আঁকতে দেখলাম। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শিল্পীরা রকমারি পোষাকে, নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গেয়ে পয়সা তুলছে। ধুলামাটিতে বসে সেই গান শুনবার সময় সবাদু ' স্ট্রীট ফুড' দিয়ে রসনাকে তৃপ্ত করলাম। জার্মান ব্যালে নাচের খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। এদের প্রচুর পরিমানে বিয়ার পানের দৃশ্য আমার দৃষ্টি এড়ায় নি।
৬। সারা দুনিয়া জোড়া অর্থনৈতিক মন্দার ছাপ বার্লিনের মত অভিজাত নগরীতেও লেগেছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অনেক শরণার্থীকে বার্লিনের পথে পথে দেখলাম।ট্যাক্সি - বাস- ট্রাম - টিউব পায়ে হাঁটা পথ পেরিয়ে হোটেলে এসে নিদ্রাদেবীকে যখন কাছে পেলাম তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে।

 

 

 

ইস্তাম্বুল থেকে বলছি,পৃথিবীর ধূলিকণায় (৩)
---------------
১।'সুলতান সুলেমান' টিভি সিরিয়ালের বদৌলতে ইস্তাম্বুল বাংলাদেশের আনাচে - কানাচে এক পরিচিত নগরীর নাম। ইউরোপের অন্যতম মুসলিম দেশ তুরস্ক। আর তুরস্কের সবচেয়ে জনবহুল নগরী ইস্তাম্বুল। মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যের সাথে অধুনা স্থাপত্যকলার বিরল মিশেল এই নগরীকে তিলোত্তমা করেছে।
২।' ব্লু মসজিদ'- এ নামাজ পড়বার সৌভাগ্য প্রায় সকল মুসলমান নিতে চেষ্টা করে। কাছেই তাস্কিম স্কোয়ার।এর কাছেই বিশালাকায় ষ্টেডিয়াম। সামার অলিম্পিক সম্পন্ন করবার সাফল্য এই নগরীরই। শিল্প - সাহিত্য- সংস্কৃতি - চলচিত্র উৎসবের মেলায় সারাবছরই ইস্তাম্বুল মুখরিত থাকে। কবি নাজিম হিকমতের স্মৃতিবাহী ক্যাফে চোখে পরলো।
৩।অটোম্যান সাম্রাজ্যের স্থাপত্য শৈলী নিয়ে গড়া ' টপকাপি' সবাইকে কাছে টানে। কাবাবসহ সুস্বাদু খাবারের দোকান মাঝরাতেও গমগম করে। গ্রান্ড বাজারে হাজার হাজার দোকান থেকে পছন্দসই জিনিষ সুলভে কেনা যায়।'বেলী ড্যান্স' অনেক দর্শককের বিশেষ আকর্ষণ। নগরী জুড়ে গাড়ির লম্বা সারি দেখলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা যে অত্যাধুনিক মানের সেটি দিব্যি বুঝতে পারলাম।
৪।শৈশব থেকে কামাল পাশার কীর্তি গাঁথা শুনে এই দেশ দেখবার স্বপ্ন হয়ত অবচেতন মনে আঁকা ছিল। অক্টোবর, ২০১৬,তে সেই স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ইস্তাম্বুলের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি চষে ফেলি।নগরীর কেন্দ্রস্থলে ক্যামেরা বন্দী হই। রাজনৈতিক পট পরিবর্তণ অনেক কিছুই বদলেছে। সারা শহরে কোথাও কামাল পাশার কোন ভাস্কর্য বা ছবি আমার চোখে পরে নি।
৪।রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে তুরস্কের ফাস্ট লেডী এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।


________________________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ ।

আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

[email protected]

আপনার মতামত দিন:


ভ্রমণ এর জনপ্রিয়